<p>এবারের পুলিশ সপ্তাহ উপলক্ষে আয়োজিত কল্যাণসভায় পুলিশ সদস্যরা পুরনো অনেকগুলো দাবি উত্থাপন করার পর সেগুলো অবিলম্বে সুরাহার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেই সঙ্গে তিনি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাছে এ বিষয়ে জানতে চেয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি বলে দেওয়ার পরও কাজ হলো না কেন? আমার কার্যালয় থেকেও তো কাগজ পাঠানো হয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। এর জবাব আমাকে দিতে হবে।’</p> <p>গতকাল রবিবার পুলিশ সপ্তাহ-২০২০-এর প্যারেড শেষে রাজারবাগ অডিটরিয়ামে অনুষ্ঠিত হয় কল্যাণসভা। সেখানে উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, স্বরাষ্ট্রসচিব মোস্তফা কামাল উদ্দীন, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারীসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।</p> <p>এসব বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশ সদর দপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (এআইজি-মিডিয়া অ্যান্ড পিআর) সোহেল রানা কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘পুলিশ সপ্তাহ উপলক্ষে আয়োজিত কল্যাণসভায় প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিগত বছরে নানা ক্ষেত্রে পুলিশের সাফল্য তুলে ধরা হয়। বিশেষ করে পেশাগত সেবার মান বাড়ানোর লক্ষ্যে পুলিশের জন্য কিছু যৌক্তিক দাবি তুলে ধরা হয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে।’</p> <p>সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, কল্যাণসভায় কনস্টেবল থেকে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পদমর্যাদার ছয়জন পুলিশ সদস্য বিভিন্ন দাবি তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রীর কাছে। তাঁদের মধ্যে একজন কনস্টেবল, একজন নায়েক, দুজন উপপরিদর্শক, একজন পরিদর্শক ও একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার। তবে দাবিগুলোর বেশির ভাগই উত্থাপিত হয়েছিল গত দুই পুলিশ সপ্তাহে। এর আগে এসব দাবির অনেকগুলোর সমাধান করার আশ্বাস ও নির্দেশ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। গতকালও পুরনো ছয়টি দাবি উত্থাপন করেন পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ের এ সদস্যরা।</p> <p>ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাহফুজা লিজা বলেন, অন্যান্য সরকারি প্রতিষ্ঠান বা বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ছুটিতে গিয়ে মারা গেলে এককালীন আট লাখ টাকা পান। অথচ পুলিশের</p> <p>একজন সদস্য জঙ্গিবিরোধী অভিযানে নিহত হলে পান পাঁচ লাখ টাকা। অন্যান্য সরকারি দপ্তরের একজন সদস্য সড়ক দুর্ঘটনা বা অন্য কোনোভাবে আহত হলে যেখানে চার লাখ টাকা পান, সেখানে পুলিশের একজন সদস্য সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালাতে গিয়ে গুরুতর আহত হলে পান মাত্র এক লাখ টাকা। এ বিষয়ে সমতা আনার জন্য গত কয়েকটি পুলিশ সপ্তাহেই দাবি উত্থাপন করা হয়েছে।</p> <p>পুলিশ কর্মকর্তা লিজার বক্তব্য শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই পুরনো এই বিষয়টি সুরাহা না হওয়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী।</p> <p>লাকী খাতুন নামের একজন কনস্টেবল বলেন, নিম্নপদস্থ কর্মচারীদের ক্ষেত্রে টেলিফোন, বিউগল, নার্সিং, ড্রাইভিং, ক্লিনার ইত্যাদি ভাতা ট্রেডভেদে ১৫-৩০ টাকা পর্যন্ত। এটা বর্তমান বেতন কাঠামোর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ১৫০-৩০০ টাকা করার দাবি জানান তিনি। এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বর্তমানে তো এক কাপ চাও ১৫ টাকায় পাওয়া যায় না। এটা সত্যিই হাস্যকর ব্যাপার।’ ২০১৫ সালের বেতনকাঠামো অনুযায়ী এই ভাতাগুলো নির্ধারণ করতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন তিনি।</p> <p>নায়েক সাইফুল ইসলামের দাবি ছিল, অন্য সব সরকারি বিভাগের প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানে সব শ্রেণির কর্মকর্তা-কর্মচারীর জন্য ৩০ শতাংশ প্রশিক্ষণ ভাতা চালু রয়েছে। পুলিশের প্রশিক্ষণকেন্দ্রগুলোর মধ্যে কেবল সারদা পুলিশ একাডেমি, মিরপুর পুলিশ স্টাফ কলেজে সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) থেকে তদূর্ধ্ব কর্মকর্তাদের জন্য ৩০ শতাংশ ভাতা চালু হয়েছে। এ ক্ষেত্রে পুলিশেও অন্যান্য সরকারি দপ্তরের মতো সমতায়নের দাবি জানান তিনি। এই দাবির প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দক্ষতা বাড়াতে প্রশিক্ষণের বিকল্প নেই। কেউ প্রশিক্ষণে এলে তার ভাতা না থাকলে প্রশিক্ষক এবং প্রশিক্ষণার্থী সকলেরই মন খারাপ থাকে।’</p> <p>উপপরিদর্শক (এসআই) স্মৃতি রানী দত্তের দাবি ছিল অন্যান্য সরকারি সংস্থার মতো পাচারকৃত বা চোরাই বা অবৈধ মালপত্র উদ্ধারের ক্ষেত্রে প্রণোদনা দেওয়া। এ সময় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) একজন পরিদর্শক বলেন, অন্যান্য সংস্থার সদস্যরা তাঁদের উদ্ধারকৃত মালপত্রের মূল্যের ওপর একটি প্রণোদনা পেলেও পুলিশ এ সুবিধা পায় না। এ ক্ষেত্রে উদ্ধারকৃত মালপত্রের ন্যূনতম ২.৫ শতাংশ প্রণোদনা হিসেবে পুলিশকে দেওয়ার দাবি তোলেন তিনি। তবে এ বিষয়ে তাত্ক্ষণিকভাবে প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দেননি।</p> <p>এসআই আনোয়ার হোসেন বলেন, অন্যান্য বিভাগের সরকারি কমকর্তা-কর্মচারীরা নানা ধরনের ছুটি মিলিয়ে বছরে প্রায় ১২০ দিন ছুটি ভোগ করেন। কাজের ধরন ও চাপের কারণে পুলিশ সদস্যরা কখনোই এই ছুটি ভোগ করতে পারেন না। এ কারণে পুলিশ সদস্যদের কমপক্ষে ৬০ দিন বা দুই মাসের মূল বেতনের সমপরিমাণ আর্থিক প্রণোদনা দেওয়ার দাবি উত্থাপন করেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী এক মাসের মূল বেতনের সমপরিমাণ আর্থিক সুবিধার ব্যাপারে সম্মতি জানান।</p> <p>পরিদর্শক নাজমুল আলম বলেন, চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার পর অন্যরা যখন ভিন্ন কোনো কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারেন, নানা ঝুঁকিপূর্ণ ও অস্বাস্থ্যকর অবস্থায় কর্তব্য পালন করতে হয় বলে অসুস্থতার কারণে পুলিশ সদস্যরা সেটা পারেন না। তখন তাঁদের জীবন ও জীবিকা বেশ কষ্টসাধ্য হয়ে ওঠে। এ জন্য পরিবারের দুই সদস্যের জন্য আজীবন রেশন সুবিধার দাবি তোলেন তিনি। এই দাবিটি অত্যন্ত যৌক্তিক উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী তা অবিলম্বে বাস্তবায়ন করার নির্দেশ দেন।</p> <p>পুলিশের আবাসন সমস্যা সমাধানের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী রাজারবাগ পুলিশ লাইনসের ঠিক পূর্ব পাশে গণপূর্তের আবাসিক ভবনগুলোতে পুলিশ সদস্যদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আবাসন বরাদ্দের নির্দেশ দেন।</p>