<p>রাজধানীর মিরপুরে জাতির পিতা ফাউন্ডেশন নামের এক সংগঠনের সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দখল করা হয়েছে কয়েক কোটি টাকার সরকারি সম্পত্তি। একাধিক ঘর তুলে ভাড়া দেওয়ার পাশাপাশি বানানো হয়েছে ক্লাবঘর। সেখানে দিন-রাত চলছে জমজমাট জুয়ার আড্ডা। মদ-মাদকের কারবারও চলছে বাধাহীনভাবে।</p> <p>স্থানীয়দের সূত্রে জানা যায়, মিরপুরের রূপনগর আবাসিক এলাকা নির্মাণের সময় সাড়ে তিন কাঠা জায়গা রাখা হয়েছিল আবাসিক এলাকার বাসিন্দাদের ময়লা-আবর্জনা রাখার জন্য। এলাকার ৩০ নম্বর সড়কের শেষ মাথায় রূপনগর খাল পারে সরকারি এই জমিটুকুর অবস্থান। আবাসিক এলাকা নির্মাণের পর ওই জায়গাটুকু ময়লা-আবর্জনা রাখার কাজেই ব্যবহার হচ্ছিল। ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগ ফের সরকার গঠন করার পর হঠাৎ করেই কিছু লোক ওই জায়গা দখল করে নেয়। দখলদাররা অনেকটা তড়িঘড়ি করে ‘জাতির পিতা ফাউন্ডেশন’-এর একটি সাইনবোর্ড টাঙিয়ে চার-পাঁচটি টিনের ঘর তুলে ভাড়া দেয়। একই সঙ্গে এক পাশে ক্লাব ঘর বানিয়ে শুরু হয় এলাকার এক শ্রেণির তরুণ-যুবকদের আড্ডা।</p> <p>জাতির পিতা ফাউন্ডেশন ঢাকা মহানগর উত্তরের নির্বাহী কমিটির নেতাদের ছবিসহ একটি ডিজিটাল ব্যানার টাঙানো আছে দখল করা জমিতে নির্মাণ করা কার্যালয়ে। ওই ব্যানারে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছাড়াও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সজীব ওয়াজেদ জয়, শেখ সেলিমসহ স্থানীয় কয়েক নেতার ছবি রয়েছে। একই ঘরে টাঙানো আছে জাতির পিতা ফাউন্ডেশন রূপনগর থানা কমিটির সাইনবোর্ডও।</p> <p>স্থানীয় বাসিন্দা আবদুল খালেক কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা চোখের সামনেই জায়গাটি দখল হতে দেখলাম। কিন্তু বাধা দেওয়ার সাহস পাইনি। কারণ সাইনবোর্ডে জাতির পিতার নাম ব্যবহার করা হয়েছে। একই কারণে আরো অনেকেই বাধা দেয়নি বা সাহস করেনি।’</p> <p>নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকার একাধিক বাসিন্দা বলেন, ‘জাতির পিতার নাম ব্যবহার করে যে ক্লাবঘর করা হয়েছে সেখানে সারাক্ষণ নানা পদের লোকজনের আনাগোনা হয়। ক্যারম খেলার আড়ালে চলে জুয়ার আসর আর মাদকের কারবার।</p> <p>জাতির পিতা ফাউন্ডেশন ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি সেলিম রহমান। মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে জমি দখলের বিষয়ে জানতে চাইলে কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, ‘আমরা কোনো জায়গা দখল করিনি। রূপনগর আবাসিক এলাকার ওই জায়গা কার তাও জানি না। ব্যক্তিমালিকানার জায়গা হলে আমরা নিশ্চয়ই ওই জায়গা ছেড়ে দেব।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘না, এখানে জাতির পিতা ফাউন্ডেশন মহানগর উত্তরের কোনো সাইনবোর্ড টাঙানো হয়নি। আছে কমিটির রূপনগর শাখার সাইনবোর্ড।’</p> <p>জাতির পিতার নাম ব্যবহার করে নিরাপদ জমি দখলের বাণিজ্য করছেন কি না, জানতে চাইলে সেলিম বলেন, ‘এটি সমাজসেবামূলক সংগঠন, আমরা দখলবাজি করব কেন?’ আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, জাতির পিতা ফাউন্ডেশনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়টি রাজধানীর</p> <p>যাত্রাবাড়ীতে। তবে খোঁজ নিয়ে যাত্রাবাড়ী এলাকায় এমন কোনো সংগঠনের কার্যালয় খুঁজে পাওয়া যায়নি। ভুঁইফোড় এই সংগঠনের নামে জমি দখলের অভিযোগ নতুন নয়। সংগঠনের মহানগর উত্তর শাখা কমিটিতে হাজেরা নামে এক নারীর নাম রয়েছে। তিনি ২০১৫ সালে মিরপুরের বাউনিয়া মৌজায় সরকারি জায়গায় পাঁচ কাঠা করে তিনটি প্লট দখল করে জাতির পিতা ফাউন্ডেশনের সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দেন। বেশ কয়েক বছর তিনি জমি দখলে রাখার পর ২০১৮ সালে খলিলুর রহমান নামের একজন ওই জমি দখলে নিয়ে ওই সাইনবোর্ড নামিয়ে দেন।</p> <p>এ বিষয়ে জানতে চাইলে হাজেরা বেগম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমি জায়গার দখলে ছিলাম। খলিলুর রহমান জোর করে জায়গাটি দখল করে নিয়েছে।’ এ বিষয়ে জানতে চাইলে ৫ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক খলিলুর রহমান বলেন, ‘ওই জায়গা একজন সরকারি কর্মকর্তার। তিনি আমাকে মাটি ভরাট করার ঠিকাদারি দিয়েছেন। আমি সেই কাজ করেছি।’</p> <p>একটি সূত্র জানায়, বাউনিয়া মৌজার ওই প্লট দখলে প্রভাব বিস্তারের জন্য অর্থের বিনিময়ে হাজেরা বেগমকে জাতির পিতা ফাউন্ডেশন ঢাকা মহানগর উত্তরের কমিটিতে স্থান দেওয়া হয়। তবে সংগঠনটির ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি সেলিম রহমান বলেন, ‘হাজেরা বেগমের কাছ থেকে কোনো টাকা নেওয়া হয়নি। আর হাজেরার জমি দখলের বিষয়টি জানি। বাউনিয়ার ওই সরকারি সম্পত্তি হাজেরার দখলে ছিল। এখন তা খলিলুর রহমানের দখলে রয়েছে।’</p> <p> </p> <p> </p>