<p>সঙ্গীরা সফরের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। হজের সফরে এই অংশটি আরো বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। আমি যখন হজের ইচ্ছা প্রকাশ করেছি, তখন আমার স্ত্রীও হজের আগ্রহ প্রকাশ করেন। তাঁর আগ্রহ শুধু মুখেই সীমাবদ্ধ ছিল না, বরং নিজের অলংকার বিক্রি করে অর্থের ব্যবস্থাও করেছিলেন। শাশুড়ি মাও (খান বাহাদুর শেখ মাসউদুজ্জামানের আম্মা) পূর্ব থেকে প্রস্তুত ছিলেন। তিনি আমার আরামের জন্য আমার ঘরের একজন পুরুষ কর্মচারীকে সঙ্গী করে নেন। রামপুরের এক বোন সফরসঙ্গী হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। আমি তাঁর সহোদর ভাই, যিনি হায়দারাবাদে ‘মুনসেফ’ পদে কর্মরত তাঁকে সঙ্গে যাওয়ার অনুরোধ করলে তিনি সানন্দে রাজি হন। এভাবে আমার মূল কাফেলায় ছয়জন যুক্ত হয়। আমাদের খাওয়াদাওয়া একসঙ্গে ছিল। লখনউ থেকে আরেকজন সম্মানিতা (মরহুম নিহাল উদ্দিন আহমদের বিধবা স্ত্রী) তাঁর ভাই শায়খ হায়দার আলী কুদওয়ায়িকে সঙ্গে নিয়ে যুক্ত হন। এ ছাড়া জামিয়া উসমানিয়ার শিক্ষক মৌলভি আবদুল বারি নিজের মা-বাবা ও চার সঙ্গী নিয়ে যোগ দেন। এই কাফেলায় জামিয়া উসমানিয়ার শায়খুল হাদিস মাওলানা সাইয়েদ মানাজির আহসান গিলানিও শরিক ছিলেন। সচেতন ব্যক্তির কাছে যাঁর পরিচয় তুলে ধরার কোনো প্রয়োজন নেই। এভাবে সব মিলে আমাদের সহযাত্রীর সংখ্যা দাঁড়ায় ১৬ জন।</p> <p>হজের সফর অত্যন্ত স্পর্শকাতর। অনেক গভীর বন্ধুত্ব, এমনকি আজীবনের বন্ধুত্ব হজের সফরে ভেঙে যেতে দেখেছি। এক ভাই অপর ভাই থেকে, বাবার কাছ থেকে ছেলে, পীরের কাছ থেকে মুরিদ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় বলে জনশ্রুতি আছে। এই ভয়ের কারণে আমি প্রথম থেকেই খুব সতর্ক ছিলাম, যেন কাফেলা বড় হয়ে না যায়। আর যারা সঙ্গী হবে যথাসম্ভব প্রত্যেকের ব্যবস্থাপনা পৃথক হবে। ভবিষ্যতে যাঁরা হজ করার ইচ্ছা রাখেন, তাঁদের প্রতি আমার বিনীত নিবেদন হলো, কোনো বন্ধু বা আপনজনের অসাধারণ ধৈর্য, আত্মবিসর্জনের মানসিকতা ও আনুগত্যের ব্যাপারে পুরোপুরি আশ্বস্ত হওয়ার পরই তাঁকে কাফেলায় অন্তর্ভুক্ত করবেন। নতুবা কখনোই তাঁদের সঙ্গে নেবেন না। আর খাবার ও আবাসন ব্যবস্থা পৃথক হওয়াও আবশ্যক।</p> <p>সফরে হিজাজ থেকে আতাউর রহমান খসরুর ভাষান্তর</p> <p> </p>