<p>রাসুল (সা.)-এর ইন্তেকালের পর আবু বকর (রা.)-এর মাধ্যমে শুরু হয় খিলাফতের রাশেদা। রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, এই খিলাফতব্যবস্থা চলবে ৩০ বছর। আর তা পূর্ণ হয় ঠিক ওই সময়, যখন হাসান (রা.) খিলাফতের দায়িত্ব মুআবিয়া (রা.)-এর হাতে ছেড়ে দেন। মুআবিয়া (রা.)-এর মাধ্যমে সূচনা হয় খিলাফতে বনু উমাইয়া (উমাইয়া শাসন ব্যবস্থা)।</p> <p>খিলাফতে রাশেদার প্রায় সব খলিফাই ছিলেন হাশেমি বংশের। শুধু ওসমান (রা.) ছিলেন উমাইয়া বংশের। (হাশেমি ও উমাইয়া বংশ কুরাইশ বংশের দুটি শাখা) খিলাফতে রাশেদার সমাপ্তির পর মুআবিয়া (রা.)-এর মাধ্যমে শুরু হয় খিলাফতে বনু উমাইয়া (উমাইয়া শাসন ব্যবস্থা)। মুআবিয়া (রা.) ইন্তেকালের আগে স্থলাভিষিক্ত করে যান তাঁর পুত্র ইয়াজিদকে। ইয়াজিদ সমগ্র আরবের লোকজনকে তাঁর আনুগত্যের শপথ নিতে বাধ্য করেন। অনেকটা সফলও হন। কিন্তু আবদুল্লাহ ইবনে জুবাইর (রা.)সহ কয়েকজন সাহাবি ইয়াজিদের আনুগত্য মেনে নেননি।</p> <p>ইয়াজিদের মৃত্যুর পর হিজাজের লোকজন আবদুল্লাহ ইবনে জুবাইর (রা.)-কে স্বতন্ত্র খলিফা নির্বাচন করে; তাঁর আনুগত্যের শপথ নেয়। ইবনে জুবাইর (রা.) ছিলেন কুরাইশ গোত্রের অপর এক শাখা বনু আসাদ গোত্রের। এক পর্যায়ে সিরিয়া ও মিসর ছাড়া সমগ্র ইসলামী সাম্রাজ্য তাঁর অধীনে চলে আসে।</p> <p>ইয়াজিদ মৃত্যুর আগে স্থলাভিষিক্ত করে যান তাঁর পুত্র মুআবিয়াকে। এই (দ্বিতীয়) মুআবিয়া (খিলাফতে বনু উমাইয়ার তৃতীয় খলিফা) মাত্র ৪০ দিন ক্ষমতায় থাকার পর মৃত্যুবরণ করেন। এই স্বল্প সময়ের মধ্যে তিনি রাষ্ট্রীয় দায়দায়িত্বে উল্লেখযোগ্য কোনো অবদান রাখার সুযোগ পাননি। উপরন্তু মৃত্যুর আগে তিনি কাউকে নিজের স্থলাভিষিক্তও করে যাননি। ফলে তাঁর মৃত্যুর পর দুটি রাষ্ট্রও (সিরিয়া ও মিসর) উমাইয়া শাসকদের হাতছাড়া হয়ে তা আবদুল্লাহ ইবনে জুবাইর (রা.)-এর অধীনে চলে আসে। তখন উমাইয়া শাসন ব্যবস্থা অনেকটা নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে।</p> <p>কিছুদিন যেতে না যেতেই (৬৪ হিজরির শেষের দিকে জিলকদ মাসে) মারওয়ান ইবনে হাকাম আবদুল্লাহ ইবনে জুবাইর (রা.)-এর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে বসেন। কঠিন পদক্ষেপ গ্রহণ করেন তাঁর বিরুদ্ধে। প্রথমেই তিনি সিরিয়া ও মিসরের ওপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেন।</p> <p>এই মারওয়ানের মাধ্যমে উমাইয়া শাসনের পুনঃপ্রতিষ্ঠাপর্ব শুরু হয়। কিন্তু তিনি বেশিদিন ক্ষমতায় থাকতে পারেননি। মাত্র ৯ মাস ১৮ দিন ক্ষমতায় থাকেন। তা-ও আবদুল্লাহ ইবনে জুবাইর (রা.)-এর প্রতিদ্বন্দ্বিতার সঙ্গে। ফলে ব্যাপক অবদান রাখতে সক্ষম হননি। ৬৫ হিজরির ৩ রমজানে ৬৩ বছর বয়সে মারওয়ান মৃত্যুবরণ করেন।</p> <p>মারওয়ানের মৃত্যুর পর স্থলাভিষিক্ত হন তাঁর পুত্র আব্দুল মালিক ইবনে মারওয়ান। তিনি সুদীর্ঘ ২১ বছর (৬৫-৮৬ হি.) ক্ষমতায় থাকেন। আট বছর আবদুল্লাহ ইবনে জুবাইর (রা.)-এর প্রতিদ্বন্দ্বিতার সঙ্গে এবং বাকি ১৩ বছর স্বয়ংসম্পূর্ণভাবে। তিনি ছিলেন সুকৌশলী ও সূক্ষ্ম রাজনীতিবিদ। দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রথমে বিভিন্ন এলাকায় নিজের সমমনা লোকদের বিভিন্ন পদে নিয়োগ করেন। এরপর ইসলামী সাম্রাজ্যের যেসব এলাকা এত দিন উমাইয়া শাসকদের হাতছাড়া ছিল, ক্রমান্বয়ে সেগুলোর ওপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেন। হাজ্জাজ ইবনে ইউসুফের মাধ্যমে আবদুল্লাহ ইবনে জুবাইর (রা.)-কে ৭৩ হিজরির ১৭ জুমাদাল উলা মাসে নির্মমভাবে শহীদ করে হিজাজের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেন। ৮৬ হিজরি সনে ৬০ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন আব্দুল মালিক ইবনে মারওয়ান।</p> <p>ওয়ালিদ ইবনে আবদুল মালিক : শাসনকাল ৯ বছর সাত মাস। ৮৬ হিজরির মধ্য শাওয়াল থেকে ৯৬ হিজরির মধ্য জমাদিউস সানি পর্যন্ত।</p> <p>সুলাইমান ইবনে আবদুল মালিক : শাসনকাল দুই বছর আট মাস পাঁচ দিন। ৯৬ হিজরির মধ্য জমাদিউস সানি থেকে ৯৯ হিজরির ২০ সফর পর্যন্ত।</p> <p>ওমর ইবনে আবদুল আজিজ (রহ.) : শাসনকাল দুই বছর পাঁচ মাস চার দিন। ৯৯ হিজরির সফর থেকে ১০১ হিজরির ২৫ রজব পর্যন্ত।</p> <p>ইয়াজিদ ইবনে আবদুল মালিক : শাসনকাল চার বছর এক মাস এক দিন। ১০১ হিজরির ২৫ রজব থেকে ১০৫ হিজরির ২৫ শাবান পর্যন্ত।</p> <p>হিশাম ইবনে আবদুল মালিক : শাসনকাল ১৯ বছর সাত মাস ১৫ দিন। ১০৫ হিজরির রমজান মাস থেকে ১২৫ হিজরির ১০ রবিউস সানি পর্যন্ত।</p> <p>ওয়ালিদ ইবনে ইয়াজিদ ইবনে আবদুল মালিক : শাসনকাল এক বছর দুই মাস ২০ দিন। ১২৫ হিজরির জমাদিউল উলা থেকে ১২৬ হিজরির ২৮ জমাদিউস সানি পর্যন্ত। এই ওয়ালিদ ছিলেন পাপাচারী, মদ্যপায়ী ও দ্বিন-শরিয়তে চরম উদাসীন।</p> <p>ওয়ালিদ ইবনে আবদুল মালিক : শাসনকাল মাত্র পাঁচ মাস। ১২৬ হিজরির রজব মাস থেকে জিলকদ পর্যন্ত।</p> <p>ইবরাহিম ইবনে ওয়ালিদ ইবনে আব্দুল মালিক (ওরফে ইবরাহিম আন-নাকিস) : শাসনকাল মাত্র ৭০ দিন। ১২৬ হিজরির জিলহজ থেকে ১২৭ হিজরির সফর মাসের কিছুদিন পর্যন্ত।</p> <p>মারওয়ান ইবনে মুহাম্মদ ইবনে মারওয়ান (ওরফে মারওয়ান আল-হিমার) : শাসনকাল পাঁচ বছর আট মাস দুই দিন। ১২৭ হিজরির রবিউল আউয়াল মাস থেকে ১৩২ হিজরির ২৭ জিলহজ পর্যন্ত। এই মারওয়ান খিলাফতে বনু উমাইয়ার সর্বশেষ খলিফা। তাঁর মাধ্যমেই বনু উমাইয়া শাসন ব্যবস্থার অবসান ঘটে। এরপর শুরু হয় খিলাফতে বনু আব্বাসিয়া (আব্বাসীয় বংশের শাসনব্যবস্থা)। (আল-ইনবা ফি তারিকিল খুলাফা, ১/৫০-৫২)</p>