<p>ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে বান্দা আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করে। তাঁর দয়া, অনুগ্রহ ও ক্ষমা লাভ করে। আল্লাহ বান্দার ওপর যেসব ইবাদত নির্ধারণ করেছেন সেগুলোর মধ্যে ফরজের মর্যাদা সবার ওপরে। ফরজ ইবাদতের মাধ্যমেই বান্দা আল্লাহর সর্বাধিক নৈকট্য লাভ করে থাকে। ফরজ ইবাদতের মাধ্যমে বান্দা তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করে, কেননা তা দ্বিনের মূল ভিত্তি এবং নফল ইবাদতের মাধ্যমে তার মর্যাদা বৃদ্ধি পায়।</p> <p>ইসলামের মূলভিত্তি ফরজ ইবাদত : আল্লামা ইবনু আবিল ওয়ারদ (রহ.) বলেন, ‘ইসলামের মূলভিত্তি তার ফরজ বিধানগুলো। আর ফরজ বিধান দুই প্রকার : এক. আল্লাহ ও তাঁর রাসুল যা করার নির্দেশ দিয়েছেন, দুই. আল্লাহ ও তাঁর রাসুল যা করতে নিষেধ করেছেন।’ (হিলয়াতুল আউলিয়া, পৃষ্ঠা. ২৪২)</p> <p>ফরজ ইবাদতে আল্লাহর সর্বাধিক নৈকট্য : শরিয়ত নির্ধারিত ইবাদতগুলোর মধ্যে ফরজ ইবাদতের মর্যাদা সবার ঊর্ধ্বে এবং আল্লাহর কাছে এগুলো সবচেয়ে প্রিয়। ফরজ ইবাদতের মাধ্যমে বান্দা আল্লাহর সবচেয়ে বেশি নৈকট্য লাভ করতে পারে। হাদিসে কুদসিতে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ বলেন, যে ব্যক্তি আমার ওলির সঙ্গে শত্রুতা পোষণ করবে, আমি তার সঙ্গে যুদ্ধ ঘোষণা করব। বান্দা যা কিছুর মাধ্যমে আমার নৈকট্য লাভ করে তার মধ্যে আমার কাছে সর্বাধিক প্রিয় আমি তার ওপর যা ফরজ করেছি।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬৫০২)</p> <p>ফরজ ইবাদত আল্লাহভীতির প্রমাণ : ফরজ ইবাদতে যত্নবান হওয়া আল্লাহভীতির প্রমাণ। আল্লাহভীরু ব্যক্তিরাই ফরজ ইবাদতের প্রতি সবচেয়ে বেশি যত্নবান। ওমর ইবনে আবদুল আজিজ (রহ.) বলতেন, ‘রাতে তাহাজ্জুদ আর দিনে রোজা রাখা প্রকৃত আল্লাহভীতি নয়; বরং আল্লাহভীতি হলো আল্লাহ যা ফরজ করেছেন তা আদায় করা এবং তা নিষিদ্ধ করেছেন তা পরিহার করা। এগুলো আদায় করার পর যদি কোনো নেক আমল করা হয় তবে কল্যাণের ওপর কল্যাণ বলে বিবেচিত হবে।’ (জামিউল উলুম ওয়াল হিকাম : ২/২৬৮)</p> <p>সাফল্যের প্রধান পথ ফরজ ইবাদত : তালহা ইবনে উবায়দুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, এলোমেলো চুলসহ একজন গ্রাম্য আরব রাসুল (সা.)-এর কাছে এলো। অতঃপর বলল, হে আল্লাহর রাসুল! আমাকে বলুন, আল্লাহ আমার ওপর কোন নামাজ ফরজ করেছেন? তিনি বললেন, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ; তবে তুমি যদি কিছু নফল আদায় করো তা স্বতন্ত্র কথা। এরপর সে বলল, বলুন! আল্লাহ আমার ওপর কোন রোজা ফরজ করেছেন? রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন,  রমজান মাসের রোজা; তবে তুমি যদি কিছু নফল রোজা আদায় করো তা ভিন্ন কথা। সে বলল, বলুন! আল্লাহ আমার ওপর কী পরিমাণ জাকাত ফরজ করেছেন? বর্ণনাকারী বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁকে ইসলামের বিধান জানিয়ে দিলেন। এরপর লোকটি বলল, ওই সত্তার শপথ, যিনি আপনাকে সত্য দিয়ে সম্মানিত করেছেন, আল্লাহ আমার ওপর যা ফরজ করেছেন, আমি এর মধ্যে কিছু বাড়াব না এবং কমাবও না। রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, সে সত্য বলে থাকলে সফলতা লাভ করল কিংবা বলেছেন, সে সত্য বলে থাকলে জান্নাত লাভ করল।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১৮৯১)</p> <p>ফরজ নফলের পথ খোলে : জুন-নুন (রহ.)-কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, ‘আমরা কেন নফল আদায়ের (মানসিক) শক্তি পাই না? তিনি বলেন, কারণ তোমরা ফরজগুলো ঠিকমতো আদায় করো না।’ (আলামুত-তাসাউফ, পৃষ্ঠা. ৬৭)</p> <p>ইবনু আবিল ওয়ারদ (রহ.) বলেন, ‘দুটি কাজে বান্দার বিপদ : এক. নফল নিয়ে ব্যস্ত হওয়া এবং ফরজ ইবাদত নষ্ট করা, দুই. অন্তরের সংযোগ ছাড়া অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ইবাদত। তারা মূল নষ্ট করে আল্লাহ পর্যন্ত পৌঁছার পথ বন্ধ করে দেয়।’ (তাহজিবু হিলয়াতুল আউলিয়া, পৃষ্ঠা. ৪১৩)</p> <p>আল্লাহ সবাইকে ফরজ ইবাদতের প্রতি যত্নশীল হওয়ার তাওফিক দিন। আমিন।</p> <p>লেখক : সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক</p> <p>কর্মকর্তা (সিসি), বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট, ঢাকা</p> <p> </p>