<p>কার্গো বিমান সংকটের কারণে কক্সবাজারের চিংড়ি হ্যাচারিতে উৎপাদিত পোনা বিক্রি হচ্ছে পানির দরে। একসময় প্রতিটি পোনার দাম যেখানে ছিল দুই টাকা, সেখানে বর্তমানে হ্যাচারিগুলোতে বিক্রি হচ্ছে মাত্র ১৫ পয়সায়। অথচ প্রতিটি পোনার উৎপাদন খরচ পড়ছে ২০-২২ পয়সা। কক্সবাজারে দৈনিক আট কোটি পোনা উৎপাদন হলেও কার্গো বিমান সংকটের কারণে মাত্র তিন কোটি পোনা পরিবহন করা হয়। বাকি পোনা পানির দরে বিক্রিতে বাধ্য হন হ্যাচারি মালিকরা। পোনার উৎপাদন খরচও তুলতে না পেরে কক্সবাজারের চিংড়ি পোনার হ্যাচারিশিল্প এখন মুখ থুবড়ে পড়ছে।</p> <p>সংশ্লিষ্টরা জানান, কক্সবাজার থেকে দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোতে চিংড়ি পোনা পৌঁছানো এখন বেশ ব্যয়সাধ্য এবং ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। মোট তিনটি কার্গো বিমানে দিনে তিন কোটি পোনা কক্সবাজার থেকে যশোর পরিবহন করা যায়। বাকিগুলো স্থানীয় পর্যায়ে পনির দরে বিক্রি করতে হয়, তা-ও না পারলে সমুদ্রের পানিতে ছেড়ে দেওয়া হয়। কিছু পোনা সড়কপথে পরিবহন করা হলেও দীর্ঘ পথের যাত্রায় দুর্বল হয়ে পড়া পোনার বেশির ভাগই ঘেরে মারা যায়। কক্সবাজারের কলাতলী থেকে টেকনাফ পর্যন্ত মেরিন ড্রাইভসংলগ্ন এলাকায় ৬০টি হ্যাচারি গড়ে ওঠে। বর্তমানে নিয়মিত পোনা উৎপাদন হচ্ছে মাত্র ১৮টিতে। শ্রিম্প হ্যাচারি অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ নজিবুল ইসলাম বলেন, ‘খুলনার তিন জেলা সাতক্ষীরা, বাগেরহাট ও খুলনা উপকূলে পোনার চাহিদা আট কোটি। কক্সবাজারের উৎপাদিত পোনার অন্যতম প্রধান বাজারও হচ্ছে এসব জেলায়। সেখানে চাহিদার বেশি পোনা উৎপাদন হয়।’</p> <p>কক্সবাজারের কোয়ালিটি ও সোনালি শ্রিম্প হ্যাচারির মালিক মোহাম্মদ আলমগীর বলেন, ‘আমাদের হ্যাচারিতে পোনা উৎপাদনের যে সক্ষমতা আছে, সে অনুযায়ী দেশের দক্ষিণাঞ্চলে পরিবহন সংকটের ফলে চাহিদামাফিক পাঠাতে পারছি না। এ জন্য পানির দরে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছি।’ তিনি আরো বলেন, ‘গতকাল টেকনাফ উপকূলের একজন চিংড়িঘের মালিকের কাছে প্রতিটি ১৫ পয়সা দরে আট লাখ পোনা বিক্রি করেছি। আবার অনেক সময় পোনা অবিক্রীত থাকায় হ্যাচারি থেকে সাগরের পানিতেও ছেড়ে দেওয়া হয়।’</p> <p>মডার্ন হ্যাচারির ব্যবস্থাপক মিশন দত্ত বলেন, ‘কক্সবাজার বিমানবন্দর থেকে কার্গো বিমানে করে পোনা পাঠানো হতো যশোর বিমানবন্দরে। কার্গো বিমানও ছিল পর্যাপ্ত, কিন্তু বর্তমানে চালু রয়েছে মাত্র তিনটি কার্গো বিমান।’</p> <p>কার্গো বিমানে পোনা পরিবহন ব্যবসায় জড়িত ব্যবসায়ী ভুলু চৌধুরী বলেন, ‘বর্তমানে দুটি ছোট এবং একটি বোয়িং-৭৩৭-২০০ কার্গো রয়েছে। কার্গোটিতে এক ট্রিপে দুই হাজার বক্স, অর্থাৎ দুই কোটি পোনা পরিবহনের সক্ষমতা রয়েছে। অন্য দুটিতে পরিবহন করা হয় দুই কোটি পোনা, কিন্তু সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষের নিষেধাজ্ঞার কারণে বোয়িং কার্গোটিতে পরিবহন করা হচ্ছে এক হাজার বক্সের এক কোটি পোনা।’</p> <p>এ বিষয়ে বেসরকারি বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য কক্সবাজার-২ আসনের এমপি আশেক উল্লাহ রফিক বলেন, ‘কার্গো বিমানটিতে আগের মতো করে দুই হাজার বক্স পোনা পরিবহনের বিষয়টি গত রবিবার অনুষ্ঠিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভায় আলোচনা হয়েছে। আশা করি, সমস্যার সমাধান হবে।’</p>