<p>পণ্য বৈচিত্র্য আনতে পুঁজিবাজারের সেকেন্ডারি বাজারে সরকারি ট্রেজারি বন্ডের লেনদেন চালু করতে তোড়জোড় করছে স্টেকহোল্ডাররা। বর্তমানে তালিকাভুক্ত বন্ডের লেনদেন চালু করার পাশাপাশি নতুন বিল ও বন্ডের তালিকাভুক্ত বাড়ানোর ক্ষেত্রেও উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।</p> <p>সরকারি ট্রেজারি বিল ও ট্রেজারি বন্ডের লেনদেন চালুর বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক, পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ও স্টক এক্সচেঞ্জ একত্রে কাজ করছে। ত্রিপক্ষীয় কমিটি একটি চূড়ান্ত রূপরেখা তৈরি করেছে। গত বছরের ১৩ নভেম্বর ৯ সদস্যের ত্রিপক্ষীয় কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি ব্যাংক, মার্চেন্ট ব্যাংক ও পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের অভিজ্ঞতার আলোকে গত ৩০ ডিসেম্বর পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছে জমা দিয়েছে।</p> <p>সূত্র জানায়, দুই শতাধিক ট্রেজারি বন্ড পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত। এ বন্ডে ৯৫ শতাংশের বেশি বিনিয়োগ রয়েছে ব্যাংক ও নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠানের। সেকেন্ডারি মার্কেটে লেনদেন চালু হলে ব্যাংক ও নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি বীমা কম্পানি ও অন্যদের বিনিয়োগ সুযোগ সৃষ্টি হবে। সরকারি ট্রেজারি বন্ডে ব্যাংকের ওপর চাপ কমবে।</p> <p>ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ইস্যু করা ট্রেজারি বন্ড ডিএসইতে তালিকাভুক্ত। পুঁজিবাজারে ৫, ১০, ১৫ ও ২০ বছর মেয়াদি ২২১টি ট্রেজারি বন্ড তালিকাভুক্ত হলেও সেকেন্ডারি মার্কেটে লেনদেন হয় না। বন্ডে কুপন রেট ৮.৫ শতাংশ থেকে ১৩ শতাংশ। ট্রেজারি বন্ডের ইউনিট ভ্যালু এক লাখ টাকা। ট্রেজারি বন্ড লেনদেনে বাংলাদেশ ব্যাংকে পৃথক ব্যবস্থা রয়েছে, প্রাইমারি ডিলাররা (পিডি) অংশ নিতে পারে। ট্রেজারি বন্ডের প্রাইমারি অকশনে আন্ডাররাইটে ২০ প্রাইমারি ডিলার আছে। প্রতি ইউনিট লেনদেনে ফি ৫০ টাকা।</p> <p>কমিটি সূত্রে জানা যায়, ট্রেজারি বিলের ইউনিট হস্তান্তরে ফি ৫০ টাকা, সেখানে শেয়ার লেনদেনে ফি অনেক কম। ট্রেজারি বন্ডকে গতিশীল করতে লেনদেন ফি মওকুফের প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রাইমারি ডিলারের (পিডি) মাধ্যমে স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেন হবে। স্পট মার্কেটের মতো লেনদেন সম্পূর্ণ হবে। সেটলমেন্ট করবে বাংলাদেশ ব্যাংক। কমিটি মনে করছে, ট্রেজারি বন্ডের ক্ষেত্রে বড় প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে বিনিয়োগকারীর অসচেতনতা।</p> <p>পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সেকেন্ডারি মার্কেটে স্বয়ংক্রিয় ট্রেডিং সিস্টেমের মাধ্যমে সব ধরনের বিনিয়োগকারী তথ্যভিত্তিক লেনদেন সুবিধা পাবে, যা সরকারি সিকিউরিটিজ প্রাণবন্ত সেকেন্ডারি মার্কেটের মাধ্যমে যথাযথ মূল্য নির্ধারণে সহায়তা করবে ও সরকারের ঋণের সুদের হার কমে যাবে।</p> <p>ট্রেজারি বন্ড চালুর বিষয়ে পুঁজিবাজারে প্রভাব বিষয়ে ত্রিপক্ষীয় কমিটির এক সদস্য কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সরকারি সিকিউরিটিজের ৯৫ শতাংশের বেশি কিনেছে ব্যাংক আর নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান। সাধারণ, বীমা কম্পানি ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগের সুযোগ পেলে ব্যাংকের বিনিয়োগের পরিমাণ কমবে। ট্রেজারি বন্ডে বিনিয়োগ কমলে ওই সব ব্যাংক উদ্যোক্তাদের বেশি পরিমাণ ঋণ দিতে পারবে, যা দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। সেকেন্ডারি মার্কেটে ট্রেজারি বন্ডের লেনদেন চালু হলে সরকার ব্যাংক থেকে সরাসরি ঋণ না নিয়ে ট্রেজারি বিল ও বন্ড থেকে ঋণ নিয়ে প্রয়োজন মেটাতে পারবে।’</p> <p>পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার ক্যাপিটাল ইস্যু বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ রেজাউল করিম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সরকারি সিকিউরিটিজের একটি অংশ স্টক এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে লেনদেন হয়। কিন্তু আমাদের দেশে সেটা হয় না। সরকারি সিকিউরিটিজকে সেকেন্ডারি মার্কেটে লেনদেনযোগ্য করতে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে সরকার, বাংলাদেশ ব্যাংক ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার ত্রিপক্ষীয় চেষ্টা চলছে। শিগগিরই সরকারি সিকিউরিটিজ লেনদেনযোগ্য করা সম্ভব হবে।’</p>
