<h3><span style="color:#e74c3c;">বাড়ি বাগেরহাট জেলার মোরেলগঞ্জ উপজেলার আমলাপাড়ায়। একাত্তরে ছিলেন পাকিস্তান এয়ারফোর্সের ফ্লাইং অফিসার। মে মাসে মায়ের অসুস্থতার কথা বলে ঢাকায় ফিরে চলে যান কলকাতায়। এয়ারফোর্সের জঙ্গি পাইলট হয়েও মুক্তিযুদ্ধ করেছেন সেনাবাহিনীর সঙ্গে। কমলপুর বিওপি (বর্ডার পোস্ট), সিলেটের কমলগঞ্জ, জকিগঞ্জ ও কানাইঘাট প্রভৃতি অপারেশনে অংশ নেন </span></h3> <p>একাত্তরের জুন মাসটি তখনো শেষ হয়নি। ওসমানী সাহেব অর্ডার পাস করলেন—‘ফাস্ট বেঙ্গল উইল অ্যাটাক কমলপুর বিওপি (বর্ডার পোস্ট)।’ চারটি কম্পানি ছিল—আলফা, ব্রাভো, চার্লি ও ডেলটা। অ্যাডজুট্যান্টের দায়িত্বের পাশাপাশি আমাকে হেডকোয়ার্টার কম্পানিরও কমান্ড করতে হতো। বিওপি অ্যাটাকের আগে রেকি হলো। ক্যাপ্টেন মান্নান ও ক্যাপ্টেন সালাউদ্দিন মুমতাজ ছিলেন খুব সাহসী। এক রাতে তাঁরা কমলপুর বিওপির ভেতরে ওদের ট্র্যান্স পজিশন জানতে যায়। এক পাঞ্জাবি সালাউদ্দিনকে ধরে ফেলে। পরে মান্নানের সহযোগিতায় ওই পাঞ্জাবিকে মেরে ক্যাম্পে ফিরে আসে।</p> <p>কিন্তু এতে পাকিস্তানিরা আমাদের অ্যাটাকের পরিকল্পনা জেনে যায়। ফলে ওরাও বড় ধরনের প্রস্তুতি নিতে থাকে। পরিকল্পনা ছিল ক্যাপ্টেন সালাউদ্দিনের ডেলটা কম্পানি অপারেশনে লিড করবে। তার সাপোর্টে থাকবে ক্যাপ্টেন হাফিজের (হাফিজ উদ্দিন আহম্মেদ) ব্রাভো কম্পানি। আলফা কম্পানি নিয়ে ক্যাপ্টেন মান্নান স্ট্যান্ডবাই থাকবে। ক্যাপ্টেন মাহবুবুর রহমানের চার্লি কম্পানি কাট-অফ পার্টি হিসেবে কাজ করবে। আর আমি থাকব হেডকোয়ার্টার কম্পানিতে।</p> <p>নিয়মটা হচ্ছে আর্টিলারি ছোড়া শুরু হলে শত্রু তখন হেডস-ডাউন করে ফেলে। কারণ আর্টিলারির তোড়ে তারা মাথা উঁচু করতে পারে না। আমরা বেশ পেছনে ছিলাম। ফলে বোম্বিং শেষ হয়ে গেলে ওরা বাংকার থেকে উঠে মেশিনগান নিয়ে পজিশনে চলে যায়। আমরা ওদের ফায়ারিং রেঞ্জের ভেতর চলে গেলাম। তখন  গোলাগুলিতে ৭৫ জন আহত ও ৩৫ জন স্পটেই শহীদ হয়। </p> <p>ওই অপারেশনে ক্যাপ্টেন সালাউদ্দিন তার গ্রুপ নিয়ে পাকিস্তানি সেনাদের টার্গেটে পড়ে যায়। তখন কমান্ডিং অফিসার মঈন সাহেব আমাকে বললেন, ‘লিয়াকত, ইউ টেক দিস ট্রুপস অ্যান্ড গো।’</p> <p>আমি তখন হেডকোয়ার্টার্স ট্রুপস নিয়ে দৌড়ে ওই গোলাগুলির মধ্য দিয়ে ছুটে যাই সালাউদ্দিনের কাছে।</p> <p>তার আগেই মেশিনগানের গুলিতে দেখলাম তার ওয়্যারলেসম্যানের বুকটা ঝাঁঝরা হয়ে গেছে। মেশিনগানের গুলিতে সালাউদ্দিনও উপুর হয়ে মাটিতে পড়ে যায়। তাকে ধরতে ক্রলিং করে আমি এগোতে থাকি। পাশে তাকিয়ে দেখি দূরে ক্যাপ্টেন মান্নান মাটিতে গড়াচ্ছে আর ডাকছে। কোনো রকমে তার কাছে সরে আসি। মান্নানের ঊরুতে গুলি লেগে রক্তাক্ত। তাকে কাঁধে নিয়ে পেছনে ধীরে ধীরে সরে যেতে থাকি।</p> <p>ক্যাপ্টেন সালাউদ্দিন ওখানেই মারা যায়। সে খুবই সাহসী ছিল। অপারেশনের শুরুতেই চোঙা নিয়ে চিৎকার করে মুক্তিযোদ্ধাদের বলছিল, ‘আয় সামনে আয়, কিচ্ছু হবে না। এগিয়ে যা।’ রক্তাক্ত ওই অপারেশনটির কথা এখনো মনে দাগ কেটে আছে। </p> <p>সেপ্টেম্বরের দিকে আমরা মুভ করে চলে যাই সিলেটের কমলগঞ্জে। তখন আমাদের কমান্ডার চেঞ্জ হয়ে আসেন জিয়াউদ্দিন। ওই সময় নানা ট্রেনিংয়ের মাধ্যমে আমরা আরো শক্তিশালী হতে থাকি।</p> <p>২৫ নভেম্বর ১৯৭১। আমরা কানাইঘাট থানা সদরের অদূরে গৌরীপুরে অবস্থান নিই। ২৬ নভেম্বর ভোরে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী অতর্কিতে আমাদের ওপর আক্রমণ করে। প্রথমে আমরাও সাহসের সঙ্গে তা মোকাবেলা করি। ওখানেই অধিনায়ক ক্যাপ্টেন মাহবুবুর রহমান (বীর-উত্তম) পাকিস্তানি সেনাদের গুলিতে শহীদ হন। তখন আমাকে ওই কম্পানির অধিনায়কের দায়িত্ব দেওয়া হয়। পরে কানাইঘাটেই এক অপারেশনে বাঁ পায়ের ঊরুতে গুলিবিদ্ধ হই।</p> <p>পৃথিবীর অনেক দেশ থেকে বাংলাদেশ ভালোভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। প্রজন্মকে বলব, ‘তোমাদের হাতেই যাবে দেশের নেতৃত্ব। তোমরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাটা সব সময় মনের ভেতর রেখো। এ দেশে প্রপার ডেমোক্রেসি থাকবে—এটাই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। তোমরাই পারবে দেশটা এগিয়ে নিতে।’</p> <p> </p> <p> </p>