<p>ধুতরা বা ধুতুরা Solanaceae পরিবারের Datura গণের এক প্রকারের বিষাক্ত উদ্ভিদ। এটি আমাদের দেশে কমবেশি সবার কাছেই পরিচিত। দেশের প্রায় সব জায়গায়ই অযত্ন-অবহেলায় এই গাছ জন্মাতে দেখা যায়।</p> <p>ধুতরার বৈজ্ঞানিক নাম Dutura metel.</p> <p>ধুতরাগাছ ঝাড়বিশিষ্ট। উচ্চতায় এক মিটারের মতো। এদের পাতা বড়, ত্রিকোণাকৃতির, রং সবুজ, শিরা ও মধ্যশিরা স্পষ্ট। ধুতরাগাছের সাদা ও কালো রঙের দুটি প্রজাতি আমাদের দেশে চোখে পড়ে। সাদা রঙের ধুতরার বোঁটা, পাতা ও গাছ হালকা সবুজ রঙের এবং কালো রঙের ধুতরাগাছের পাতার বোঁটা ও গাছ বেগুনি মিশ্র রঙের।</p> <p>ধুতরাগাছের ফুলের সৌন্দর্য অত্যন্ত আকর্ষণীয় ও মনোরম। বর্ষাকালে ধুতরাগাছে ফুল ফোটা শুরু হলেও হেমন্তকালজুড়ে গাছে ফুল দেখা যায়। গাছের শাখা-প্রশাখার অগ্রভাগে ফুল ধরে। দেখতে লম্বাকৃতির, সাদা জাতের ধুতরাগাছে সাদা ফুল এবং কালো জাতের ধুতরাগাছে সাদা-বেগুনি মিশ্র রঙের ঊর্ধ্বমুখী ফুল ফোটে। ফুলে মৃদু গন্ধ আছে। পড়ন্ত বিকেল থেকে সন্ধ্যায় গাছে ফুল ফোটে। দিনে রোদের আলোয় ফুল সংকুচিত হয়ে যায়। সন্ধ্যায় আবার পাপড়ি মেলে। এভাবে ফুটন্ত ফুল দুই থেকে তিন দিন তাজা থেকে ঝরে যায়।</p> <p>ধুতরার ফল গোলাকার। ফলের গা ছোট ছোট কাঁটায় ভরা থাকে। কচি ফল সবুজ এবং পরিপক্ব ফলের রং খায়েরি। ফল পাকলে চারটি প্রকোষ্ঠে বিভক্ত হয়ে যায়। ফলের ভেতর বীজ হয়। বীজের মাধ্যমে বংশবিস্তার ঘটে।</p> <p>ধুতরাগাছের পাতা, ফুল, ফল, বীজ ভেষজ গুণাগুণসম্পন্ন। আয়ুর্বেদিক, ইউনানি ও হাকিমি শাস্ত্রবিদরা যুগ যুগ ধরে বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায় ধুতরার বিভিন্ন অংশ ব্যবহার করে আসছেন। কৃষ্ণ ধুতরার শুকনা পাতা ও ফুল বাসকপাতায় জড়িয়ে সিগারেটের মতো তৈরি করে আগুন দিয়ে টানলে হাঁপানির কষ্ট কমে। এই গাছের পাতা, মূল, ফুল ও ফল সিদ্ধ করে বুকে সেঁক নিলে শ্বাসকষ্টে উপকার পাওয়া যায়। এ ছাড়া এই গাছের পাতায় যে ভেষজ উপাদান পাওয়া যায় তা হলো−হায়োস্যামাইন, বেলডোনা ও হেনবেন। ব্রংকাইটিস, অনিদ্রা ও মুখের লালাক্ষরণ দূর করে এবং শরীরের ব্যথা সারাতেও ব্যবহৃত হয় ধুতরা। সঠিক ব্যবহার ও মাত্রার ওপর যত্নবান থাকলে কোনো ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয় না।</p> <p>ইন্দ্রজিৎ মণ্ডল</p> <p>[আরো জানতে পত্রপত্রিকায় ধুতরা সম্পর্কিত লেখাগুলো পড়তে পারো।]</p>