<p>কয়লা এক প্রকার জীবাশ্ম জ্বালানী। গাছপালা দীর্ঘদিন ধরে মাটির তলায় চাপা পড়ে থাকার ফলে ধীরে ধীরে তা কালো বা গাঢ় বাদামি বর্ণের খনিজ পদার্থের রূপ ধারণ করে। একে কয়লা (ঈড়ধষ) বলে। এটি এক ধরনের জীবাশ্ম জ্বালানি। প্রধান ব্যবহার জ্বালানি হিসেবে। রাসায়নিক শিল্পেও এর ব্যবহার গুরুত্বপূর্ণ। উনিশ শতাব্দী পর্যন্ত কয়লাই ছিল শক্তির বাণিজ্যিক উৎসগুলোর মধ্যে সর্বাধিক ব্যবহৃত ও গুরুত্বপূর্ণ। পেট্র্রোলিয়াম আবিষ্কারের পর এর ব্যবহার কিছুটা লোপ পেলেও বর্তমানে এটি পৃথিবীব্যাপী শক্তির উৎস হিসেবে জোরদার ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। বিশ্বের মোট বিদ্যুতের ৩৭% আসে কয়লা থেকে। এসব কারণেই জলবায়ু পরিবর্তনের একটি প্রধান কারণ হিসেবে ধরা হয় কয়লার ব্যবহার।</p> <p>ভারতবর্ষে প্রথম কয়লা উত্তোলন শুরু হয় ১৭৭৪ সালে পশ্চিমবঙ্গের রানীগঞ্জ কয়লাক্ষেত্র থেকে। সে সময় শুধু স্থানীয় চাহিদাকে সামনে রেখে কয়লা উত্তোলন করা হতো। কিন্তু ১৮৫৪ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া রেলওয়ে চালুর পর ব্যাপকভাবে কয়লা আহরণের কাজ শুরু হয়। বাংলাদেশে এ পর্যন্ত পাঁচটি প্রধান অন্তর্ভূপৃষ্ঠীয় কয়লার খনি আবিষ্কৃত হয়েছে। সেগুলোর মধ্যে দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া কয়লাক্ষেত্র, জয়পুরহাটের জামালগঞ্জ কয়লাক্ষেত্র, রংপুর জেলার খালাশপীর কয়লাক্ষেত্র এবং দিনাজপুরের দীঘিপাড়ায় অবস্থিত কয়লাক্ষেত্র উল্লেখযোগ্য।</p> <p>১৮৫৭ থেকে ১৯৫৭ সাল পর্যন্ত  উল্লেখযোগ্যসংখ্যক ভূতত্ত্ববিদ বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের ভূভাগের নিচে বিরাট আকারের কয়লাখনির অস্তিত্ব থাকার সম্ভাবনা ব্যক্ত করেন। বাংলাদেশে গণ্ডোয়ানা কয়লার সন্ধান পাওয়ার সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও পাকিস্তান আমলে এ অঞ্চলে খনিজসম্পদ অনুসন্ধানকাজ ছিল অবহেলিত। ১৯৫৯ সালে স্টানভাক কম্পানি বাংলাদেশে তেল অনুসন্ধান প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে দেশের বিভিন্ন স্থানে কূপ খনন করার সময় এ দেশে উন্নতমানের খনিজসম্পদ প্রাপ্তির অনুমান যথার্থ বলে প্রমাণিত হয়।</p> <p>স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে গঠিত বাংলাদেশ ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদপ্তর বা জিএসবি ১৯৮৫ সালে দিনাজপুর জেলার বড়পুকুরিয়ায়, ১৯৮৯ সালে রংপুর জেলার খালাশপীরে এবং ১৯৯৫ সালে দিনাজপুরের দীঘিপাড়ায় পার্মিয়ান যুগের গণ্ডোয়ানা কয়লাক্ষেত্র আবিষ্কার করে। বড়পুকুরিয়া কয়লা অববাহিকায় ১৯৮৫ থেকে ১৯৮৭ সালের মধ্যে জিএসবি সাতটি উত্তোলন কূপ খনন করতে সক্ষম হয়। জিএসবি এই কয়লাক্ষেত্রের মজুদ, গুরুত্ব ও বিস্তার নির্ণয় করতেও সমর্থ হয়। পরবর্তী সময়ে খনির বিস্তৃতি, মজুদ, পুরুত্ব, কয়লাস্তরের অবস্থা, অধিচাপ বৈশিষ্ট্যগুলো এবং জল-ভূতাত্ত্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত হওয়ার লক্ষ্যে চীনা ও ব্রিটিশ কম্পানিগুলো আরো ২৫টি কূপ খনন করে। এ ছাড়া জিএসবি খালাশপীর কয়লাক্ষেত্রে চারটি ও দীঘিপাড়া কয়লাক্ষেত্রে একটি উত্তোলন কূপ খনন করে।</p> <p>২০২১ সালের গ্লাসগো জলবায়ু সম্মেলনে বিশ্বের ৪০টিরও বেশি দেশ ভবিষ্যতে কয়লার ব্যবহার থেকে সরে আসার অঙ্গীকার করে। এর মধ্যে রয়েছে পোল্যান্ড, ভিয়েতনাম ও চিলি।</p> <p>কিন্তু বিশ্বের সর্বোচ্চ কয়লা ব্যবহারকারী কিছু দেশ—অস্ট্রেলিয়া, ভারত, চীন ও যুক্তরাষ্ট্র এই অঙ্গীকারপত্রে সই করেনি। যেসব দেশ ঘোষণাপত্রে সই করেছে তারা অঙ্গীকার করছে, দেশের ভেতরে কিংবা বাইরে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনে তারা নতুন কোনো প্রকল্পে অর্থ বিনিয়োগ করবে না। এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশও কয়লার ব্যবহার কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ওই সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের কয়লাচালিত কয়েকটি বিদ্যুেকন্দ্র বন্ধ করারও ঘোষণা দেন।</p> <p> </p> <p> ►  ইন্দ্রজিৎ মণ্ডল</p> <p> </p> <p>[আরো বিস্তারিত জানতে বাংলাপিডিয়া, বিবিসি বাংলা ও পত্রপত্রিকায় কয়লা সম্পর্কিত লেখাগুলো পড়তে পারো।]</p>