<p>মাছি বিভিন্ন রোগজীবাণু বহনকারী পতঙ্গ। এরা Diptera বর্গের অন্তর্ভুক্ত। বেশির ভাগ প্রজাতির মাছির ওড়ার উপযোগী এক জোড়া ডানা থাকে। এক জোড়া ডানাই একে মাছি জাতীয় অন্যান্য পতঙ্গ যেমন—ফড়িং, ঘাসফড়িং, প্রজাপতি ইত্যাদি থেকে আলাদা করেছে।  গুটিকয় প্রজাতি আছে ডানাবিহীন।</p> <p>বাংলাদেশে পাওয়া মাছির প্রজাতির মধ্যে ঘরে বাস করে ছোট মাছি, দংশনকারী মাছি, নীল মাছি বা ব্লু ফ্লাই, গ্রিনবটল ফ্লাই, ফ্লেশ ফ্লাই ইত্যাদি। ঘরের বাইরের মাছির মধ্যে রয়েছে কালো মাছি, ডিয়ার ফ্লাই, ঘোড়া মাছি, হোবার মাছি, ক্রেন ফ্লাই ইত্যাদি। বালি মাছি ঘরের ভেতরে ও বাইরে উভয় জায়গাই দেখতে পাওয়া যায়।</p> <p>বালি মাছি বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে মানুষের বাসস্থানের কাছাকাছি সর্বত্র বিদ্যমান এবং অন্যান্য প্রজাতির মাছির মতো এরা স্যাঁতসেঁতে অন্ধকার ও নোংরা জায়গায় বংশবিস্তার করে। এরা গৃহপালিত পশু-পাখির সাধারণ রোগ অ্যানথ্রাক্সের জীবাণু বহন করে। ঘরের মাছি কলেরা ও টাইফয়েডের জীবাণু ছড়ায়। Simuliidae গোত্রের কালো মাছি পাহাড়ি অঞ্চলে বাস করে। এই মাছি নদীর পানিতে বংশবৃদ্ধি করে। বাংলাদেশের বিস্তীর্ণ মাঠের অগভীর জলাশয় ছোট ডাঁশের মতো দংশনকারী Ceratopogonid মাছির প্রজননস্থল, যারা সন্ধ্যায় শিকারকে আক্রমণ করে। ফলের মাছি Tephritidae গোত্রের অন্তর্ভুক্ত। এরা নানা ধরনের ফল ও শাকসবজি খায়, তাতে প্রজনন করে। ফলমাছির পোষক চালকুমড়া, করলা, কাঁকরোল, লাউ, শসা, ফুটি, তরমুজ, ঝিঙ্গা, ধুন্দুল, চিচিঙ্গা ও মিষ্টিকুমড়াসহ Cucurbitaceae গোত্রভুক্ত প্রধানত কচি ফল, যেগুলো সবজি হিসেবে পরিচিত। মাঝে মাঝে পাকা আম, কামরাঙা এবং পেয়ারা ফলেও এদের প্রজনন হয়। বিভিন্ন ধরনের সবজির মধ্যে মিষ্টিকুমড়ায় ফলমাছির আক্রমণ অত্যধিক।</p> <p>ক্ষতিকারক পতঙ্গ হিসেবেই মাছি অধিক পরিচিত। এদের ডিএনএ বিশ্লেষণ করে ২০১৭ সালে আমেরিকান গবেষকরা বলছেন, মাছি, বিশেষ করে নীল মাছি ছয় শর বেশি বিভিন্ন ধরনের রোগজীবাণু বহন করে। এর মধ্যে অনেক জীবাণু মানুষের শরীরে রোগ সংক্রমণের জন্য দায়ী, যার মধ্যে রয়েছে পেটের অসুখের জন্য দায়ী জীবাণু, রক্তে বিষক্রিয়া ঘটায় এমন জীবাণু এবং নিউমোনিয়ার জীবাণু। পরীক্ষায় দেখা গেছে, মাছি এসব জীবাণু এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় ছড়ায় তাদের পা ও ডানার মাধ্যমে। ফ্লেশ ফ্লাই দলের মাছি গৃহপালিত পশু-পাখির মধ্যে Myiasis রোগ ছড়ায়। বালি মাছি কালাজ্বরের জীবাণু বহন করে।</p> <p>এখন পর্যন্ত আবর্জনা, ফল-ফুল ও বসতবাড়ি থেকে বহু প্রজাতির মাছি শনাক্ত করা হয়েছে। তবে বাংলাদেশে মোট কত প্রজাতির মাছি আছে সে বিষয়ে সঠিক কোনো হিসাব নেই।</p> <p>►  ইন্দ্রজিৎ মণ্ডল</p>