<p><strong>সপ্তম অধ্যায় : গ্যাসীয় বিনিময়</strong></p> <p><strong>১।</strong></p> <p><strong><img alt="" src="/ckfinder/userfiles/images/print/2020/01.January/25-01-2020/1/Kalerkantho-29-01-2020-2.jpg" style="height:22px; width:313px" /></strong></p> <p>ক) এপিলেপসি কী?</p> <p>খ) নিউমোনিয়া রোগের কারণ কী?</p> <p>গ) মানবদেহে উদ্দীপকে বর্ণিত গ্যাস গ্রহণ ও ত্যাগের পদ্ধতি আলোচনা করো।</p> <p>ঘ) আমাদের দেহে উদ্দীপকের গ্যাসগুলোর বিনিময় কিভাবে ঘটে? ব্যাখ্যা করো।</p> <p><strong>উত্তর</strong></p> <p>ক) এপিলেপসি মস্তিষ্কের একটি রোগ, যাতে আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে খিঁচুনি বা কাঁপুনি দিতে থাকে।</p> <p>খ) নিউমোনিয়া একটি ফুসফুসের রোগ। অত্যধিক ঠাণ্ডা লাগলে এ রোগ হতে পারে। হাম ও ব্রংকাইটিস ঠাণ্ডা ও ব্রংকাইটিস রোগের পর ঠাণ্ডা লেগে নিউমোনিয়া হতে দেখা যায়। নিউমোকক্কাস (Pneumococcus) নামের এক ধরনের ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণে এ রোগ হয়।</p> <p>গ) উদ্দীপকে বর্ণিত গ্যাসগুলো হলো অক্সিজেন (O<sub>2</sub>) এবং কার্বন ডাই-অক্সাইড (CO<sub>2</sub>)। মানবদেহ শ্বাসক্রিয়ার মাধ্যমে অক্সিজেন (O<sub>2</sub>) গ্রহণ এবং কার্বন ডাই-অক্সাইড (CO<sub>2</sub>) ত্যাগ করে। নিচে শ্বাসক্রিয়ার মাধ্যমে অক্সিজেন (O<sub>2</sub>) গ্রহণ এবং কার্বন ডাই-অক্সাইড (CO<sub>2</sub>) ত্যাগের পদ্ধতি বর্ণনা করা হলো।</p> <p><strong>শ্বাসক্রিয়া :</strong> শ্বাস-প্রশ্বাসের অঙ্গগুলো শুধু গলবিলের দিকে খোলা থাকে, অন্য সব দিক বন্ধ থাকে। ফলে নাসাপথের  ভেতর দিয়ে ফুসফুসের বায়ুথলি পর্যন্ত বায়ু নির্বিঘ্নে চলাচল করতে পারে। স্নায়বিক উত্তেজনা দ্বারা শ্বাসকার্য পরিচালিত হয়। স্নায়বিক উত্তেজনার কারণে পিঞ্জরাস্থির মাংসপেশি ও মধ্যচ্ছদা সংকুচিত হয়। ফলে মধ্যচ্ছদা নিচের দিকে নেমে যায় ও বক্ষগহ্বর প্রসারিত হয়। বক্ষগহ্বরের আয়তন বেড়ে গেলে বায়ুর চাপ কমে যায়। ফলে ফুসফুসের  ভেতরের বায়ুর চাপ বাইরের চাপের চেয়ে কমে যায়। বক্ষগহ্বরের ভেতর ও বাইরের চাপের সমতা রক্ষার জন্য প্রশ্বাস বায়ু ফুসফুসের ভেতর সহজে প্রবেশ করতে পারে। এই পেশি সংকোচনের পরপরই আবার প্রসারিত হয়। তাই মধ্যচ্ছদা আবার প্রসারিত হয়ে ওপরের দিকে উঠে যায় এবং বক্ষগহ্বরের আয়তন স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে। এতে ফুসফুসের ভেতরের বায়ুর চাপ বেড়ে যায়। ফলে কার্বন ডাই-অক্সাইড ও জলীয় বায়ুসমৃদ্ধ বাতাস নিঃশ্বাসরূপে বাইরে নির্গত হয়। এভাবে মানবদেহে প্রতিনিয়ত শ্বাসকার্য তথা অক্সিজেন (O<sub>2</sub>) গ্রহণ এবং কার্বন ডাই-অক্সাইড (CO<sub>2</sub>) ত্যাগ চলতে থাকে।</p> <p>ঘ) উদ্দীপকের বর্ণিত গ্যাসগুলো হলো (O<sub>2</sub>) এবং (CO<sub>2</sub>)। নিচে আমাদের দেহে (O<sub>2</sub>) এবং (CO<sub>2</sub>) বিনিময় ব্যাখ্যা করা হলো—</p> <p><strong>অক্সিজেন শোষণ :</strong> শ্বসনের সময় অক্সিজেন ব্যাপন প্রক্রিয়ায় ফুসফুস থেকে রক্তে প্রবেশ করে। রক্তে প্রবেশ করার পর অক্সিজেন মুক্ত অবস্থায় থাকে না। এর একটি বড় অংশ লোহিত রক্তকণিকার হিমোগ্লোবিনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে অক্সিহিমোগ্লোবিন নামের একটি অস্থায়ী যৌগ গঠন করে। এ যৌগ গঠন রক্তরসে অক্সিজেনের পরিমাণের ওপর নির্ভর করে। দেহে রক্ত পরিবহনের সময় বেশ কিছু পরিমাণ অক্সিজেন রক্তরস থেকে কলারস বা লসিকায় প্রবেশ করে। উল্লেখ্য, লসিকায় তখন অক্সিজেনের পরিমাণ কম থাকায় এ ক্রিয়া ঘটে। ফলে রক্তরসে অক্সিজেনের পরিমাণ কমে যায়। হিমোগ্লোবিন তখন তার সঙ্গে যুক্ত অক্সিজেন ছাড়তে থাকে। এভাবে প্রথমে অক্সিজেন রক্তরস ও পরে লসিকা বা কোষরসে প্রবেশ করে। অক্সিজেন পরিবহনের সময় নিম্নলিখিত উল্লেখযোগ্য ঘটনার অবতারণা হয়, তা হলো—</p> <p>ফুসফুসের বায়ুথলি বা অ্যালভিওলি ও রক্তের চাপের পার্থক্যের জন্য ব্যাপন প্রক্রিয়ায় রক্তে প্রবেশ করে। ফুসফুস থেকে ধমনির রক্তে অক্সিজেন প্রবেশ করার পর রক্তে অক্সিজেন দুইভাবে পরিবাহিত হয়। সামান্য পরিমাণ অক্সিজেন রক্তরসে দ্রবীভূত হয়ে পরিবাহিত হয়। বেশির ভাগ অক্সিজেনই হিমোগ্লোবিনের লৌহ অংশের সঙ্গে হালকা বন্ধনের মাধ্যমে অস্থায়ী যৌগ গঠন করে। যা অক্সিহিমোগ্লোবিন নামে পরিচিত। অক্সিহিমোগ্লোবিন থেকে অক্সিজেন বিচ্ছিন্ন হতে পারে।</p> <p><img alt="" src="/ckfinder/userfiles/images/print/2020/01.January/25-01-2020/1/Kalerkantho-29-01-2020-3.jpg" style="height:79px; width:391px" /></p> <p>রক্ত কৈশিকনালিতে পৌঁছার পর অক্সিজেন পৃথক হয়ে প্রথমে লোহিত রক্তকণিকার আবরণ, কৈশিকনালির প্রাচীর ভেদ করে লসিকায় প্রবেশ করে। অবশেষে লসিকা থেকে কোষ আবরণ ভেদ করে কোষে পৌঁছে।</p> <p>কার্বন ডাই-অক্সাইড খাদ্য জারণ বিক্রিয়া কোষে কার্বন ডাই-অক্সাইড তৈরি করে। এই কার্বন ডাই-অক্সাইড প্রথমে কোষ আবরণ ভেদ করে লসিকায় প্রবেশ করে এবং লসিকা থেকে কৈশিক নালির প্রাচীর ভেদ করে রক্তরসে প্রবেশ করে। কার্বন ডাই-অক্সাইড প্রধানত বাইকার্বনেট (NAHCO<sub>3</sub>) রূপে রক্তরসের মাধ্যমে এবং (KHCO<sub>3</sub>) রূপে লোহিত রক্তকণিকা দ্বারা পরিবাহিত হয়ে ফুসফুসে আসে। সেখানে কৈশিক নালি ও বায়ুথলি ভেদ করে দেহের বাইরে নির্গত হয়।</p> <p>২। বছরের বিশেষ ঋতুতে কিংবা ঋতু পরিবর্তনের সময় সোহেলের হঠাৎ করে ঠাণ্ডা লাগে এবং সর্দি-কাশি হয়। সেই সময় সামান্য ধুলাবালির উপস্থিতিতেই কাশিতে আক্রান্ত হয়। সে অবস্থায় ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করলে ডাক্তার জানান যে এমন রোগে আক্রান্ত, যা সম্পূর্ণ নিরাময়যোগ্য নয়।</p> <p>ক) শ্বসন কী?</p> <p>খ) লিউকেমিয়া বলতে কী বোঝো?</p> <p>গ) সোহেলের রোগের কারণ ও লক্ষণ বর্ণনা করো।</p> <p>ঘ) সোহেলের ওই রোগ নিয়ন্ত্রণে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া সমীচীন বলে তুমি মনে করো।</p> <p> </p> <p><strong>উত্তর</strong></p> <p>ক) শ্বসনিক বস্তু জারিত হয়ে CO<sub>2</sub> ও  H<sub>2</sub>Oসহ বিপুল পরিমাণ শক্তি উৎপাদন প্রক্রিয়াই হলো শ্বসন।</p> <p>খ) লিউকেমিয়া বা রক্তের ক্যান্সার হলো রক্তের অস্বাভাবিকতাজনিত রোগ। সাধারণত অল্প বয়সের ছেলে-মেয়েদের এ রোগ দেখা যায়। যদি কোনো কারণে লোহিত অস্থিমজ্জা লোহিত কণিকা উৎপাদনে ব্যর্থ হয় এবং অস্বাভাবিক শ্বেত রক্তকণিকার বৃদ্ধি ঘটে, তাহলে রোগের লক্ষণগুলো প্রকাশ পায়।</p> <p>গ) উদ্দীপকে বর্ণিত সোহেল অ্যাজমা বা হাঁপানি রোগে আক্রান্ত। নিচে হাঁপানি রোগের কারণ ও লক্ষণ বর্ণনা করা হলো—</p> <p> </p> <p><strong>কারণ</strong></p> <p>যেসব খাবার খেলে অ্যালার্জি হয় যেমন—চিংড়ি মাছ, গরুর মাংস, ইলিশ মাছ, বায়ুর সঙ্গে ধোঁয়া, ধুলাবালি, ফুলের রেণু ইত্যাদি শ্বাস গ্রহণের সময় ফুসফুসে প্রবেশ করলে হাঁপানি হতে পারে।</p> <p> </p> <p><strong>লক্ষণ</strong></p> <p>১।  হঠাৎ শ্বাসকষ্ট বেড়ে যায়।</p> <p>২। শ্বাসকষ্টে দম বন্ধ হওয়ার মতো অবস্থা সৃষ্টি হয়। ঠোঁট নীল হয়ে যায়, গলার শিরা ফুলে যায়।</p> <p>৩। রোগী জোরে জোরে শ্বাস নেওয়ার চেষ্টা করে, এ সময় বুকের ভেতর সাঁই সাঁই আওয়াজ হয়।</p> <p> </p> <p>ঘ) সোহেলের হাঁপানি রোগ নিয়ন্ত্রণে যেসব পদক্ষেপ নেওয়া সমীচীন বলে মনে করি তা নিচে উল্লেখ করা হলো—</p> <p> </p> <p><strong>প্রতিকার</strong></p> <p>১। চিকিৎসায় এ রোগ সম্পূর্ণ নিরাময় হয় না। তবে ওষুধ সেবনে রোগী কিছুটা আরাম বোধ করে।</p> <p>২। যেসব খাদ্য খেলে শ্বাসকষ্ট বেড়ে যায় সেগুলো না খাওয়া।</p> <p>৩। আলো-বাতাসপূর্ণ গৃহে বসবাস করা।</p> <p>৪। যেসব জিনিসের সংস্পর্শে হাঁপানি বাড়ে, তা ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকা। যেমন—পশুর লোম, কৃত্রিম আঁশ ইত্যাদি।</p> <p>৫। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা নেওয়া ও সাবধানতা অবলম্বন করা।</p> <p>৬। ধূমপান, গুল, সাদাপাতা ও জর্দা পরিহার করা।</p> <p>৭। শ্বাসকষ্টের সময় রোগীকে তরল খাদ্য খাওয়ানো।</p> <p> </p> <p><strong>প্রতিরোধ</strong></p> <p>১। স্বাস্থ্যকর পরিবেশে বাস করা।</p> <p>২। বায়ুদূষণ, বাসস্থান বা কর্মক্ষেত্রে শ্বাসকষ্ট হতে পারে এমন সব বস্তুর সংস্পর্শ পরিহার করা।</p> <p>৩। হাঁপানি রোগীর শ্বাসকষ্ট লাঘবের জন্য সব সময় ওষুধ সঙ্গে রাখা ও প্রয়োজনমতো ব্যবহার করা।</p>