<p>১৮৬০-এর দশক। তখন জীবাণুবিজ্ঞানে ফরাসী বিজ্ঞানী পাস্তুর একটা বিপ্লব ঘটিয়ে ফেলেছেন। তিনি পাস্তুরায়ন পাদ্ধতি আবিষ্কার করেছিলেন, যা ওয়াইন আর দুধসহ নানা ধরনের তরল খাবারকে জীবাণুর হাত থেকে রক্ষা করতে পারত। </p> <p>জীবাণুবিজ্ঞানে লুই পাস্তুরের তখন নামডাক ছড়িয়ে পড়েছে। ঠিক সেই সময়, ফ্রান্সের বিভিন্ন শহরে মড়ক লাগে। কলেরার মড়ক। তবে মানুষের নয়, মুরগরির খামাগুলোতে। কাতারে কাতারে মুরগি মারা পড়ছে কলেরায়। খামারিদের কেউ কেউ ভাবলেন, নিশ্চয়েই কলেরার পেছনে কাজ করছে কোনো জীবাণু। তাই তাঁরা দারস্থ হলেন লুই পাস্তুরের। </p> <p>পাস্তুর তাঁদের ফিরিয়ে দেননি। শুরু করে দেন কাজ।</p> <p>পাস্তুর ভাবলেন, কলেরার মড়ক থামাতে হলে প্রথমেই চিহ্নিত করতে জীবাণুকে। শুধু তাই নয়, কখন কী অবস্থায় জীবাণুরা মুরগিদের আক্রমণ করে সেটা জানা জরুরি। আক্রান্ত মুরগির দেহ থেকে জীবাণু সংগ্রহ করলেন পাস্তুর। সেসব মুরগির কোনটা ছিল বেশি আক্রান্ত, কোনটা কম আক্রান্ত, কোনোটার অবস্থা কাহিল। এদের জীবণুগুলোর মধ্যেও নিশ্চয় তারতম্য আছে। কিন্তু সে সময় পরীক্ষাটা বেশিদূর এগোলো না।</p> <p>গবেষণা শেষ করার আগেই পাস্তুর ছুটিতে গিয়েছিলেন। প্রায় এক মাসের ছুটি। এ সময় মুরগির দেহ থেকে সংগ্রহ করা জীবাণুভর্তি তরল একটা পাত্রে রেখে গিয়েছিলেন। ছুটি শেষে দেখেন পচন ধরেছে সেই তরলে। কলেরার জীবাণু নিশ্চয়ই তরলে পচন ধরায়নি! পচন ধরানো এদের কাজ নয়। নিশ্চয়ই অন্যকোনো ব্যাকটেরিয়া দ্বারা আক্রান্ত হয়েছে তরল পদার্থ। পাস্তুরের অনুমানই ঠিক ছিল। অন্য জীবাণুর আক্রমণে তরলে পচন ধরেছে। এমনকী কলেরার জীবাণুকেও দুর্বল করে দিয়েছে সেইসব ব্যাকটেরিয়া।</p> <p>সেই দুর্বল জীবাণু নিয়ে পরীক্ষা চালালেন পাস্তুর। সেগুলো পুশ করলেন সুস্থ মুরগির শরীরে। দুর্বল জীবাণু মুরগিদের  কলেরায় আক্রান্ত করলে ঠিকই, কিন্ত ‍বড় কোনো ক্ষতিই করতে পারল না। দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠল মুরগিগুলো। এবার সেই মুরগির শরীরে তরতাজা কলেরার জীবাণু প্রয়োগ কলেন। কিন্তু এবার মুরগির কিছুই পারল না। </p> <p>পাস্তুর বুঝলেন, দুর্বল জীবাণু শরীরে প্রবেশের পর রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থা সেগুলো চিনে রাখে। পরে যখন পূর্ণশক্তির জীবাণু প্রবেশ করানো হয়, তখন চেনা শত্রুর বিরুদ্ধে সহজেই লড়াই করে জিতে যায় মুরগির শরীরের রোগ প্রতিরোধব্যবস্থা।</p> <p>পাস্তুর বুঝে গেলেন দুর্বল জীবাণুগুলোই হতে চলেছে তাঁর তুরুপের তাস। </p> <p>জীবাণু দুর্বল করে সেগুলো দিয়েই তৈরি করে ফেললেন কলেরার টীকা। কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলা যাকে বলে। ফ্রান্সের মুরগির খামারিরা বেঁচে গেল কলেরার মড়ক থেকে। </p> <p>পৃথিবীর প্রথম টিকা জেনার আবিষ্কার করেছিলেন ঠিকই। পাস্তুরের কৃতিত্ব অন্য জায়গায়। জেনার গুটিবসন্তের টিকা তৈরি করেছিলেন গোবসন্তের জীবাণু দিয়ে। কিন্তু পাস্তুর মুরগির কলেরার টিকা বানালেন কলেরারই দুর্বল জীবাণু দিয়ে। সত্যিকারের ‘কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলা’ বুঝি একেই বলে!<br />  </p>