<p>মুক্তা বা মতি এক ধরনের রত্নবিশেষ, যা শম্বুকজাতীয় প্রাণী ঝিনুকের অভ্যন্তরে তৈরি হয়। তবে সব ঝিনুকে মুক্তা থাকে না। মাসল শ্রেণির ঝিনুকের পেটে মুক্তা হয়। এর রাসায়নিক উপাদান হলো কনকায়োলিন ক্যালসাইট এবং ক্যালসিয়াম কার্বোনেট। খাওয়ার সময় ঝিনুক যখন তার খোলস ফাঁক করে তখন যদি বালুর কণা বা অন্য কোনো কঠিন পদার্থের চূর্ণ তার দেহের মধ্যে ঢুকে যায় এবং চেষ্টা সত্ত্বেও সেটি বের করতে না পারে, তখন এই কণাটির জন্য ঝিনুকের দেহে প্রদাহ বা জ্বলনের সৃষ্টি হয়। তখন ঝিনুকের অঙ্গ থেকে সাদা ঘন আঠালো রস ক্ষরিত হয়ে বহিরাগত কণাটিকে বেষ্টন করে স্তরে স্তরে জমাট বাঁধতে থাকে। এই কঠিন জমাট বস্তুটিই ধীরে ধীরে মুক্তায় রূপান্তরিত হয়।</p> <p>মুক্তা দেখতে ছোট এবং সাদা রঙের হয়ে থাকে। তবে অফহোয়াইট, ধূসর, নীলচে সাদা, গোলাপি, কালো ইত্যাদি নানা রঙেরও মুক্তা দেখা যায়। এরা গোলাকৃতি, অর্ধগোলাকার, ডিম্বাকৃতি হয়ে থাকে। জ্যোতিষশাস্ত্রে মুক্তার ব্যবহার দেখা যায়। খাঁটি মুক্তাকে কাঠের ওপর ফেললে ধাতব শব্দ হয়।</p> <p>ইংরেজিতে মুক্তাকে বলা হয় Pearl, আরবিতে লুলুউ। আদর্শ মুক্তা গোলাকার ও মসৃণপ্রকৃতির হয়। ব্যারোক পার্লজাতীয় মুক্তা বিভিন্ন আকার ও আকৃতির হয়ে থাকে। চমকপ্রদ, মনোলোভা, সুন্দর ও উচ্চ মূল্যমানের মুক্তা সৌন্দর্যপিপাসুদের কাছে শত শত বছর ধরে অত্যন্ত জনপ্রিয়। এ কারণেই মুক্তা একসময় অলংকারে স্থান করে নেয়। অলংকারজগতে এর অসম্ভব জনপ্রিয়তা ও সুনাম রয়েছে। একে রত্নের রানি বলে অভিহিত করা হয়।</p> <p>হাজার হাজার বছর আগে সমুদ্র বা নদী থেকে প্রাকৃতিকভাবে তৈরি মুক্তা ভারত মহাসাগর, পারস্য উপসাগর এবং লোহিত সাগর থেকে ডুবুরি কর্তৃক সংগৃহীত হতো। চতুর্দশ শতকে আরব সাগরে বিখ্যাত পর্যটক ইবনে বতুতা ডুবুরিদের কোমরে মুক্তা রাখার কাহিনির কথা বর্ণনা করেন। এর মাধ্যমেই বিশ্ববাসী মুক্তা সম্পর্কে জানতে পারে। পারস্য উপসাগরে ঝিনুক থেকে যে মুক্তা জন্মায় তাকে বসরাই মুক্তা বলে। এটি সর্বশ্রেষ্ঠ মুক্তা। এর দামও অনেক বেশি। মিয়ানমারে ইরাবতী নদীতে ঝিনুক থেকে যে মুক্তা পাওয়া যায় তাকে বার্মিজ মুক্তা বলে। এটিরও বেশ দাম। তবে তা বসরাই মুক্তার চেয়ে সস্তা।                                                                  ►  ইন্দ্রজিৎ মণ্ডল</p>