<p><strong>বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ</strong></p> <p><strong>মাইকেল মধুসূদন দত্ত</strong></p> <p><strong>নিচের উদ্দীপকটি পড়ো এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :</strong></p> <p>শপথ নিয়েও পলাশীর প্রান্তরে প্রধান সেনাপতি মীরজাফর যুদ্ধে অংশ নেয়নি। রায়দুর্লভ, উমিচাঁদ, জগেশঠ যুদ্ধে অসহযোগিতা করেছে। মোহনলাল ও মীরমদন বিশ্বাঘাতক হননি। নবাব সিরাজউদ্দৌলা পরাজিত হয়েছেন। মীরজাফরের বিশ্বাসঘাতকতায় বাংলার স্বাধীনতার সূর্য অস্তমিত হয়েছে।</p> <p>ক) ‘অরিন্দম’ কে?</p> <p>খ) ‘প্রফুল্ল কমলে কীটবাস’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে?</p> <p>গ) উদ্দীপকের মীরজাফরের সঙ্গে ‘বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ’ কবিতার কোন চরিত্রের সাদৃশ্য আছে? আলোচনা করো।</p> <p>ঘ) উদ্দীপকটি ‘বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ’ কবিতার সঙ্গে কোন দিক থেকে সাদৃশ্যপূর্ণ? বিশ্লেষণ করো।</p> <p>উত্তর : ক) অরি বা শত্রুকে দমন করে যে তাকে অরিন্দম বলা হয়। আলোচ্য কবিতায় অরিন্দম হচ্ছে মেঘনাদ।</p> <p>খ) ‘প্রফুল্ল কমলে কীটবাস’ বলতে লঙ্কাপুরীতে কীটসম লক্ষ্মণের প্রবেশ ও অবস্থান করাকে বোঝানো হয়েছে।</p> <p>প্রফুল্ল কমল হল প্রস্ফুটিত পদ্মফুল। কীটবাস হলো পোকার বাস বা আক্রমণ। পদ্মফুলে পোকার আক্রমণে যেমন তার স্বাভাবিক সৌন্দর্য নষ্ট হয়, তেমনি লঙ্কাপুরীতে কীটসম নোংরা লক্ষ্মণের প্রবেশে সে জায়গার স্বাভাবিক পরিবেশ নষ্ট হয়েছে। যুদ্ধযাত্রার আগে মেঘনাদ যখন যজ্ঞাগারে ইষ্টদেবের সাহায্য প্রার্থনা করছিলেন, তখন চাচা বিভীষণের সহায়তায় সেখানে লক্ষ্মণ প্রবেশ করে নিরস্ত্র মেঘনাদকে আক্রমণ করে। নোংরা লক্ষ্মণের প্রবেশে লঙ্কাপুরীর স্বর্গীয় পরিবেশ নষ্ট হওয়ার বিষয়টিকে ‘প্রফুল্ল কমলে কীটবাস’ বলা হয়েছে। এখানে লঙ্কাকে প্রফুল্ল কমল এবং লক্ষ্মণকে কীটের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে।</p> <p>গ) উদ্দীপকের মীরজাফরের সঙ্গে ‘বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ’ কবিতার বিভীষণের সাদৃশ্য রয়েছে।</p> <p>উদ্দীপকে সর্বকালের বিশ্বাসঘাতক মীরজাফরের বিশ্বাসঘাতকতার কথা বলা হয়েছে। নবাব হওয়ার মোহে সে সিরাজের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয় এবং ইংরেজদের সহযোগিতা করতে থাকে। সে পবিত্র কোরআন শরিফ স্পর্শ করে শপথ নিয়েও যুদ্ধক্ষেত্রে সৈন্য পরিচালনা থেকে বিরত থাকে। তারই বিশ্বাসঘাতকতায় ১৭৫৭ সালে পলাশীর প্রান্তরে দেশপ্রেমিক নবাব সিরাজউদ্দৌলা নির্মমভাবে পরাজিত হন।</p> <p>অন্যদিকে ‘বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ’ কবিতায় ঘরের শত্রু বিভীষণ স্বার্থের মোহে অন্ধ হয়ে আপন ভাতিজা মেঘনাদের সঙ্গে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। সে শত্রু লক্ষ্মণকে আপন গৃহের পথ দেখিয়ে লঙ্কাপুরীতে নিয়ে আসে এবং মেঘনাদের কক্ষে প্রবেশ করিয়ে তাঁকে (মেঘনাদকে) হত্যা করতে সাহায্য করে। এভাবে তার বিশ্বাসঘাতকতায় লঙ্কাপুরীর পতন ঘটে এবং দেশপ্রেমিক মেঘনাদ নির্মমভাবে নিহত হন। কাজেই আমরা বলতে পারি, উদ্দীপকের বিশ্বাসঘাতক মীরজাফর চরিত্রের সঙ্গে কবিতার বিভীষণ চরিত্রের চমত্কার মিলবন্ধন রয়েছে।</p> <p>ঘ) উদ্দীপকটি ‘বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ’ কবিতার সঙ্গে ষড়যন্ত্র, বিশ্বাসঘাতকতা ও দেশদ্রোহিতার দিক থেকে সংগতিপূর্ণ।</p> <p>‘বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ’ কবিতায় মেঘনাদ একজন বীরোচিত দেশপ্রেমিক হিসেবে পরিচিত। রাম বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধ শুরুর আগে মেঘনাদ যখন ইষ্টদেবের সাহায্য প্রার্থনা করছিলেন, তখন স্বার্থপর বিশ্বাসঘাতক চাচা বিভীষণ গুরু রামচন্দ্রের মান রক্ষার্থে তারই (রামের) ছোট ভাই লক্ষ্মণকে লঙ্কাপুরীতে নিয়ে আসে। এবং তার সাহায্যে লক্ষ্মণ দেশপ্রেমিক মেঘনাদকে হত্যা করে।</p> <p>অন্যদিকে উদ্দীপকের নবাব সিরাজউদ্দৌলাও একজন বীরোচিত ও দেশপ্রেমিক নবাব ছিলেন। তিনি যখন অত্যাচারী ইস্ট-ইন্ডিয়া কম্পানিকে ভারতবর্ষ থেকে উত্খাত করার জন্য বদ্ধপরিকর, তখন তাঁরই প্রধান সেনাপতি মীরজাফর ক্ষমতার লোভে অন্ধ হয়ে ইংরেজদের হাতে হাত মেলায় এবং যুদ্ধক্ষেত্রে সৈন্য পরিচালনা থেকে বিরত থাকে। মীরজাফরের বিশ্বাসঘাতকতায় পলাশীর প্রান্তরে বাংলার স্বাধীনতার সূর্য অস্তমিত হয় এবং নবাব সিরাজউদ্দৌলাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। কাজেই আমরা বলতে পারি—ষড়যন্ত্র, বিশ্বাসঘাতকতা ও দেশদ্রোহিতার দিক থেকে উদ্দীপকটি ‘বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ’ কবিতার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ। যুগে যুগে এই বিশ্বাসঘাতক ও ষড়যন্ত্রকারীরাই দেশ, জাতি ও মানবতার অপূরণীয় ক্ষতি সাধন করে চলেছে।</p> <p> </p> <p> </p>