সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করে প্রশ্নপত্র ফাঁসচক্রের পাঁচ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (দক্ষিণ) বিভাগ। সম্প্রতি গ্রেপ্তার এই পাঁচজনের মধ্যে দুজন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থী ও তিনজন পরীক্ষার্থী।
গ্রেপ্তার পাঁচজন হলেন ঢাবির আইন বিভাগের শিক্ষার্থী জ্যোতির্ময় গাইন (২৬) ও সুজন চন্দ্র রায় (২৫) এবং পরীক্ষার্থী মনিষ গাইন (৩৯), পংকজ গাইন (৩০) ও লাভলী মণ্ডল (৩০)।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানী ঢাকার মিন্টো রোডে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান ডিবিপ্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।
তিনি বলেন, গত ২৯ মার্চ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগের তৃতীয় ধাপের লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এতে ঢাকা ও চট্টগ্রামের ২১ জেলার সাড়ে তিন লাখ পরীক্ষার্থী অংশ নেন। পরীক্ষা চলাকালে প্রশ্নের উত্তরপত্র, ডিভাইসসহ মাদারীপুরে সাত ও রাজবাড়ীতে এক শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এ ঘটনায় দুই জেলায় পৃথক মামলা করেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
রাজবাড়ীতে গ্রেপ্তার হওয়া পরীক্ষার্থী আদালতে নিজের দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন। জবানবন্দিতে তিনি জানান কিভাবে, কখন তাঁর মোবাইল ফোনে উত্তরপত্র এসেছে। মাদারীপুরে গ্রেপ্তার পরীক্ষার্থীদের বেশির ভাগই জামিনে বের হয়ে যান। ঘটনাটি তদন্তের জন্য মাদারীপুরের পুলিশ সুপার (এসপি) মো. মাসুদ আলমের অনুরোধে ডিবির সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম দক্ষিণ বিভাগ তদন্তে নামে। পরে গ্রেপ্তার করা হয় জ্যোতির্ময় গাইন ও সুজন চন্দ্রকে। তাঁরা ডিবিকে জানান, পরীক্ষার আগেই তাঁরা প্রশ্ন সমাধানের জন্য পেয়েছেন। প্রশ্ন সমাধানের দায়িত্ব পান জ্যোতির্ময়ের চাচা অসীম গাইনের মাধ্যমে।
পুলিশের দাবি, প্রশ্নপ্রতি ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা দেওয়ার আশ্বাসে জ্যোতির্ময়দের দিয়ে প্রশ্ন সমাধান করান অসীম। জ্যোতির্ময়, সুজনসহ সাতজন ঢাবির জগন্নাথ হলে বসে প্রশ্নের সমাধান করে অসীমের কাছে পাঠান।
পরীক্ষা শুরুর কয়েক মিনিট আগে প্রশ্নের উত্তর পরীক্ষার্থীদের কাছে পাঠান অসীম। তাঁদের সমাধান করে দেওয়া প্রশ্নের মধ্যে ৭২ থেকে ৭৫টিই মিলেছে।
ডিবি জানায়, অসীম পরীক্ষার দুই-তিন মাস আগে থেকেই পরীক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ করতেন। বিশেষ করে চাকরির বয়স শেষের পথে, এমন পরীক্ষার্থীদের টার্গেট করতেন। তাঁদের পরীক্ষায় পাস করিয়ে দেওয়ার জন্য ১২ থেকে ১৪ লাখ টাকায় চুক্তি করতেন।