আমি কোনো আগন্তুক নই
উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও
আবার আসিব আমি বাংলার নদী মাঠ খেত ভালোবেসে
জলাঙ্গীর ঢেউয়ে ভেজা বাংলার এ সবুজ করুণ ডাঙায়,
হয়তো দেখিবে চেয়ে সুদর্শন উড়িতেছে সন্ধ্যার বাতাসে,
হয়তো শুনিবে এক লক্ষ্মীপেঁচা ডাকিতেছে শিমুলের ডালে;
হয়তো খইয়ের ধান ছড়াতেছে শিশু এক উঠানের ঘাসে,
রূপসার ঘোলা জলে হয়তো কিশোর এক সাদা ছেঁড়া পালে
ডিঙা বায়; রাঙা মেঘ সাঁতরায়ে অন্ধকারে আসিতেছে নীড়ে
দেখিবে ধবল বক; আমারেই পাবে তুমি ইহাদের ভিড়ে।
ক. বিস্তর জোনাকি কোথায় দেখা যায়?
খ. 'আমি কোনো আগন্তুক নই'- কবি এ কথা বলেছেন কেন?
গ. উদ্দীপকে ফুটে ওঠা চিত্রের সঙ্গে 'আমি কোনো আগন্তুক নই' কবিতার সাদৃশ্যপূর্ণ দিকটি ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকে ফুটে ওঠা চিত্রের সঙ্গে 'আমি কোনো আগন্তুক নই' কবিতার চেতনাগত বৈসাদৃশ্যই বেশি- যুক্তসহ বিশ্লেষণ করো।
উত্তর
ক. বিস্তর জোনাকি নিশি রাতে বাঁশ বাগানে দেখা যায়।
খ. 'আমি কোনো আগন্তুক নই'- কবি আহসান হাবীব এ কথা বলেছেন; কারণ তাঁর অস্তিত্ব এই জন্মভূমির গভীরে প্রোথিত।
জন্মভূমির সঙ্গে প্রতিটি মানুষের আজীবনের সম্পর্ক। এর সব কিছুই তার চেনা ও জানা। কবির ক্ষেত্রেও তাই।
তিনি যেমন জন্মভূমির আসমানের তারা, জমিনের ফুল, জোনাকি, পুকুর, মাছরাঙাকে চেনেন, তেমনি তারাও তাঁকে চেনে। পাখি, কার্তিকের ধানের মঞ্জরি কিংবা শুধু তার চিরোল পাতার টলমল শিশির নয়, এই জনপদের মানুষও তাঁকে ভালোভাবে চেনে। তাই তিনি উপর্যুক্ত মন্তব্যটি করেছেন।
গ. উদ্দীপকে ফুটে ওঠা চিত্রের সঙ্গে 'আমি কোনো আগন্তুক নই' কবিতার সাদৃশ্যপূর্ণ দিকটি হলো- উভয়েরই জীবন ও মন জন্মভূমির প্রকৃতিতে বাঁধা পড়েছে।
উদ্দীপকে কবি মনে করেন মৃত্যুর পরও জন্মভূমি বাংলার সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক শেষ হবে না। তাই তিন শিশু-কিশোর, সুদর্শন পোকা, লক্ষ্মীপেঁচা আর ধবল বকের মধ্য দিয়ে এই বাংলায় ফিরে আসতে চেয়েছেন।
'আমি কোনো আগন্তুক নই' কবিতার কবিও মনে করেন জন্মভূমির সঙ্গে মানুষের আজীবনের সম্পর্ক। এই জন্মভূমির গভীরে যে তাঁর শিকড় প্রোথিত সেটা বোঝাতে তিনি আসমানের তারা, জমিনের ফুল, রাতের বাঁশ বাগান, অসংখ্য জোনাকিকে যেমন সাক্ষী করেছেন, তেমনি সাক্ষী করেছেন জারুল, জামরুল গাছ, পুবের পুকুর, ঝাকড়া ডুমুরের ডাল আর মাছরাঙা পাখিকে। জন্মভূমির সৌন্দর্য যে কবিকে কতটা মুগ্ধ করেছে তা বোঝাতে গিয়ে তিনি আরো বলেছেন যে জন্মভূমির খর রৌদ্র, জলজ বাতাস, মেঘ ক্লান্ত বিকেলের পাখি, কার্তিকের ধানের মঞ্জরি, জ্যোৎস্নার চাদরে ঢাকা নিশিন্দার ছায়া, ধান ক্ষেত, নদীর কিনার ইত্যাদি তাঁর অস্তিত্বে শিড়ক গেড়ে বসে আছে।
জন্মভূমির এই সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ এক অবোধ বালক তিনি।
উদ্দীপকে ফুটে ওঠা চিত্রের সঙ্গে 'আমি কোনো আগন্তুক নই' কবিতার কবির জন্মভূমির সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধতার দিক থেকে সাদৃশ্য রয়েছে।
ঘ. উদ্দীপকের সঙ্গে 'আমি কোনো আগন্তুক নই' কবিতার চেতনাগত বৈসাদৃশ্যই বেশি অনুভবের ভিন্নতার কারণে।
উদ্দীপকের কবি পুনর্জন্মে বিশ্বাসী। তাই তিনি বাংলাকে ভালোবেসে মৃত্যুর পরও শিশু-কিশোর আর বিভিন্ন পাখির মধ্য দিয়ে বাংলার সৌন্দর্য অবলোকন করতে চান।
অন্যদিকে 'আমি কোনো আগন্তুক নই' কবিতার কবি আহসান হাবীব পুনর্জন্মে বিশ্বাসী নন। তাঁর কাছে দেশ মানে উদ্দীপকের কবির মতো শুধু চারপাশের প্রকৃতি নয়। তিনি বিশ্বাস করেন জন্মভূমির সঙ্গে প্রতিটি মানুষের আজীবনের সম্পর্ক। এর সব কিছুই তাঁর অনেক চেনা ও জানা। জন্মভূমির মধ্যে শিকড় গেড়ে থেকেই মানুষ তাই সমগ্র দেশকে আপন করে পায়।
তিনি মনে করেন, দেশকে অনুভব করলেই দেশের মানুষকেও আপন মনে হবে। তিনি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন এ দেশের প্রকৃতি ও মানুষকে তিনি যেমন চেনেন, তারাও ঠিক তেমনিভাবে তাঁকে চেনে। তাই তিনি কদম আলী, অভাবী শ্রেণির প্রতিনিধি জমিলার মায়ের মতো মানুষের চিরচেনা স্বজন। কবি অনুভব করেন, যে লাঙল জমিতে ফসল ফলায়, সেই লাঙল আর মাটির গন্ধ লেগে আছে তাঁর হাতে, শরীরে। ধানক্ষেত, ধু ধু নদীর কিনার অর্থাৎ এই গ্রামীণ জনপদের সঙ্গেই তাঁর জীবন বাঁধা। এই হচ্ছে তাঁর অস্তিত্ব।
কবি আহসান হাবীবের এই অনুভবের সঙ্গে উদ্দীপকের কবির চেতনাগত অনুভবের বিস্তর পার্থক্য রয়েছে বলে উপর্যুক্ত মন্তব্যটি যথার্থ।