এ সময় প্রায় এক কোটিরও বেশি মানুষ ভারতে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নেয়।
প্রশ্ন : ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয় কেন?
উত্তর : মুক্তিযুদ্ধের শেষের দিকে পরাজয় নিশ্চিত জেনে পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের এ দেশীয় দোসররা দেশকে মেধাশূন্য করার পরিকল্পনা করে। ১০ ডিসেম্বর থেকে ১৪ ডিসেম্বরের মধ্যে তারা এ দেশের অনেক জ্ঞানী-গুণী শিল্পী, সাহিত্যিক, শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী, চিকিৎসক, সাংবাদিককে ধরে নিয়ে হত্যা করে। তাদের মধ্যে রয়েছেন অধ্যাপক গোবিন্দচন্দ্র দেব, অধ্যাপক মুনীর চৌধুরী, অধ্যাপক জোতির্ময় গুহ ঠাকুরতা, অধ্যাপক সন্তোষ চন্দ্র ভট্টাচার্য, অধ্যাপক মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, অধ্যাপক আনোয়ার পাশা, অধ্যাপক রাশীদুল হাসান, সেলিনা পারভিন, ডা. আলীম চৌধুরী, ডা. ফজলে রাব্বী, ডা. গোলাম মর্তুজা, ডা. আজহারুল হক এবং আরো অনেকে। এসব বুদ্ধিজীবীর স্মরণে আমরা প্রতি বছর ১৪ ডিসেম্বর 'শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস' পালন করি।
প্রশ্ন : মুক্তিযুদ্ধের তাৎপর্য বর্ণনা করো।
উত্তর : মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমেই আমরা আমাদের এই দেশটি পেয়েছি। এর ফলেই পৃথিবীর বুকে আজ আমরা একটা স্বাধীন দেশের নাগরিক। আমরা পেয়েছি নিজস্ব একটা ভূ-খণ্ড, একটা নিজস্ব পতাকা। জাতি-ধর্ম-বর্ণ, নারী, পুরুষ নির্বিশেষে সকলে এই মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ তাই সবার। এই স্বাধীন দেশে তাই সবার রয়েছে সমান অধিকার। এই দেশটাকে সুন্দর করে গড়ার দায়িত্বও আমাদের সবার।
সেই সঙ্গে মনে রাখতে হবে, মুক্তিযুদ্ধে বহু মানুষের আত্মত্যাগের কথা। সেসব লাখ লাখ মুক্তিযোদ্ধার কথা ভুললে চলবে না, যারা জীবনপণ করে যুদ্ধ করেছিলেন। তাদের অনেকেই শহীদ হয়েছেন, আহত হয়ে বেঁচে আছেন অনেকে। যেসব সাধারণ মানুষ মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্য করেছেন, তাঁদের অবদানও অনেক। মুক্তিযোদ্ধাদের মতো আমরাও সব সময় দেশকে ভালোবাসব।
প্রশ্ন : মুক্তিযুদ্ধে কী কী ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল?
উত্তর : মুক্তিযুদ্ধে এ দেশের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল। মাত্র ৯ মাস যুদ্ধের মাধ্যমে একটি দেশের স্বাধীন হওয়ার ঘটনা পৃথিবীতে বিরল। কিন্তু সময় অল্প হলেও এই যুদ্ধ ছিল রক্তক্ষয়ী। সম্পদহানি ও অন্যান্য ক্ষয়ক্ষতি ছিল সীমাহীন ও অপূরণীয়। প্রায় ৩০ লাখ মানুষ এতে প্রাণ হারায়, আহত হয় আরো কয়েক লাখ মানুষ। এক কোটির অধিক মানুষ ঘরছাড়া হয়। পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের সহযোগীরা অগণিত বাড়ি-ঘর, দোকান-পাট পুড়িয়ে দেয়। ধ্বংস করে রাস্তাঘাট, সেতু ও বন্দর। বন্ধ হয়ে যায় স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, ব্যাংক, অফিস, কারখানা ইত্যাদি।
প্রশ্ন : মুক্তিযোদ্ধাদের রাষ্ট্রীয় উপাধিগুলো কী কী?
উত্তর : মুক্তিযুদ্ধে বীরত্ব ও সাহসিকতার অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে বাংলাদেশ সরকার কতগুলো বীরত্বসূচক রাষ্ট্রীয় উপাধি প্রদান করেছে। এগুলো হলো-
১. বীরশ্রেষ্ঠ : একটি সর্বোচ্চ বীরত্বসূচক পুরস্কার। মুক্তিযুদ্ধে অসীম সাহসিকতার সঙ্গে যুদ্ধ করতে গিয়ে যাঁরা শহীদ হয়েছেন, এটি তাঁদের দেওয়া হয়েছে। এ পর্যন্ত সাতজন এ খেতাবে ভূষিত হয়েছেন।
২. বীর-উত্তম : মুক্তিযুদ্ধে সাহসিকতা ও ত্যাগের জন্য দেওয়া এটি দ্বিতীয় বীরত্বসূচক পুরস্কার।
৩. বীর-বিক্রম : মুক্তিযুদ্ধে সাহসিকতা ও ত্যাগের জন্য দেওয়া এটি তৃতীয় বীরত্বসূচক পুরস্কার।
৪. বীর-প্রতীক : মুক্তিযুদ্ধে সাহসিকতা ও ত্যাগের জন্য এটি চতুর্থ বীরত্বসূচক পুরস্কার।
আমাদের মুক্তিযুদ্ধে অসংখ্য মানুষ অবদান রেখেছেন। আমরা তাঁদের সকলকে শ্রদ্ধা করি।