<p>বিয়ের আনন্দে বিভোর হয়ে ভিডিও ক্যামেরার সামনে পোজ দিচ্ছিলেন ইসরা সেবলানি। হঠাৎ কান ফাটানো শব্দ, সেই সঙ্গে কেঁপে উঠল সব কিছু। ভিডিও চিত্রে ধরা পড়ল সেই প্রকম্পিত মুহূর্ত। আর সেই মুহূর্তেই তাঁর মনে হলো, ‘আমি কি মরে যাব?’ না, তিনি মারা যাননি। তবে লেবাননের বৈরুতে গত  মঙ্গলবারের সেই বিস্ফোরণে গেছে শতাধিক প্রাণ।</p> <p>২৯ বছর বয়সী ইসরা যুক্তরাষ্ট্রে চিকিৎসক হিসেবে কর্মরত। তিন সপ্তাহ আগে তিনি দেশে এসেছেন বিয়ে করবেন বলে। গত মঙ্গলবারই ছিল তাঁর বিয়ের দিন। বর ৩৪ বছর বয়সী আহমাদ সুবেইহ। বিয়ের ভিডিও করা হচ্ছিল। যথারীতি হাসিমুখে পোজ দিচ্ছিলেন দুজন।</p> <p>ইসরা বলেন, ‘দিনটির জন্য দুই সপ্তাহ ধরে প্রস্তুতি নিয়েছি। অন্য সব মেয়ের মতো বিয়ে নিয়ে আমিও ভীষণ খুশি ছিলাম। ভাবছিলাম, শুভ্র পোশাকে আমাকে দেখে আমার মা-বাবাও ভীষণ খুশি হবেন, আমাকে দেখতে রাজকুমারীর মতো লাগবে।’</p> <p>বিয়ের আয়োজন ঠিকঠাকভাবেই এগোচ্ছিল। হঠাৎ সব এলোমেলো হয়ে যায় এক বিস্ফোরণে। বৈরুতের বন্দরে ছয় বছর ধরে গুদামজাত দুই হাজার ৭৫০ টন অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট বিস্ফোরিত হয়ে ঘটিয়েছে ভয়াবহ বিপর্যয়। কেঁপে ওঠে পুরো বৈরুত। নিহত হয় ১৩৭ জন, আহত হয় প্রায় পাঁচ হাজার। হতাহত আর ক্ষয়ক্ষতির সব দৃশ্য ইসরার বিয়ের ভিডিওতে ধরা পড়েনি বটে, তবে বিস্ফোরণের ধাক্কা ঠিকই রেকর্ড হয়ে গেছে।</p> <p>ইসরার ভাষায়, ‘বিস্ফোরণের সময় যা ঘটেছে, তা ভাষায় বোঝানোর মতো নয়। আমি স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। বুঝতে পারছিলাম না কী ঘটেছে। আমি কি মারা যাব? কিভাবে মারা যাব আমি?’ মরে যে যাননি, সেটা বুঝে ওঠার পর বরের সঙ্গে চারপাশে নজর বোলাতে শুরু করেন ইসরা। বর আহমাদ বলেন, ‘আমরা চারপাশ ঘুরে দেখতে শুরু করলাম। অবস্থা খুব খারাপ ছিল। বিস্ফোরণের সেই শব্দ আর ধ্বংস বর্ণনা করে বোঝানো যাবে না। এ রকম শব্দ কখনো শুনিনি।’</p> <p>আহমাদ আরো জানান, বেঁচে গিয়েছেন, এটুকু নিশ্চিত হওয়ার পর তিনি বিয়ের অনুষ্ঠান শেষ করার দিকে মনোযোগ দেন এবং ইসরাকেও স্বাভাবিক আচরণ বজায় রাখার চেষ্টা করতে বলেন। কিন্তু তাঁরা কি স্বাভাবিক থাকতে পেরেছিলেন? ইসরা বলেন, ‘দেখে মনে হবে আমি ঠিকই ছিলাম। কিন্তু আমি যেন সেই মুহূর্তে ছিলাম না।’ সূত্র : গার্ডিয়ান।</p>