<p>যুদ্ধবিধ্বস্ত ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ অঞ্চল গাজায় পোলিও আক্রান্ত প্রথম শিশু শনাক্ত হয়েছে। এই অবস্থায় অঞ্চলটিতে পোলিও টিকা দেওয়ার জন্য সাময়িক যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে ইসরায়েল। এমনটাই জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের এক কর্মকর্তা। এ ছাড়া জাতিসংঘের বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) এ তথ্য জানিয়েছে বলে সিএনএন ও বিবিসির খবরে বলা হয়েছে।</p> <p>ফিলিস্তিনে ডব্লিউএইচওর প্রতিনিধি রিক পিপারকর্ন বলেন, মধ্য গাজায় ১ সেপ্টেম্বর থেকে তিন দিনব্যাপী পলিও টিকাদান কর্মসূচি শুরু হবে। টিকাদানের এ সময়জুড়ে মানবিক যুদ্ধবিরতি বজায় থাকবে।  ডব্লিউএইচও আরো বলছে, প্রতিদিন গাজার স্থানীয় সময় সকাল ৬টা থেকে বিকাল ৩টার মধ্যে অন্তত আট ঘণ্টা যুদ্ধ বন্ধ রাখার লক্ষ্যে চুক্তি করা হয়েছে।</p> <p>বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা রিক পিপারকর্ন বলেন, গাজা উপত্যকাজুড়ে প্রায় ছয় লাখ ৪০ হাজার শিশুকে পোলিও টিকা দেওয়া হবে। গাজার মধ্য, দক্ষিণ এবং উত্তর অংশে তিনটি পৃথক পর্যায়ে চালু করা হবে টিকাদান কর্মসূচি।</p> <p>সম্প্রতি গাজায় গত ২৫ বছরে এই প্রথম ১০ মাস বয়সী এক শিশুর শরীরে পোলিওর উপসর্গ দেখেন চিকিৎসকরা। সেই শিশুর নাম আবদেল রহমান আবু আল-জাদেইন। জর্ডানের রাজধানী আম্মানে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর রোগটি ধরা পড়ে। তাই পোলিও দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার চাপে টিকাদান কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। স্বাস্থ্যসেবায় প্রতিবন্ধকতা ও টিকা সংকটে গাজায় দ্রুত পলিও ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ভাইরাসটি ইসরায়েলেও ছড়াতে পারে বলে সতর্ক করা হয়েছে।</p> <p>ডব্লিউএইচও জানায়, নভেল ওরাল পোলিও ভ্যাকসিন টাইপ ২ (এনওপিভি২)-এর প্রায় ১.২৬ মিলিয়ন ডোজ ইতিমধ্যে গাজায় রয়েছে, শিগগিরই অতিরিক্ত ৪০০,০০০ ডোজ পৌঁছাবে। ডব্লিউএইচও বলছে, যুদ্ধ শুরুর আগে গাজায় টিকানদানের হার ছিল সর্বোচ্চ অবস্থায়। এর মধ্যে ২০২২ পোলিও টিকা দেওয়ার হার ছিল ৯৯ শতাংশ, যা গত বছর ৮৯ শতাংশে নেমে আসে।</p> <p>জাতিসংঘের কর্মকর্তারা এবং যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন ইসরায়েলের প্রতি টিকাদান কর্মসূচির জন্য অনুরোধ জানিয়ে আসছিলেন। তাদের তীব্র চাপের মুখে এ কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। এদিকে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস পলিও টিকাদানের জন্য ইসরায়েলের মানবিক যুদ্ধবিরতিকে স্বাগত জানিয়েছে।</p> <p>টিকাদান কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য জাতিসংঘের দুই হাজারের বেশি কর্মী প্রস্তুত আছেন। জাতিসংঘের কর্মকর্তারা বলেন, তাঁদের ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ আশ্বাস দিয়েছে যে তিন দিনের মধ্যে টিকাদান কর্মসূচি শেষ করা সম্ভব না হলে তাঁদের অতিরিক্ত সময় দেওয়া হবে।</p> <p>তবে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে—পোলিও টিকা দেওয়ার জন্য ইসরায়েল কোনো ধরনে যুদ্ধবিরতি দিতে সম্মত হয়নি বরং এ লক্ষ্যে গাজায় কিছু নির্দিষ্ট অঞ্চল বরাদ্দ করতে সম্মত হয়েছে। যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভা এই বিষয়টিরই অনুমোদন দিয়েছে। </p> <p>এদিকে স্থায়ীভাবে একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে পৌঁছাতে গত কয়েক মাস ধরেই তোড়জোড় করছে বাইডেন প্রশাসন। শিগগিরই চুক্তিতে পৌঁছা সম্ভব হবে, বারবার এমনটা বললেও এখনো কোনো সমাধানে পৌঁছাতে পারেনি মধ্যস্থতাকারীরা।</p> <p>সাধারণত পোলিওমাইলাইটিস রোগটি মুখের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করে। এটি অত্যন্ত সংক্রামক ভাইরাস, যা স্নায়ুতন্ত্রকে আক্রমণ করতে পারে এবং এর কারণে মানুষের প্যারালিসিস বা পক্ষাঘাত ঘটতে পারে। ১৯৮৮ সাল থেকে বিশ্বব্যাপী পোলিওর ঘটনা ৯৯ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে গণটিকা অভিযানের কারণে।</p> <p>সূত্র : সিএনএন, বিবিসি, আলজাজিরা, টাইমস অব ইসরায়েল</p>