<p>বিগত ১৫ বছরে রাজনীতিকরণ এবং ক্ষমতাসীনদের হস্তক্ষেপে দেশের সামরিক বাহিনীর পেশাদারি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। চাকরি থেকে বরখাস্ত ও নিপীড়নের শিকার হয়েছেন ৪০০-র বেশি সেনা কর্মকর্তা। সামরিক আইনের যুগোপযোগী সংস্কারের মাধ্যমে মেধাবী ও দেশপ্রেমিক বাহিনী গড়ে তুলতে এবং বঞ্চিত অফিসারদের ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কমিশন গঠন করতে হবে।</p> <p>শনিবার (৫ অক্টোবর) রাজধানীর রাওয়া কনভেনশনের ঈগল হলে ‘বৈষম্যমুক্ত সশস্ত্র বাহিনী বাংলাদেশ ২.০ বিনির্মাণে প্রয়োজনীয় রূপরেখা’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন। আওয়ামী শাসনামলে নিপীড়নের শিকার সেনা, বিমান ও নৌ বাহিনীর কর্মকর্তারা সেমিনারে বক্তব্য দেন। প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ, সারজিস আলম এবং এবি পার্টির যুগ্ম সদস্যসচিব আসাদুজ্জামান ফুয়াদ।</p> <p>ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শাসনামলে বিভিন্ন সময় বরখাস্ত হওয়া সশস্ত্র বাহিনীর কর্মকর্তাদের চাকরিতে পুনর্বহালে কমিশন গঠনের দাবি জানান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) হাসান নাসির। </p> <p>সেমিনারে সভাপতির অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘সশস্ত্র বাহিনীর প্রায় ৪ শতাধিক সদস্য বিগত ১৫ বছরে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে বৈষম্যের শিকার হয়েছেন। একই সময়ে বঞ্চনার শিকার বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ন্যায়বিচার পেয়েছেন। কিন্তু সশস্ত্র বাহিনীর কর্মকর্তা ও সৈনিকরা তাদের প্রতি ঘটা অবিচারের সুরাহা পাননি। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কোনো রিভিউ বোর্ড বা কোনো তদন্ত কমিটিও গঠন এখন পর্যন্ত করেনি।’</p> <p>বিদ্যমান আর্মি অ্যাক্ট সংস্কারের দাবি জানিয়ে হাসান নাসির বলেন, ‘সামরিক বাহিনীর সদস্যদের বিচারের ক্ষেত্রে যে আইন অনুসরণ করা হয় তাতে রিভিউয়ের কোনো সুযোগ নেই। ব্রিটিশ আমলের আইন এখনো সশস্ত্র বাহিনীতে অনুরণ করা হয়। এটিতে আধুনিকায়নের সময় এসেছে, উন্নত দেশগুলোর সামরিক বাহিনীর আইনগুলো যাচাই করে দেখতে হবে।’</p> <p>গুমের শিকার লে. কর্নেল (অব) হাসিনুর রহমান বলেন, ‘গণ-অভ্যুত্থানের পর রাষ্ট্রের দায়িত্ব ছিল বিগত ১৫ বছর আওয়ামী লীগের নির্যাতনের শিকার সেনা সদস্যদের পাশে দাঁড়ানো। আমার আশা, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার অবিলম্বে সশস্ত্র বাহিনী সংস্কারের উদ্যোগ নেবে। আয়নাঘরের মূল কারিগর তারিক সিদ্দিকী, জিয়াউল আহসান, মামুন খালেদের বিচার করতে হবে। আওয়ামী লীগ সরকার আমার ওপর যে নিপীড়ন করেছে, তা অবর্ণনীয়। আমাকে আমার কর্মস্থল থেকে তুলে নিয়ে গুম করা হয়। কোর্ট মার্শালের সময় আমাকে এবং আমার পরিবারকে হেনস্তা করা হয়েছে। সন্ত্রাস ও জঙ্গি দমনে আমি সেনাবাহিনী থেকে পুরস্কৃতও হয়েছিলাম, আমাকে জঙ্গি তকমা দেওয়া হয়েছে।’</p> <p>সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআইয়ের সংস্কার প্রয়োজন জানিয়ে হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, ‘ফ্যাসিস্ট সরকারের তাঁবেদারি করে পুলিশের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছে। পুলিশ তাদের পোশাক পরিবর্তনের দাবি করেছে, তারা সংস্কারের দাবি করেছে। আমি মনে করি, ডিজিএফআইয়ের পক্ষ বক্তব্য আসা উচিত যে তাদেরও সংস্কার প্রয়োজন। তা না হলে অতীতে যে ঘটনাগুলো তারা ঘটিয়েছে সেগুলোর দায় তাদের নিতে হবে।’</p> <p>সেমিনারে বৈষম্যমূলক সশস্ত্র বাহিনী গঠনে তিন দফা সংস্কার প্রস্তাব তুলে ধরেন নৌবাহিনীর সাবেক কমান্ডার নেসার আহমেদ জুলিয়াস। তিনি বলেন, ‘গণ-অভ্যুত্থান-পরবর্তী বাংলাদেশে সামরিক বাহিনীতে পেশাদারিকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে হবে, রাজনৈতিক প্রভাব সমূলে উৎখাতে কমিশন গঠন করে সামরিক আইন সংস্কার করতে হবে। রাজনৈতিক কারণে বরখাস্ত ও বৈষম্যের মাধ্যমে নিপীড়িত কর্মকর্তাদের চাকরিতে পুনর্বহাল করতে হবে। অফিসরাদের পুনর্বাসন এবং আর্থিক সহায়তা প্রদান করতে হবে।’</p> <p>সেমিনারে আরো বক্তব্য দেন সাবেক রাষ্ট্রদূত মারুফ হাসান, লে. কর্নেল (অব.) শাহির, কমান্ডার মোহাম্মদ শাহরিয়ার আকন (অব.), মেজর আব্দুাল্লাহ আল মাহমুদ (অব.), লেফটেন্যান্ট সাইফুল্লাহ খান (অব.), ক্যাপ্টেন হেফাজ উদ্দিন (অব.)।</p>