<p>দেড় দশক ধরে গুম করা ব্যক্তিদের ‘আয়নাঘর’ নামে পরিচিত বন্দিশালায় আটক রাখা এবং এসংক্রান্ত পরিপূর্ণ তথ্য তথ্য প্রকাশের দাবি জানিয়েছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের। আজ বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) কমিশন এ বিষয়ে সুয়োমটো (স্বতঃপ্রণোদিত আদেশ) জারি করেছে বলে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।</p> <p>কমিশনের চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ স্বাক্ষরিত সুয়োমটোতে বলা হয়, বিগত সরকার পতনের পরের দিন থেকে নিখোঁজ ব্যক্তিদের অনেকেই পরিবারের কাছে ফিরে আসা শুরু করলে বিগত দেড় দশক ধরে সরকার কর্তৃক গুমের সত্যতা প্রকাশ পায় এবং প্রকৃত চিত্র গণমাধ্যমের মাধ্যমে জনসমক্ষে আসে। দীর্ঘদিন ধরে আয়নাঘরে অবস্থানরত নিখোঁজ ব্যক্তিদের সাক্ষাৎকার থেকে যে ভয়ংকর চিত্র ফুটে উঠেছে, তা অত্যন্ত নির্মম ও অমানবিক। একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় আয়নাঘর নামক যে গোপন নির্যাতন সেলের তথ্য উঠে এসেছে তা মধ্যযুগীয় বর্বরতাকেও হার মানায়।</p> <p>সুয়োমটোতে উল্লেখ রয়েছে, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী কর্তৃক নিখোঁজ/গুমের অভিযোগ কমিশন স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে কিংবা কারো অভিযোগের ভিত্তিতে গ্রহণ করে সরকারের নিকট শুধু প্রতিবেদন তলব করতে পারে। জাতীয় মানবাধিকার কমিশন আইন, ২০০৯-এর ১৮ ধারার সীমাবদ্ধতার কারণে কমিশন এ ক্ষেত্রে নিজে তদন্ত করতে পারে না বিধায় শুধু সরকারের দেওয়া প্রতিবেদনের ওপর নির্ভর করতে হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সরকারের নিকট থেকে এই প্রতিবেদন পেতে বছরের পর বছর অপেক্ষা করতে হয়। আইনের এই সীমাবদ্ধতা কমিশনকে অনেকটা অসহায় অবস্থার মধ্যে ফেলে দেয়, যার আশু সংস্কার প্রয়োজন মর্মে কমিশন মনে করে। একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় আয়নাঘর নামক নিষিদ্ধ কারাগারে বছরের পর বছর আটক রেখে যে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হয়েছে তা একাধারে সংবিধান ও আইনের শাসনের পরিপন্থী ও মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন মর্মে কমিশন মনে করে। বিনা বিচারে আটক থাকার ফলে এসব বন্দির যে ক্ষতি হয়েছে, তা অপূরণীয়। এ ক্ষেত্রে প্রত্যেকে ক্ষতিপূরণ পাওয়ার হকদার।</p> <p>সুয়োমটোতে ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আয়নাঘর নামক এই গোপন নির্যাতন সেলের অবস্থান কোথায়? কারা এই সেল পরিচালনা করত, তৈরি হওয়ার পর সর্বমোট কতজন এ আয়নাঘরে অন্তরীণ ছিল? তাদের পরিচয়, কোন আইন বলে তাদের অন্তরীণ করা হয়? এবং কারা এই গোপন সেল তৈরির নেপথ্যে ছিল? একটি সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে তা জনসমক্ষে আসা উচিত। সেই সঙ্গে আরো কোনো ব্যক্তি এই নির্যাতন সেলে আটক থাকলে দ্রুত মুক্ত করার ব্যবস্থা গ্রহণসহ আয়নাঘর তৈরির নেপথ্যের কারিগরদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করে কমিশনে দ্রুত প্রতিবেদন প্রেরণের জন্য সিনিয়র সচিব, জননিরাপত্তা বিভাগ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে বলা হয়েছে। আগামী ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪ তারিখ প্রতিবেদনের জন্য ধার্য করা হয়েছে।</p>