<p style="text-align:justify">মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম স্থপতি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে নৃশংসভাবে হত্যার ৪৯তম বার্ষিকীতে বৃহস্পতিবার আলোচনাসভার আয়োজন করে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী। </p> <p style="text-align:justify">সভায় বক্তারা বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর নিজের দল আওয়ামী লীগ প্রায় ১৬ বছর ক্ষমতায় থাকলেও দেশ থেকে দুর্নীতি দূর হয়নি, বরং তা বেড়েছে বহুগুণে। লুটেরা, মুনাফাখোর ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের হাতে জিম্মি ছিল দেশের কোটি মানুষ। এসব মুনাফাখোরকে নির্মূল করতে বঙ্গবন্ধু যে প্রত্যয় ব্যক্ত করেছিলেন তা তিনি নিজে বাস্তবায়ন করে যেতে পারেননি। তার দলও সেটি বাস্তবায়নের চেষ্টা করেনি। আর সে কারণেই ছাত্র-জনতার প্রবল গণ-অভ্যুত্থানের কারণে শেখ হাসিনার সরকার পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছে। দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছেন বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা।’ </p> <p style="text-align:justify">বৃহস্পতিবার (১৫ আগস্ট) বিকেল সাড়ে ৫টায় উদীচী কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এ সভায় বক্তারা আরো বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর প্রকৃত আদর্শকে ধারণ করে দেশ পরিচালনাই আওয়ামী লীগের জন্য সঠিক কাজ হতো। কিন্তু তা না করে তারা সাধারণ মানুষের কণ্ঠরোধ করেছে, ছাত্র-জনতাকে হত্যা করেছে, সাধারণ মানুষের জীবন অতিষ্ঠ করে তুলেছে। এ ছাড়া শেখ মুজিবুর রহমানকে অহেতুক হাজারো বিশেষণে বিশেষায়িত করে তাকে জনতার থেকে অনেক দূরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এসব কারণেই বঙ্গবন্ধুকে অশ্রদ্ধা করার দুঃসাহস দেখাচ্ছে একটি মহল।’ </p> <p style="text-align:justify">উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি অধ্যাপক বদিউর রহমানের সভাপতিত্বে আয়োজিত এ সভায় বক্তব্য দেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সহসভাপতি হাবিবুল আলম, শিবানী ভট্টাচার্য, প্রবীর সরদার, নিবাস দে, জামসেদ আনোয়ার তপন, উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সাধারণ সম্পাদক অমিত রঞ্জন দে, সহসাধারণ সম্পাদক সঙ্গীতা ইমাম, কোষাধ্যক্ষ বিমল মজুমদার, কেন্দ্রীয় সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য আরিফ নূর, শিখা সেনগুপ্তা, কেন্দ্রীয় সংসদের সদস্য নাজমুল আজাদ, আজমীর তারেক চৌধুরী, নাজমুল হক বাবু, সৈয়দা রত্না, বিপ্লব আল মামুন প্রমুখ। আলোচনাসভা সঞ্চালনা করেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সাধারণ সম্পাদক অমিত রঞ্জন দে। শোকসভা থেকে বঙ্গবন্ধুসহ মুক্তিযুদ্ধের সব ভাস্কর্য ভাঙচুরকারীদের শাস্তি দাবি করেছে উদীচী।</p> <p style="text-align:justify">আলোচনাসভার শুরুতে ১৫ আগস্টে নিহতদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। শোকসংগীত পরিবেশন করেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংগীত বিভাগের শিল্পীরা। </p> <p style="text-align:justify">পরে আলোচনা পর্বে বক্তারা বলেন, স্বাধীনতা-সংগ্রামের প্রতিটি পর্বেই খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এ দেশের মানুষকে স্বাধিকার আদায়ের সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ার ক্ষেত্রে অনুপ্রেরণা দেওয়ার কাজে অগ্রণী ভূমিকা ছিল তার। জেল-জুলুম-অত্যাচার-নিপীড়ন উপেক্ষা করেই এ লড়াইয়ে শামিল হন তিনি। তবে যে মৌলবাদমুক্ত, অসাম্প্রদায়িক, সাম্যবাদী, দুর্নীতিমুক্ত সুখী-সুন্দর দেশ গঠনের স্বপ্ন তিনিসহ লাখো বীর মুক্তিযোদ্ধা দেখেছিলেন, সে স্বপ্ন আজও পূরণ হয়নি। </p> <p style="text-align:justify">আলোচনা পর্বে উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সাধারণ সম্পাদক অমিত রঞ্জন দে বলেন, ‘শেখ হাসিনার স্বৈরাচারী শাসনের কারণে বঙ্গবন্ধুর অবদানকে অস্বীকার করতে শুরু করেছে একটি স্বার্থান্বেষী মহল। বিভিন্ন জায়গায় তারা বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙচুর করছে, জাদুঘর পুড়িয়ে ছাই করে দিয়েছে, তার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে আসা মানুষের ওপর হামলা চালানো হয়েছে। একই সঙ্গে সারা দেশ থেকে মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, ঐতিহ্যের ধারক সব ভাস্কর্য, স্থাপনা ধ্বংস করা হচ্ছে, ভেঙেচুরে গুঁড়িয়ে দিচ্ছে একটা মহল, যা জাতির জন্য অত্যন্ত দুঃখজনক। উদীচী বিশ্বাস করতে চায়, এর সঙ্গে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে নেতৃদানকারী ছাত্রনেতারা যুক্ত নেই। যারা এহেন কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত তাদের খুঁজে বের করে শাস্তির আওতায় নিয়ে আসার দাবি জানাচ্ছে উদীচী।’</p>