<p>এবারের ঈদুল ফিতরের আগে-পরে ১৫ দিনে (৪ এপ্রিল থেকে ১৮ এপ্রিল) দেশে ৩৫৮টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩৬৭ জন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে ১৫০০ জনের বেশি। নিহতের মধ্যে নারী ৬৩, শিশু ৭৪। ১৮৩টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত ১৫৬ জন, যা মোট নিহতের ৪২.৫০ শতাংশ। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার হার ৫১.১১ শতাংশ। দুর্ঘটনায় ৬৮ জন পথচারী নিহত হয়েছে, যা মোট নিহতের ১৮.৫২ শতাংশ। যানবাহনের চালক ও সহকারী নিহত হয়েছে ৪১ জন, অর্থাৎ ১১.১৭ শতাংশ।</p> <p>এই সময়ে তিনটি নৌ দুর্ঘটনায় সাতজন নিহত ও আটজন আহত হয়েছেন। ১৪টি রেলপথ দুর্ঘটনায় ১৯ জন নিহত এবং ১৭ জন আহত হয়েছেন। </p> <p>[যদিও গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংখ্যা ৪৯৩ জন। শুধু ঢাকার জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতালেই (পঙ্গু হাসপাতালে) ঈদের তিন দিনে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে ভর্তি হয়েছে ৪৫৪ জন, যার অধিকাংশই মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় আক্রান্ত। এই বাস্তবতায় ১৫ দিনে সারা দেশের হাসপাতালসমূহে আহত মানুষের সংখ্যা দেড় হাজারের বেশি হবে।]</p> <p>রোড সেফটি ফাউন্ডেশন ৯টি জাতীয় দৈনিক, সাতটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল, ইলেকট্রনিক গণমাধ্যম এবং নিজস্ব তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে। </p> <p><strong>যানবাহনভিত্তিক নিহতের চিত্র</strong><br /> দুর্ঘটনায় যানবাহনভিত্তিক নিহতের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, মোটরসাইকেলচালক ও আরোহী ১৫৬ জন (৪২.৫০%), বাস যাত্রী ১৮ জন (৪.৯০%), ট্রাক-পিকআপ-কাভার্ড ভ্যান-ট্রাক্টর আরোহী ২৬ জন (৭.০৮%), প্রাইভেট কার-মাইক্রোবাস-পাজেরো জিপ আরোহী ২৮ জন (৭.৬২%), থ্রি হুইলার যাত্রী (ইজি বাইক-সিএনজি-অটোরিকশা-অটোভ্যান) ৫৮ জন (১৫.৮০%), স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহনের যাত্রী (নসিমন-মাহিন্দ্র) ৯ জন (২.৪৫%) এবং বাইসাইকেল-প্যাডেল রিকশা আরোহী চারজন (১.০৮%) নিহত হয়েছেন। </p> <p><strong>দুর্ঘটনা সংঘটিত সড়কের ধরন</strong><br /> রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ বলছে, দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে ১২৯টি (৩৬.০৩%) জাতীয় মহাসড়কে, ১৪৩টি (৩৯.৯৪%) আঞ্চলিক সড়কে, ৪৮টি (১৩.৪০%) গ্রামীণ সড়কে এবং ৩৮টি (১০.৬১%) শহরের সড়কে সংঘটিত হয়েছে।</p> <p><strong>দুর্ঘটনার ধরন</strong><br /> দুর্ঘটনাসমূহের ৯৩টি (২৫.৯৭%) মুখোমুখি সংঘর্ষ, ১৩৮টি (৩৮.৫৪%) নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে, ৭২টি (২০.১১%) পথচারীকে চাপা/ধাক্কা দেয়া, ৪১টি (১১.৪৫%) যানবাহনের পেছনে আঘাত করা এবং ১৪টি (৩.৯১%) অন্যান্য কারণে ঘটেছে।</p> <p><strong>দুর্ঘটনায় সম্পৃক্ত যানবাহন</strong><br /> দুর্ঘটনায় সম্পৃক্ত যানবাহনের মধ্যে ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান-পিকআপ-ট্রাক্টর-ট্রলি-লরি-রেডিমিক্স গাড়ি ১৮.৫৬%, মাইক্রোবাস-প্রাইভেট কার-অ্যাম্বুল্যান্স-পাজেরো জিপ ৬.২৪%, যাত্রীবাহী বাস ১২.৪৮%, মোটরসাইকেল ৩২.৫৭%, থ্রি হুইলার (ইজি বাইক-সিএনজি-অটোরিকশা-অটোভ্যান-মিশুক-লেগুনা) ২০.৩৯%, স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহন (নসিমন-ভটভটি-টমটম-মাহিন্দ্র-পাওয়ারটিলার) ৫.৩২%, বাইসাইকেল-রিকশা ২.৫৮% এবং অজ্ঞাত যানবাহন ১.৮২%।</p> <p><strong>দুর্ঘটনায় সম্পৃক্ত যানবাহনের সংখ্যা</strong><br /> দুর্ঘটনায় সম্পৃক্ত যানবাহনের সংখ্যা ৬৫৭টি। (বাস ৮২, ট্রাক ৫৯, কাভার্ড ভ্যান ১১, পিকআপ ২৮, ট্রলি ১০, লরি ৭, ট্রাক্টর ৬, রেডিমিক্স গাড়ি ১, মাইক্রোবাস ১৩, প্রাইভেট কার ২৪, অ্যাম্বুল্যান্স ৩, পাজেরো জিপ ১, মোটরসাইকেল ২১৪, থ্রি হুইলার ১৩৪ (ইজি বাইক-সিএনজি-অটোরিকশা-অটোভ্যান-মিশুক-লেগুনা), স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহন ৩৫ (নসিমন-ভটভটি-টমটম-মাহিন্দ্র-পাওয়ারটিলার), বাইসাইকেল-রিকশা ১৭ এবং অজ্ঞাত যানবাহন ১২টি। </p> <p><strong>দুর্ঘটনার সময় বিশ্লেষণ</strong><br /> সময় বিশ্লেষণে দেখা যায়, দুর্ঘটনাসমূহ ঘটেছে ভোরে ৩.৬৩%, সকালে ২২.৯০%, দুপুরে ১৭.৮৭%, বিকালে ১৯%, সন্ধ্যায় ১০.৮৯% এবং রাতে ২৫.৬৯%।</p> <p><strong>দুর্ঘটনার বিভাগওয়ারী পরিসংখ্যান</strong><br /> দুর্ঘটনার বিভাগওয়ারী পরিসংখ্যান বলছে, ঢাকা বিভাগে দুর্ঘটনা ২৯.০৫%, প্রাণহানি ৩০.৭৯%, রাজশাহী বিভাগে দুর্ঘটনা ১৩.৪০%, প্রাণহানি ১১.৭১%, চট্টগ্রাম বিভাগে দুর্ঘটনা ১৪.৫২%, প্রাণহানি ১২.৮০%, খুলনা বিভাগে দুর্ঘটনা ১০.৩৩%, প্রাণহানি ৯%, বরিশাল বিভাগে দুর্ঘটনা ১০.০৫%, প্রাণহানি ১২.২৬%, সিলেট বিভাগে দুর্ঘটনা ৬.৪২%, প্রাণহানি ৬%, রংপুর বিভাগে দুর্ঘটনা ৬.৭০%, প্রাণহানি ৭.৩৫% এবং ময়মনসিংহ বিভাগে দুর্ঘটনা ৯.৪৯%, প্রাণহানি ১০.০৮% ঘটেছে। </p> <p>ঢাকা বিভাগে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি ঘটেছে। ১০৪টি দুর্ঘটনায় ১১৩ জন নিহত। সিলেট বিভাগে সবচেয়ে কম ২৩টি দুর্ঘটনায় ২২ জন নিহত। একক জেলা হিসেবে ঢাকা জেলায় সবচেয়ে বেশি ৩২টি দুর্ঘটনায় ২৮ জন নিহত হয়েছেন। সবচেয়ে কম চাঁদপুর, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট ও লালমনিরহাট জেলায়। এই চারটি জেলায় স্বল্প মাত্রার কিছু দুর্ঘটনা ঘটলেও প্রাণহানির সংবাদ পাওয়া যায়নি। রাজধানী ঢাকায় ২৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় ১৩ জন নিহত ও ৫২ জন আহত হয়েছে।</p>