<p>বান্দরবানের রুমা উপজেলার সোনালী ব্যাংকের অপহৃত ম্যানেজার নেজাম উদ্দিন উদ্ধার হয়েছে। দুই দিন ধরে নিখোঁজ ছিলেন তিনি। তাকে উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন র‍্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।</p> <p>আজ বৃহস্পতিবার (৪ এপ্রিল) বিকেলে রাজধানীর কারওয়ান বাজার র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা জানান তিনি।</p> <p>খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী বান্দরবানের রুমা উপজেলায় সোনালী ব্যাংকে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। রাত সোয়া ৮টা থেকে ৯টার মধ্যে সন্ত্রাসী সংগঠন কেএনএফ এ হামলা চালায়। হামলার সময়ে বিদ্যুৎ ছিল না। আমরা বিদ্যুৎ না থাকার বিষয়ে তদন্ত করছি। আমরা যতটা জেনেছি হামলায় শতাধিক ব্যক্তি অংশগ্রহণ করে। এ সন্ত্রাসী সংগঠন মুক্তিপণ হিসেবে ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেছিল। আমরা ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করছি, লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার ও সন্ত্রাসী সংগঠনের সদস্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।’</p> <p>তিনি বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে আমরা যে তথ্য পেয়েছি এ হামলা পরিকল্পিত। ব্যাংক ও তার আশপাশে এলাকায় তারা বেশ কিছুদিন ধরে ছদ্মবেশে অবস্থান করে আসছিল। আমাদের অভিজ্ঞতা অনুযায়ী বলতে গেলে তারা টাকার জন্য এ কাজটি করেছে। টাকাটা তাদের মূল টার্গেট ছিল। এ হামলায় অন্য কারো ইন্ধন রয়েছে কি না, বা কোনো কারণ রয়েছে কি-না সে বিষয় র‍্যাবের গোয়েন্দারা কাজ করছে। এরই মধ্যে র‍্যাব-১৫ থেকে বান্দরবান ক্যাম্পে জনবল বাড়ানো হয়েছে। পাশাপাশি র‍্যাব সদরদপ্তর থেকে পাহাড়ে অভিযানে দক্ষ র‍্যাব সদস্যদের বান্দরবান পাঠানো হয়েছে। ভৌগলিক অবস্থান গত কারণে পার্বত্য এলাকায় অভিযান চালানো অত্যন্ত কঠিন। তাই অভিজ্ঞদের ছাড়া পাহাড়ে অভিযান চালানো কঠিন। সব কিছু বিবেচনায় নিয়ে সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় র‍্যাব অপহৃত ব্যাংক কর্মকর্তা ও অস্ত্র উদ্ধারে কাজ করছে।’</p> <p>শতাধিক লোক মিলে এমন হামলার ঘটনায় গোয়েন্দাদের ব্যর্থতা দেখছেন কি-না জানতে চাইলে র‍্যাবের এ মুখপাত্র বলেন, ‘ভৌগলিক অবস্থান গত কারণে অভিযান বা গোয়েন্দা কার্যক্রম চালানো কঠিন। আর যেহেতু শান্তি আলোচনা চলমান থাকার কারণে শান্তিপূর্ণ আলোচনার প্রক্রিয়াটা চলমান ছিল। আরেকটা বিষয়, জঙ্গি অভিযান চলার সময়ে অনেকের বিষয়ে তথ্য ছিল বিভিন্নভাবে তাদের সহযোগিতার অভিযোগ ছিল। কিন্তু শান্তি আলোচনা চলমান থাকায় আমরা চাচ্ছিলাম তারা সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনে ফিরবেন। কিন্তু তারা সেটি করেনি। আমাদের কাছে ব্যাংকে হামলার তথ্য ছিল না। কিন্তু তাদের টাকার প্রয়োজনের তথ্য ছিল। এ তথ্য বিভিন্ন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে সরবরাহ করেছি। জঙ্গি অভিযানেও আমরা বলেছি টাকার জন্য তারা জঙ্গিদের প্রশিক্ষণসহ নানা সহযোগিতা করেছে।’</p> <p>তিনি বলেন, ‘ব্যাংকে হামলার পাশাপাশি তারা পুলিশ ও আনসারদের ওপর হামলা চালিয়ে অস্ত্র ছিনিয়ে নিয়েছে। এ ছাড়া মসজিদ ও আশপাশের বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে। এ ঘটনার পর শান্তি আলোচনার পথ বন্ধ হয়ে গেছে, যা এরই মধ্যে শান্তি কমিটি ঘোষণা করেছে। আমাদেরও এখন সন্ত্রাস বিরোধী অভিযান চলমান রয়েছে। কেএনএফের রাষ্ট্রবিরোধী কার্যক্রম চালানোর বিষয়টি সর্ব প্রথম র‍্যাব সামনে এনেছে। এ কুকি-চিন ন্যাশনালফ্রন্ট (কেএনএফ) টাকার বিনিময়ে জঙ্গি সংগঠন জামায়াতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারকিয়াকে পার্বত্য চট্টগ্রামে আশ্রয়, অস্ত্র সরবরাহ ও প্রশিক্ষণ দিচ্ছিল। এ প্রশিক্ষণের জন্য তারা তিন বছর মেয়াদি চুক্তি করেছিল। সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় র‍্যাব দীর্ঘ একটি অভিযান চালায়। অভিযানে ট্রেনিং সেন্টার শনাক্ত, বিপুল পরিমাণ অস্ত্রসহ শতাধিক জঙ্গি সংগঠনের সদস্য ও কুকি-চিনের ২০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।’</p> <p>র‍্যাবের অভিযানের ফলে অনেকটা কোনঠাসা ছিল কেএনএফ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি শান্তি কমিটি গঠন করে তাদের সঙ্গে শান্তি আলোচনা চলছিল। এ কারণে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কুকি-চিনের বিরুদ্ধে অভিযান বন্ধ রাখে। এ আলোচনা চলমান অবস্থায় গত ২ এপ্রিল শতাধিক কেএনএফ সদস্য সোনালী ব্যাংকে হামলা চালায়। হামলাকারীরা বাংলাদেশ পুলিশের ১০টি অস্ত্র ও আনসারের ৪টি অস্ত্র লুট করে। ব্যাংকের ম্যানেজার নেজাম উদ্দিন ভোল্টের চাবি দেওয়ায় তাকেও অপহরণ করে নিয়ে যায়। এরপরের দিন তারা থানচিতে আরো দুটি ব্যাংকে হামলা চালিয়েছে। ব্যাংক দুটি থেকে ভোল্টের চাবি নিতে না পারলেও ব্যাংকে থাকা গ্রাহকের বেশ কিছু টাকা নিয়ে যায়। প্রথম দিনের হামলায় তারা কোনো গাড়ি ব্যবহার করেনি। রাতের বেলা এসেছিল। প্রথম দিন বিদ্যুৎ না থাকায় কোনো ফুটেজ ছিল না। কিন্তু দ্বিতীয় দিনের হামলায় তারা চাঁদের গাড়ি ব্যবহার করে। এ দিনের বেশ কিছু ফুটেজ পাওয়া গেছে।’</p>