<p>ঢাকা শহরে অগ্নিঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের চিহ্নিত আবাসিক, বাণিজ্যিক ভবন-স্থাপনার সামনে দৃশ্যমান জায়গায় ‘সতর্কতা নোটিশ’ টাঙাতে বা প্রদর্শন করতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। সেই সঙ্গে ঢাকা শহরের আবাসিক, বাণিজ্যিক ভবন-স্থাপনায় পর্যাপ্ত অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা আছে কি না, আইন-বিধি অনুসারে প্রয়োজনীয় অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে কি না, সে জন্য একটি কমিটি গঠন করে দিয়েছেন আদালত।</p> <p>স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের পরিচালক, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) প্রতিনিধির সমন্বয়ে এ কমিটি গঠন করা হয়েছে।</p> <p>বেইলি রোডের অগ্নিকাণ্ডসহ অতীতের বিভিন্ন অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা তদন্ত করে এ কমিটিকে চার মাসের মধ্যে সুপারিশসহ প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। </p> <p>বেইলি রোডের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় জনস্বার্থের দুটি রিটে আজ সোমবার (৪ মার্চ) প্রাথমিক শুনানির পর বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি কাজী জিনাত হকের হাইকোর্ট বেঞ্চ রুলসহ এ আদেশ দেন।</p> <p>অগ্নিকাণ্ড প্রতিরোধে অগ্নিপ্রতিরোধ ও নির্বাপণ আইন, ২০০৩ ও বিধি অনুসারে যথাযথ পদক্ষেপ না নেওয়ার নিষ্ক্রিয়তা কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, জানতে চাওয়া হয়েছে রুলে। মন্ত্রিপরিষদসচিব, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত সচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব, রাজউক চেয়ারম্যান, পুলিশের মহাপরিদর্শক, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের মেয়রসহ বিবাদীদের রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।</p> <p>গত ২৯ ফেব্রুয়ারি রাত পৌনে ১০টার দিকে বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে এ পর্যন্ত ৪৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল এবং শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসা নিচ্ছেন আহত বেশ কয়েকজন। তাদের কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী সামন্ত লাল সেন।</p> <p>ভয়াবহ এ অগ্নিকাণ্ডে হতাহতদের পরিবারের জন্য ক্ষতিপূরণ, অগ্নিকাণ্ডের কারণ এবং অগ্নিকাণ্ডের দায়ীদের খুঁজে বের করতে কমিটি গঠনের নির্দেশনা চেয়ে রবিবার (৩ মার্চ) হাইকোর্টে জনস্বার্থে রিট করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ইউনুছ আলী আকন্দ ও আইনজীবী ইসরাত জাহান। আদালতে রিটের পক্ষে তাঁরা নিজেই শুনানি করেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত দাশগুপ্ত।</p> <p>আইন কর্মকর্তা অমিত দাশগুপ্ত পরে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘অগ্নিকাণ্ড প্রতিরোধে আইন অনুসারে পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। সেই সঙ্গে অগ্নিকাণ্ড প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে একটি কমিটি গঠন করে দিয়েছেন হাইকোর্ট। এ কমিটিকে চার মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।’</p> <p>এ কমিটির কী কাজ, কী বিষয়ে প্রতিবেদন দেবে, জানতে চাইলে অমিত দাশগুপ্ত বলেন, ‘অগ্নি প্রতিরোধ ও নির্বাপণ আইন, ২০০৩ ও বিধি অনুসারে অগ্নিকাণ্ড প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে কি না, আবাসিক-বাণিজ্যিক ভবন-স্থাপনায় পর্যাপ্ত অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা আছে কি না, তা খতিয়ে দেখবে এ কমিটি। পাশাপাশি অগ্নিকাণ্ড প্রতিরোধে নিরাপত্তামূলক আরো কী কী ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়, সে বিষয়ে সুপারিশসহ প্রতিবেদন দিতে হবে কমিটিকে।’</p> <p><strong>গত বছরের অগ্নিকাণ্ডের হিসাব জানতে চান হাইকোর্ট</strong><br /> এদিন বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট), আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) এবং ওই অগ্নিকাণ্ডে নিহত তানজিনা নওরীনের পরিবারের সদস্যের করা আরেক রিটে আদেশ দেন হাইকোর্টের আরেকটি বেঞ্চ। বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. আতাবুল্লাহর হাইকোর্ট বেঞ্চ রুলসহ আদেশ দেন। </p> <p>গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত ঢাকা শহরে বহুতল ভবন, কারখানা ও স্থাপনায় কয়টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে, এতে কতজন হতাহত হয়েছে, জানমালের কী কী ক্ষতি হয়েছে এবং অগ্নিকাণ্ডের দায়ীদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, সে বিষয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন চেয়েছেন হাইকোর্ট। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর ও রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে এ প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।</p> <p>প্রত্যেক বহুতল ভবন, কারখানা, স্থাপনায় অগ্নি নিরাপদ কক্ষ ও সিঁড়ি নিশ্চিত করতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, অগ্নি প্রতিরোধ ও নির্বাপণ আইন, ২০০৩ ও বাংলাদেশ জাতীয় বিল্ডিং কোড, ২০২০-এর বিধান অনুসারে প্রত্যেক বহুতল ভবন, কারখানা ও স্থাপনায় অগ্নি নিরাপদ কক্ষ ও সিঁড়ি যুক্ত করতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না এবং ঢাকা শহরের আবাসিক এলাকায় ব্যবসা-বাণিজ্য চালানোর নির্বিচার অনুমতি কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, জানতে চাওয়া হয়েছে রুলে। স্বরাষ্ট্রসচিব, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর, রাজউক, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনসহ বিবাদীদের রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।</p> <p>এ রিটে শুনানি করেন আইনজীবী সারা হোসেন, আনীক আর হক। তাঁদের সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী মো. শাহীনুজ্জামান। রাষ্ট্রপক্ষে সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল সেলিম আজাদ।</p> <p>আইনজীবী সারা হোসেন পরে সাংবাদিকদের বলেন, ‘এই আদালত যে প্রতিবেদন চেয়েছেন, সে প্রতিবেদন আসলে তার পরিপ্রেক্ষিতে আরো প্রয়োজনীয় নির্দেশনা আদালতের কাছ থেকে পাব বলে আশা করছি।’</p>