<article> <p style="text-align: justify;">আব্দুল করিম একজন রাজমিস্ত্রি। রোজ ভোরে নির্মাণকাজের সরঞ্জাম নিয়ে কাজের আশায় বসে থাকেন তিনি। কাজ পেলে আয় হয়, খাবার জোটে। কাজ না পেলে সংসার অচল। শুধু আব্দুল করিম (৬২) নন, রাজধানীর ফকিরাপুল পানির ট্যাংকির সামনে প্রতিদিন ভোরে তাঁর মতো আরো অনেকে এভাবে কাজের আশায় বসে থাকেন। এককথায় তাঁরা দিনমজুর। কেউ রাজমিস্ত্রি, কেউ রাজমিস্ত্রির জোগালি, কেউ বা কাঠমিস্ত্রি।</p> </article> <article> <p style="text-align: justify;">গত মঙ্গলবার ভোরে ফকিরাপুল পানির ট্যাংকির সামনে কালের কণ্ঠের এই প্রতিবেদকের সঙ্গে পরিচয় হয় আব্দুল করিমসহ আরো অনেকের। তাঁরা জানান, এ জায়গাকে ‘শ্রমিক বা মজুরের হাট’ বলে জানে সবাই। মজুররা বলেন ‘মার্কেট’।</p> <p style="text-align: justify;">আব্দুল করিম বলেন, ‘৩০ বছর আগে এই ৩৫ টাকা দিন হিসেবে কাজ লইতাম। এহন একই কামে পাই এক হাজার টেকা। তহনও ডাইল-ভাত খাইতাম, এহনও তাই। কোনো উন্নতি নাই।’ রাজমিস্ত্রি রবিউল জানান, মিস্ত্রিদের মজুরি দিনে এক হাজার টাকা আর জোগালির ৮০০ টাকা।</p> </article> <article> <p style="text-align: justify;">শ্রমিকরা জানান, মজুরি বাড়লেও নিত্যপণ্যের দামের ঊর্ধ্বগতি, ঘরভাড়া ও দৈনন্দিন অন্যান্য খরচ মেটাতে গিয়ে তাঁরা হিমশিম খাচ্ছেন। তাঁদের ভাষ্য, একজন শ্রমিকের প্রতিদিনই কাজ মেলে না। এ ছাড়া কায়িক শ্রমের একটা ধকল আছে। মাঝেমধ্যে বিশ্রাম নিতে হয়।</p> </article> <article> <p style="text-align: justify;">মজুরি বৃদ্ধির একটি আনুমানিক হিসাব পাওয়া যায় আব্দুল করিমের কাছে। তিনি জানান, তিন মাস আগে মিস্ত্রির মজুরি ছিল ৮০০ টাকা এবং জোগালির মজুরি ছিল ৬৫০ টাকা। সম্প্রতি এই দুটি শ্রেণির মজুরি যথাক্রমে ২০০ ও ১৫০ টাকা বেড়েছে। সেই হিসাবে তাদের মজুরি বেড়েছে যথাক্রমে ২৫ শতাংশ ও ২৩.০৭ শতাংশ।</p> <p style="text-align: justify;">বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) প্রকাশিত সর্বশেষ শ্রমশক্তি জরিপেও মজুরি বৃদ্ধির তথ্য পাওয়া যায়। সেখানে বলা হয়েছে, গত অক্টোবরে নিম্ন ও অদক্ষ শ্রমিকের মজুরি বেড়েছে ৭.৬৯ শতাংশ। যদিও সেই মাসে মূল্যস্ফীতি ছিল ৯.৯৩ শতাংশ। অর্থাৎ মূল্যস্ফীতির তুলনায় মজুরি বৃদ্ধির হার ২.২৪ শতাংশ কম।</p> <p style="text-align: justify;">মূল্যস্ফীতির প্রকৃত চিত্র পাওয়া যায় রাষ্ট্রীয় বিপণন সংস্থা টিসিবির তথ্যে। সে অনুযায়ী গত বছরের তুলনায় বড় দানার মসুর ডালের দাম ১০.২৬ শতাংশ, আমদানীকৃত পেঁয়াজের দাম ১৬২.৫০ শতাংশ ও আলুর দাম ৪০ শতাংশ বেড়েছে। এ ছাড়া তালিকার ১৬ মসলা পণ্যের মধ্যে ১৪টি পণ্যের দামই গত বছরের তুলনায় সর্বনিম্ন ২.৩৮ শতাংশ থেকে সর্বোচ্চ ২০০ শতাংশ বেড়েছে।</p> <p style="text-align: justify;"><strong>নেই শ্রম নিরাপত্তা</strong></p> <p style="text-align: justify;">নানা বাস্তবতায় দিনমজুরদের মজুরি কিছুটা বৃদ্ধি পেলেও শ্রম নিরাপত্তার সুরাহা হয়নি আজও। নির্ধারিত হয়নি নিম্ন ও অদক্ষ শ্রমিকের ন্যূনতম মজুরি। শ্রমিকদের অভিযোগ, নির্ধারিত মজুরিও পাওয়া যায় না প্রায়ই। শ্রম দিতে গিয়ে আহত হলে বেশির ভাগ সময় ক্ষতিপূরণ পাওয়া যায় না।</p> <p style="text-align: justify;">নাসিরউদ্দিন নামের এক কাঠমিস্ত্রি বলেন, ‘আট ঘণ্টার বেশি কাজ করায়াও মজুরি কম দিতে চায়। অনেক কন্ট্রাক্টর তো মজুরি মাইরাই দেয়। আসলে মজুরির কোনো নিশ্চয়তা নাই।’</p> <p style="text-align: justify;">শ্রম বিক্রি করতে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ও আহত শ্রমিকদের পুনর্বাসনে এক জীবনের সমপরিমাণ ক্ষতিপূরণ দাবি করে আসছে ইমারত নির্মাণ শ্রমিক ইউনিয়ন বাংলাদেশ (ইনসাব)। শ্রম আইনে এটি অন্তর্ভুক্তির দাবি জানিয়ে দীর্ঘদিন কর্মসূচি করে আসছে সংগঠনটি।</p> <p style="text-align: justify;">ইনসাবের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘শ্রমিকরা ক্ষতিগ্রস্ত হলে বিদ্যমান আইনে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয় মাত্র দুই লাখ টাকা। এই ক্ষতিপূরণের অর্থে আহত শ্রমিক চিকিৎসাও করতে পারেন না। গুরুতর আহত বা পঙ্গুত্ববরণকারী শ্রমিকের ক্ষেত্রে এই ক্ষতিপূরণ তো নামমাত্র।’</p> </article>