<p>মানবাধিকার রক্ষার বিষয়টি যাতে উন্নয়নশীল দেশের ওপর চাপ সৃষ্টির রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা না হয় বিশ্বনেতাদের প্রতি এমন আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৮তম অধিবেশনে অংশগ্রহণ করে আমি দ্ব্যর্থহীনভাবে ঘোষণা করেছি, আমার সরকার সংবিধানের আলোকে গণতন্ত্র, আইনের শাসন ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করে যাচ্ছে ও করে যাবে।</p> <p>আজ শুক্রবার (৬ অক্টোবর) বিকেল ৪টায় সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য সফর শেষে গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।</p> <p>প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৮তম অধিবেশনে অংশগ্রহণের জন্য আমি ১৭ সেপ্টেম্বর নিউ ইয়র্কে যাই। সেখানে ২২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অবস্থান করি। ২৩ থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর ওয়াশিংটন ও ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে ৩ অক্টোবর পর্যন্ত যুক্তরাজ্য সফর শেষে গত বুধবার দেশে ফিরেছি। ২২ সেপ্টেম্বর সাধারণ অধিবেশনের বিতর্ক পর্বে বক্তব্য রাখি। এ বছর সাধারণ বিতর্কের প্রতিপাদ্য ছিল আস্থার পুনর্নির্মাণ এবং বিশ্বব্যাপী সংহতির পুনরুজ্জীবন : সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ২০৩০ উন্নয়ন কর্মসূচি এবং এসডিজি অর্জনের মাধ্যমে শান্তি, সমৃদ্ধি ও টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করা। আমি আমার বক্তব্যে যেসব বিষয়সমূহ তুলে ধরেছি সেগুলোর মধ্যে ছিল : বিশ্ব শান্তি ও টেকসই সমৃদ্ধি অর্জন এবং অভিন্ন সংকট মোকাবেলায় বিভাজন, সংকীর্ণতা ও বিচ্ছিন্নতার পরিবর্তে একতা, সহমর্মিতা ও বহুপাক্ষিকতার ওপর গুরুত্বারোপ। জলবায়ু পরিবর্তন ও করোনা মহামারি এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবের ফলে বাংলাদেশসহ উন্নয়নশীল দেশগুলো এসডিজি বাস্তবায়নে পিছিয়ে পড়ছে। এমতাবস্থায়, স্বল্পোন্নত দেশসমূহের ক্যাটাগরি থেকে উত্তরণের পরেও প্রয়োজনীয় সময় পর্যন্ত ঐ ক্যাটাগরির জন্য প্রযোজ্য বিশেষ সুবিধাসমূহ অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছি।’</p> <p>তিনি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহের সংস্কার করে উন্নয়নশীল দেশসমূহকে বিশেষ ছাড়ে, কম সুদে এবং ন্যূনতম শর্তে অর্থায়ন এবং সমস্ত ঋণ ব্যবস্থায় প্রাকৃতিক দুর্যোগসংক্রান্ত বিশেষ বিধান অন্তর্ভুক্ত করার আহ্বান জানাই। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য কৃষিজাত পণ্য সংরক্ষণ খাতে বৈশ্বিক বিনিয়োগ বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপের পাশাপাশি আঞ্চলিক ‘খাদ্য ব্যাংক’ চালু করার প্রস্তাব দিই। সেখানে আমি আমার সরকারের উল্লেখযোগ্য কার্যক্রম ও সাফল্যের বিষয়ে আলোকপাত করেছি। এসবের মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তন ঝুঁকি মোকাবেলায় গৃহীত কার্যক্রম, গৃহহীন মানুষদের জন্য আশ্রয়ণ প্রকল্প, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী, নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য সাশ্রয়ী দামে চাল ও অন্যান্য সামগ্রী বিতরণ, নারীর ক্ষমতায়ন এবং লিঙ্গসমতা নিশ্চিতকরণে সরকারের নানামুখী কার্যক্রম, বিনা মূল্যে বই বিতরণ ও বৃত্তি প্রদান কার্যক্রম এবং সবার জন্য স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে কমিউনিটি ক্লিনিকের মতো প্রকল্প অন্যতম।</p> <p>তিনি বলেন, এসব উচ্চ পর্যায়ের সভায় আমি বেশ কিছু প্রস্তাবনা তুলে ধরি। ভবিষ্যতে মহামারি মোকাবেলা করার জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নেতৃত্বে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর মধ্যে একটি আন্তর্জাতিক সহযোগিতা কাঠামো তৈরি করার প্রস্তাব করেছি। সকলের জন্য বৈশ্বিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য স্বাস্থ্য পরিচয়পত্র সংবলিত ডাটাভিত্তিক ও আন্তঃপরিচালনযোগ্য একটি স্বাস্থ্য তথ্য ব্যবস্থা গড়ে তুলতে অভিজ্ঞতা বিনিময়ের প্রস্তাব করেছি বলেও জানান তিনি।</p>