<p style="text-align:justify">রাজধানীর বনানীতে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) প্রধান কার্যালয়ে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় সারা দেশে সরকারি এই প্রতিষ্ঠানটির সব ধরনের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। এই কার্যক্রম কবে নাগাদ চালু হবে—সেটিও অনিশ্চিত। একই অবস্থা পাশের সেতু ভবনেরও। গতকাল বুধবার উভয় প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের খোলা প্রাঙ্গণে শামিয়ানা টানিয়ে বসতে দেখা যায়।</p> <p style="text-align:justify">বিআরটিএর সূত্র বলছে, এই মুহূর্তে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বলা কঠিন। সব বিভাগের প্রতিনিধিরা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পরীক্ষা করে ক্ষয়ক্ষতি বের করছেন। মিরপুরে অবস্থিত মেট্রো-১ সার্কেল অফিস বিআরটিএর প্রাণকেন্দ্র। হামলার ঘটনায় সেখানেও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।</p> <p style="text-align:justify">এই অফিসে বিদেশ থেকে আমদানি করা মেশিনের মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয়ভাবে গাড়ি পরীক্ষা করার ব্যবস্থা ছিল। ফিটনেস সনদ দেওয়ার জন্য দিনে ৭০টি গাড়ি পরীক্ষা করার সুযোগ ছিল। নতুন করে ফিটনেস সনদ দেওয়ার কার্যক্রম আবার কবে চালু করা যাবে, সেটি এখনই বলা যাচ্ছে না।</p> <p style="text-align:justify">সূত্র বলেছে, ভবনের পঞ্চম তলায় তথ্যকেন্দ্রে আগুন দেওয়া হয়েছে। সেখানে তথ্যের কতটুকু ক্ষতি হয়েছে, সেটা তদন্তের পর বোঝা যাবে। পুরোটা প্রতিস্থাপন না করা পর্যন্ত বোঝা যাবে না। প্রায় ৪৩ লাখ ড্রাইভিং লাইসেন্সসহ এক কোটি গাড়ির বিভিন্ন ধরনের তথ্য এই ডাটা সেন্টারে ছিল। এখানে ১২টি গাড়ি  পোড়ানো হয়েছে।</p> <p style="text-align:justify">এমন পরিস্থিতিতে প্রধান দপ্তরের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে সামনের খালি জায়গায় অস্থায়ী দুটি শামিয়ানা টানিয়ে। একটিতে বিআরটিএর কর্মকর্তাদের বসে কাজ করতে এবং অধস্তনদের বিভিন্ন নির্দেশনা দিতে দেখা গেছে। আরেকটিতে কাজ করছে ক্ষয়ক্ষতি নির্ণয় কমিটি।</p> <p style="text-align:justify">বিআরটিএর প্রধান কার্যালয়ে সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, নিচতলাজুড়ে ভাঙচুর ও আগুনে পোড়ানোর ক্ষতচিহ্ন। লিফটের বাটন ও স্বয়ংক্রিয়ভাবে কর্মচারীদের উপস্থিতি নেওয়ার মেশিন ভেঙে ফেলা হয়েছে। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ব্যানার ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে। নিচতলায় প্লাস্টিকজাতীয় দ্রব্য আগুনে গলে লেপ্টে আছে। স্বাভাবিকভাবে হাঁটার মতো পরিস্থিতি নেই। অন্ধকার গুমোট পরিবেশ। পোড়া গন্ধে বাতাস ভারি। নিচতলায় নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছেন সেনা সদস্যরা।</p> <p style="text-align:justify">জানতে চাইলে বিআরটিএর চেয়ারম্যান গৌতম চন্দ্র পাল কালের কণ্ঠকে বলেন, বিআরটিএর সেবা পেতে আরো অনেক সময় লাগবে। গাড়ির তথ্য বিভিন্ন সার্ভারে ব্যাকআপ আছে। তবে কিছু তথ্য না-ও পাওয়া যেতে পারে। প্রধান কার্যালয়ে কেন্দ্রীয় সার্ভার বন্ধ থাকায় সারা দেশে বিআরটিএর সব কার্যক্রম বন্ধ থাকবে।</p> <p style="text-align:justify">লাইসেন্স কবে থেকে দেওয়া শুরু করা সম্ভব হবে—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বলতে পারছি না। কারণ এটা সার্ভারের ওপর নির্ভর করছে। এই মুহূর্তে কোনো আবেদনও করা যাবে না। বিআরটিএর সমপূর্ণ কার্যক্রম আপাতত বন্ধ।’</p> <p style="text-align:justify">এদিকে বিআরটিএর পাশেই অবস্থিত সেতু ভবনের প্রায় অর্ধেক পুড়ে গেছে। এই ভবনে দুই দফায় আগুন দেওয়া হয়। ভবনের সামনে থাকা মোট ৫৫টি গাড়ি পুড়ে গেছে। যদিও সেতু ভবনের কারণে সারা দেশে কার্যক্রমে কোনো সমস্যা হচ্ছে না। সব সেতুতে টোল আদায় স্বাভাবিক রয়েছে।</p> <p style="text-align:justify">সরেজমিনে দেখা গেছে, ভবনের সামনে গাড়িগুলো পুড়ে কঙ্কাল হয়ে আছে। এর মধ্যেই শামিয়ানা টানিয়ে অস্থায়ীভাবে অফিসের কার্যক্রম পরিচালনা করছে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ (বিবিএ)। ভবনের নিচতলা ঘুরে পোড়ার ক্ষত দেখা যায়। বঙ্গবন্ধু কর্নার, অভর্থনা কক্ষ, সেনিমার কক্ষ পুড়ে ছাই। বেশির ভাগ টাইলস ফেটে গেছে। ভবনের দেয়ালের কাচের অংশ ভাঙচুর করা হয়েছে। আগুনের তাপে অনেক কাচ গলে গেছে। </p> <p style="text-align:justify">সেতু ভবন সূত্র বলেছে, কতটুকু ক্ষতি হয়েছে, তা নির্ণয়ে একটি কমিটি কাজ করছে। বিভিন্ন চলমান প্রকল্পের নকশা এবং দালিলিক তথ্য পুড়ে গেছে। তবে এসবের ব্যাকআপ আছে। আর মেগা প্রকল্পের বিষয়গুলো একাধিক স্তরে সুরক্ষিত আছে। </p> <p style="text-align:justify">সেতু বিভাগের সচিব ও বিবিএর নির্বাহী পরিচালক মো. মনজুর হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ভবনের নিরাপত্তার যে নির্দেশনা দরকার, সেটি এখনো আমরা পাইনি। তাই বাইরে বসেই অফিস করছি। ফায়ার সার্ভিস, গণপূর্ত, বিদ্যুৎ ও গ্যাস বিভাগের ঝুঁকিমুক্ত অনুমোদন পেলে ভবনের সংস্কার শেষে ভেতরে অফিস করা শুরু হবে।’</p> <p style="text-align:justify">সেতু বিভাগের অধীনে নির্মিত হয়েছে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। এই এক্সপ্রেসওয়েতে এখন যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। এক্সপ্রেসওয়ের বনানী ও মহাখালী টোলপ্লাজা আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এই ক্ষতি সারিয়ে কবে এক্সপ্রেসওয়ে চালু হবে—সেটি এখনো অনিশ্চিত।</p> <p style="text-align:justify">এ প্রসঙ্গে সেতু সচিব মো. মনজুর হোসেন বলেন, ‘এক্সপ্রেসওয়ের কমপানির সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে। তারা বিষয়টি দেখছে। আলোচনার ভিত্তিতে চালু করার সিদ্ধান্ত হবে। তবে টোলপ্লাজা ঠিক না হওয়া পর্যন্ত মহাখালী ও বনানী র‌্যাম্প (ওঠানামার পথ) বন্ধ থাকতে পারে।</p>