<p>রাজধানীর পুরান ঢাকার আরমানীটোলায় একটি ছয়তলা ভবনের নিচতলায় কেমিক্যাল গোডাউনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় এখন পর্যন্ত চারজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এতে দগ্ধ ও ধোঁয়ার কারণে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন আরো অন্তত ২১ জন। হাজী মুসা ম্যানশন নামের যে ভবনে থাকা কেমিক্যাল গোডাউনে আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে, সেটির লাইসেন্স ছিল না বলে জানা গেছে। ভবনটিতে কেমিক্যাল গোডাউন করার লাইসেন্স দেয়নি ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর। তবে সিটি করপোরেশন তাদের ট্রেড লাইসেন্স দিয়েছে কি না বিষয়টি যাচাই করে দেখা হবে।</p> <p>শুক্রবার (২৩ এপ্রিল) সকালে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা জানান ফায়ার সার্ভিসের ঢাকা বিভাগের উপপরিচালক দেবাশীষ বর্ধন।</p> <p>তিনি বলেন, হাজী মুসা ম্যানশনে প্রচুর পরিমাণে কেমিক্যাল রয়েছে। এগুলো অবৈধ কেমিক্যালের দোকান। আমার জানামতে, ফায়ার সার্ভিস এদের কোনো ধরনের লাইসেন্স দেয়নি। তবে আমি জানি না, সিটি করপোরেশন তাদের ট্রেড লাইসেন্স দিয়েছে কি না। সম্পূর্ণ অবৈধভাবে এ কেমিক্যাল গোডাউন গড়ে উঠেছে। নিচতলায় কেমিক্যাল গোডাউন আর ওপরে মানুষের বসবাস, এর মানে অগ্নিকুণ্ডেই বসবাস। এ জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত।</p> <p>গোডাউনের কেমিক্যালগুলোর ধরন জানতে চাইলে তিনি বলেন, আসলে এগুলো হ্যাজার্ডিয়াস কেমিক্যাল, বিভিন্ন ধরনের কেমিক্যাল রয়েছে এখানে। আমরা যখন ঘটনাস্থলে প্রথম আগুন নেভাতে আসি কেমিক্যালগুলোর জন্য অনেক সমস্যা হয়েছে। যারা কেমিক্যালগুলো এখানে রেখেছেন, এ মৃত্যুর জন্য তারা দায়ী।</p> <p>আগুনের সূত্রপাত প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটা তদন্তের পর জানা যাবে কিভাবে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে। ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের নিয়ম অনুযায়ী প্রতিটি অগ্নিকাণ্ডের পর একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে কেমিক্যাল রি-অ্যাকশনের কারণে আগুন লাগার ঘটনা ঘটে। তাৎক্ষণিক আমরা কিছুই বলতে পারছি না। তদন্তের পর অগ্নিকাণ্ড সূত্রপাতের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যাবে।</p> <p>তিনি বলেন, এ পর্যন্ত দুজন ভিকটিম- অর্থাৎ একজন নারী ও তিনজন পুরুষ মারা গেছেন। এ ছাড়া আমাদের তিনজন আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এদের মধ্যে একজন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে আর দুজন পঙ্গু হাসপাতালে।</p> <p>ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল জিল্লুর রহমান বলেন, এটি অপরিকল্পিত কেমিক্যাল মার্কেট। এ ভবনে আমরা কোনো ধরনের নিরাপত্তাব্যবস্থা দেখতে পাইনি। ঘটনা তদন্তে চার সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটি ১০ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেবে।</p> <p>এর আগে বৃহস্পতিবার (২২ এপ্রিল) দিনগত রাত সোয়া ৩টার দিকে আরমানীটোলার আরমানিয়ান স্ট্রিটের হাজী মুসা ম্যানশনে আগুনের সূত্রপাত হয়। অগ্নিকাণ্ডের খবর পেয়ে পর্যায়ক্রমে ফায়ার সার্ভিসের ১৯টি টিম যোগ দিয়ে প্রায় তিন ঘণ্টার চেষ্টায় সকাল সাড়ে ৬টার দিকে আগুন নেভাতে সক্ষম হয়।</p> <p>জানা গেছে, আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গে বিকট শব্দ হয়ে বিদ্যুৎ চলে যায়। এতে বাসিন্দারা আটকে পড়েন। ভবনটিতে ১৮টি পরিবার বসবাস করে। অতিরিক্ত ধোঁয়ার কারণে প্রথমে আশপাশের ভবন থেকে বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়া হয়। আটকে পড়া অনেককেই মুমূর্ষু অবস্থায় গ্রিল কেটে, জানালা ভেঙে, ছাদের দরজা ভেঙে উদ্ধার করেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা।</p> <p>এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় সর্বশেষ খবর অনুযায়ী চারজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। নিহতরা হলেন- কবির, মার্কেটের প্রহরী রাসেল, রাসেলের ফুপা আরেক প্রহরী ওয়ালিউল্লাহ বেপারী (৭০) ও চতুর্থ তলার বাসিন্দা ইডেন মহিলা কলেজের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী সুমাইয়া।  </p> <p>এ ছাড়া আরো ২১ জন বর্তমানে শেখ হাসিনা বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে ভর্তি আছেন। এদের মধ্যে চারজন আইসিইউতে রয়েছেন, তবে কেউ এখনো শঙ্কামুক্ত নন বলে জানিয়েছেন শেখ হাসিনা বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের প্রধান সমন্বয়ক সামন্তলাল সেন।</p>