<p>পরিবর্তন ও গতির সাহায্যে আমরা সময়ের অস্তিত্ব অনুভব করতে পারি। সূর্যের চারদিকে পৃথিবীর ঘূর্ণনের কারণে ঋতু পরিবর্তন হয়। পৃথিবীর নিজ অক্ষের ওপর ঘোরার কারণে রাত-দিন হয়। আমরা বুঝতে পারি সময় বয়ে চলেছে। এবং আমরা সে অনুযায়ী আমাদের দৈনিক, সাপ্তাহিক ও বাৎসরিক কাজগুলো যেমন সম্পাদন করি, তেমনি মহান আল্লাহর দেওয়া দৈনিক, সাপ্তাহিক, মাসিক ও বাৎসরিক বিধানগুলোও যথাসময়ে পালন করি।</p> <p><strong>চাঁদ ও সূর্যের পরিক্রমা</strong> : সময়ের পরিমাপ করার জন্য আমাদের সাহায্য করে থাকে দিন-রাত, সূর্য-চন্দ্র ইত্যাদি। এগুলোর মাধ্যমেই আমরা দিন, সপ্তাহ, মাস ও বছর গণনা করে থাকি। মহান আল্লাহ এগুলোর মাধ্যমেই আমাদেরকে সময়ের বৈচিত্র্য সম্পর্কে ধারণা দেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘তিনিই সূর্যকে করেছেন দীপ্তিময় এবং চাঁদকে আলোকময় আর তার জন্য নির্ধারণ করেছেন বিভিন্ন মনজিল, যাতে তোমরা জানতে পারো বছরের গণনা এবং (সময়ের) হিসাব। আল্লাহ এগুলো অবশ্যই যথার্থভাবে সৃষ্টি করেছেন। জ্ঞানী সম্প্রদায়ের জন্য তিনি আয়াতগুলো বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করেন।’ (সুরা : ইউনুস, আয়াত : ৫)</p> <p>এভাবে যদি মহান আল্লাহ সময়ের ভিন্ন ভিন্ন মনজিল ঠিক না করে দিতেন এবং সুশৃঙ্খল গতি ঠিক না করে দিতেন, তাহলে পৃথিবীর কোনো কিছুই ঠিকঠাক চলত না। সময়মতো সঠিক ফসল ফলানো সম্ভব হতো না। সময়মতো ইবাদত করা সম্ভব হতো না। পৃথিবীর কোনো কার্যক্রমেই শৃঙ্খলা থাকত না।</p> <p><strong>গ্রেগ্রিয়ান ও জুলিয়ান বর্ষপঞ্জি</strong> : সময় গণনায় ১২ সংখ্যাটির বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। যেমন—১২ মাসে এক বছর, ১২ বছরে এক যুগ ইত্যাদি। প্রশ্ন জাগতে পারে, এক বছরে ১২টি মাসকেই কেন হিসাব করতে হবে। এর কমবেশি করলে কী হয়? এর দুটি ব্যাখ্যা আছে—একটি বৈজ্ঞানিক ব্যাখা, আরেকটি কোরআনের ব্যাখা। যেমন—যদি প্রশ্ন করা হয় যে ইংরেজি ক্যালেন্ডারে বছরে ১২ মাস কেন? এর উত্তর হলো, জুলিয়াস সিজারের জ্যোতির্বিদদের মতে, বছরকে ঋতুর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করতে তাতে ১২ মাস ও অধিবর্ষ সংযোজন করতে হয়। আমরা এখন যে ক্যালেন্ডার ব্যবহার করি, তা হচ্ছে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার। এর আগে ছিল জুলিয়ান কালেন্ডার। এরও আগে রোমানরা গ্রিক পঞ্জিকা অনুযায়ী বছর ধরত ৩০৪ দিনে, যাকে ১০ মাসে ভাগ করা হয়েছিল। জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারির জন্ম তখনো হয়নি। মার্চ ছিল বছরের প্রথম মাস। একসময় রাজা নুমা পম্পিলিয়াস দেখলেন ৩০৪ দিন হিসাবে বছর করলে প্রকৃতির সঙ্গে মিলছে না। খ্রিস্টপূর্ব ৭৯৩ অব্দে তিনি বছরের সঙ্গে যোগ করলেন আরো ৬০ দিন। বছরের দিন বৃদ্ধি পেল ঠিকই সঙ্গে সমস্যাও বৃদ্ধি পেল। ঋতুর চেয়ে সময় এগিয়ে আছে তিন মাস। তখনই জুলিয়াস সিজার ঢেলে সাজালেন বছরকে। নতুন দুটি মাস জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিকে নিয়ে এলেন বছরের প্রথম দিকে।</p> <p><strong>সময় গণনায় ১২-এর গুরুত্ব : </strong>আর পবিত্র কোরআনের ভাষ্য মতে, ‘সময় গণনায় বছরে ১২ মাসের হিসাবটি মহান আল্লাহই নির্ধারণ করেছেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আসমান ও জমিনের সৃষ্টির দিন থেকেই আল্লাহর বিধানে আল্লাহর কাছে গণনায় মাস ১২টি, এর মধ্যে চারটি নিষিদ্ধ মাস, এটাই প্রতিষ্ঠিত দ্বিন।’ (সুরা : তাওবা, আয়াত : ৩৬)</p> <p>এই আয়াতের সারমর্ম হলো, আল্লাহর কাছে মাসের সংখ্যা ১২টি নির্ধারিত, এতে কমবেশি করার কারো সুযোগ নেই। জাহেলিয়াতের লোকেরা বদলালেও তোমরা সেটা বদলাতে পারো না। (তাফসিরে কুরতুবি)</p> <p>শুধু জাহেলি যুগেই নয়, পৃথিবীর শুরু থেকেই অনেক জাতি নিজেদের মতো করে বছরের মাসসংখ্যা কমবেশি করার চেষ্টা করেছে। যেমন—হিব্রু বর্ষপঞ্জিতেও বছরে মাসের সংখ্যা ছিল ১৩। কিন্তু বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের মালিক যেখানে সময় গণনায় বছরে ১২ মাসের সংখ্যাটি চূড়ান্ত করে দিয়েছেন, সেখানে রদবদল করে সুফল বয়ে আনার সাধ্য কার আছে? মহান আল্লাহ আমাদের কল্যাণেই বছরে মাসের সংখ্যা ১২টি নির্ধারণ করেছেন।</p>