<p>আল্লাহর সন্তুষ্টির লক্ষ্যে নিজের ধন-সম্পত্তি আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করাকে সদকা বলে। এই দান-সদকা ইসলামী অর্থনীতির অন্যতম উৎস। পবিত্র কুরআনে বিভিন্ন জায়গায় দানের প্রতি উদ্বুদ্ধ করা হয়।বিভিন্ন সময় রাসুল (সা.) সাহাবিদেরকে দানের উৎসাহিত করেছেন। ফলে তাঁরা মানুষের সহযোগিতার প্রেরণা নিয়ে সামর্থ্যের সবটুকু আল্লাহর কাছে সমর্পন করেন। নিম্নে সাহাবিদের দানশীলতার কিছু নমুনা তুলে ধরা হল।</p> <p><strong>আবু বকর (রা.)-এর পুরো সম্পদ দান </strong>: জায়দ ইবনে আসলাম (রহ.) তাঁর পিতা থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, উমর (রা.)-কে আমি বলতে শুনেছি, রাসুল (সা.) (তাবুকের যুদ্ধের সময়) আমাদেরকে দান-সদকা করার নির্দেশ দেন। সৌভাগ্যক্রমে ওই সময় আমার সম্পদও ছিল। আমি (মনে মনে) বললাম, যদি আমি কোন দিন আবু বকর (রা.)-কে অতিক্রম করে যেতে পারি, তাহলে আজই সেই সুযোগ। উমর (রা.) বলেন, আমি আমার অর্ধেক সম্পদ নিয়ে আসলাম। রাসুল (সা.) বললেন, তোমার পরিবার-পরিজনদের জন্য তুমি কি রেখে এসেছ? আমি বললাম, এর সমপরিমাণ। আর আবু বকর (রা.) তাঁর পুরো সম্পদ নিয়ে এলেন। তিনি বললেন, হে আবু বকর! তোমার পরিবার-পরিজনদের জন্য তুমি কি রেখে এসেছ? তিনি বললেন, তাদের জন্য আল্লাহ ও তার রাসুলকেই রেখে এসেছি। আমি (মনে মনে) বললাম, আমি কখনও আবু বাকর (রা.)-কে অতিক্রম করতে পারব না। (তিরমিজি, হাদিস নং ৩৬৭৫)</p> <p><strong>ওমর (রা.)-এর মূল্যবান জমি দান :</strong> ইবনে ওমর (রা.) বলেন, ওমর (রা.) খায়বারে কিছু জমি লাভ করেন। তিনি এ জমির ব্যাপারে পরামর্শের জন্য রাসূল (সা.) এর নিকট এলেন এবং বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল (সা.) আমি খায়বারে এমন উৎকৃষ্ট কিছু জমি লাভ করেছি যা ইতিপূর্বে আর কখনো পাইনি। আপনি আমাকে এ ব্যাপারে কী আদেশ দেন? রাসুল (সা.) বললেন, ‘তুমি চাইলে জমির মূলস্বত্ব ওয়াকফ করে উৎপন্ন বস্তু সদকা করতে পার।’ ইবনে ওমর (রা.) বলেন, ওমর (রা.) এ শর্তে তা সদকা (ওয়াক্ফ) করেন যে, তা বিক্রি করা যাবে না, তা দান করা যাবে না এবং কেউ এর উত্তরাধিকারী হবে না।’ তিনি জমির উৎপন্ন বস্তু অভাবগ্রস্ত, আত্মীয়-স্বজন, দাসমুক্তি, আল্লাহর রাস্তায়, মুসাফির ও মেহমানদের জন্য সদকা করেন। (বুখারি, হাদিস নং ২৭৩৭)</p> <p><strong>উসমান (রা.)-এর </strong><strong>সম্পদ ব্যয় </strong><strong>:</strong> আব্দুর রহমান (রা.) থেকে বর্ণিত, উসমান (রা.) অবরুদ্ধ হলে তিনি উপর থেকে সাহাবিদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বললেন, আমি আপনাদেরকে আল্লাহর শপথ করে বলছি, আমি নবী (সা.)-এর সাহাবিদেরকে আল্লাহর কসম দিয়ে বলছি, আপনারা কি জানেন না যে, রাসুল (সা.) বলেছিলেন, যে ব্যক্তি রূমার কুপটি খনন করে দিবে সে জান্নাতি এবং আমি তা খনন করে দিয়েছি। আপনারা কি জানেন না যে, তিনি বলেছিলেন, যে ব্যক্তি তাবুক যুদ্ধের সেনাদের সামগ্রীর ব্যবস্থা করে দিবে, সে জান্নাতি এবং আমি তা ব্যবস্থা করে দিয়েছিলাম। বর্ণনাকারী বলেন, সাহাবীরা তাঁর কথা সত্য বলে স্বীকার করলেন। (বুখারি, হাদিস নং ২৭৭৮)</p> <p><strong>আয়েশা (রা.)-এর দানশীলতা</strong> : উরওয়া ইবনে জুবাইর আয়েশা (রা.) সম্পর্কে বলেন, তাঁর কাছে (ধন-সম্পদ,অর্থ-কড়ির) যা আসতো সবই তিনি সদকা করে দিতেন। নিজের জন্য তিনি কিছুই জমা রাখতেন না।(বুখারি, হাদিস নং ৩৫০৫ )</p> <p>একদা মুয়াবিয়া (রা.) তাঁর জন্য এক লক্ষ দেরহাম পাঠান। দিন শেষ হওয়ার আগেই তিনি তা অভাবীদের মধ্যে বণ্টন করে দেন। (হিলয়াতুল আউলিয়া ৩/৪৭)</p> <p><strong>আবু তালহা (রা.)-এর প্রিয় বাগান দান :</strong> আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আবু তালহা মদিনায় আনসারদের মধ্যে সবচেয়ে বড় ধনী ছিলেন। সম্পদের মধ্যে বায়রুহা বাগানটি তাঁর খুবই প্রিয় ছিল। এটা মসজিদের (নববির) সামনে অবস্থিত। রাসুল (সা.) তাতে যেতেন এবং এর উৎকৃষ্ট পানি পান করতেন।</p> <p>অতঃপর আয়াত  নাজিল হলো, ‘তোমরা যা ভালোবাস, তা থেকে ব্যয় না করা পর্যন্ত তোমরা কখনো পুণ্য লাভ করবে না’- (আলে ইমরান-৯২)। তখন আবু তালহা (রা.) রাসুল (সা.)-এর কাছে এসে বললেন, হে আল্লাহর রাসুল, আল্লাহ তাঁর কিতাবে বলেছেন, ‘তোমরা যা ভালাবাস, তা হতে যে পর্যন্ত দান না করবে, সে পর্যন্ত তোমরা প্রকৃত পুণ্য লাভ করবে না’। আমার সম্পদের মধ্যে বায়রুহা-বাগান আমার সবচেয়ে প্রিয়। আমি তা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য দান করে দিলাম। এর সওয়াব ও প্রতিদান আমি আল্লাহর কাছে প্রত্যাশা করছি। তাই আপনি তা যেখানে ভাল মনে করেন, খরচ করেন।</p> <p>নবী (সা.) বললেন, ‘বেশ, এটি অত্যন্ত লাভজনক ব্যবসা, এটি অত্যন্ত লাভজনক ব্যবসা। সম্পদের বিষয়ে তোমার কথা আমি শুনেছি এবং আমার কাছে সঙ্গত মনে হচ্ছে, এটা তুমি তোমার আত্মীয়স্বজনদের মধ্যে বণ্টন করে দেবে। আবু তালহা (রা.) বললেন, হে আল্লাহর রাসুল, আমি এমনই করব। অতঃপর আবু তালহা (রা.) নিজের নিকটাত্মীয় ও চাচাত ভাইদের মধ্যে তা বণ্টন করে দেন। (বুখারি, হাদিস নং ২৩১৮)</p> <p><strong>অত্যাধিক দান করতেন জয়নব (রা.) :</strong> আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.)-এর এক স্ত্রী রাসুল (সা.)-কে জিজ্ঞেস করেন, আমাদের মধ্যে সবার আগে (মৃত্যুর পর) আপনার সঙ্গে কে মিলিত হবে? তিনি বললেন, তোমাদের মধ্যে যার হাত সবচেয়ে বেশি লম্বা। তাঁরা একটি বাঁশের কাঠির দিয়ে হাত মেপে দেখা শুরু করে। সওদার হাত সবার হাতের চেয়ে লম্বা বলে প্রমাণিত হয়। কিন্তু পরবর্তীতে দেখা যায়, সবার আগে জয়নব (রা.) মারা যান। তখন আমরা বুঝতে পারলাম যে, দীর্ঘ হাত হওয়ার অর্থ দানশীলতা। আমাদের মধ্যে জয়নব (রা.) সবার আগে রাসুল (সা.)-এর সঙ্গে মিলিত হন। তিনি অত্যাধিক দান করতে ভালবাসতেন। (বুখারি , হাদিস নং ১৪২০)</p> <p> </p>