<article> <p style="text-align: justify;">গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় যেকোনো দেশেই একটি সরকারি বা শাসকদল থাকে, আর থাকে একাধিক বিরোধীপক্ষ। আর যেসব দেশে এমন শাসনব্যবস্থা নেই, সেসব দেশে কারা কিভাবে দেশ চালাবেন তারও একটি কাঠামো থাকে। রাশিয়া, চীন, কিউবা, ভিয়েতনাম, সিঙ্গাপুরের মতো দেশের শাসনব্যবস্থা অন্য অনেক দেশের মতো নয়। আবার যেসব দেশে রাজতন্ত্র বিদ্যমান, সেসব দেশে রাজনৈতিক দলের কোনো অস্তিত্বই নেই।</p> </article> <article> <p style="text-align: justify;">একসময় ফ্রান্স, ইতালি, জাপানের মতো দেশে কোন দল যে কখন সরকারি দল হয় আর কখন বিরোধী দল, তা বলা কঠিন হয়ে যেত। অনেক দেশে কোনো সরকার মাস, দুই মাস টিকতে পারত না। এক সরকার পতন হওয়ার পরের সপ্তাহে অন্য এক সরকার শপথ নিত।</p> <p style="text-align: justify;"><img alt="সরকারবিরোধী আন্দোলনের রকমফের " height="315" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/1.Print/2024/February/04-02-2024/mk/kk-6-2024-02-04-01a.jpg" width="350" />বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার আগে পাকিস্তান যুগেও এমন পরিস্থিতি ছিল।</p> </article> <article> <p style="text-align: justify;">সরকার গঠিত হওয়ার পর তা কয় দিন টিকবে, তা নিয়ে জল্পনাকল্পনা শেষ না হতেই নতুন সরকারের শপথ নিতে দেখা যেত। তারপর পাকিস্তানে শুরু হলো সেনা শাসনের অন্ধকার যুগ, যা এখনো চালু আছে। এই মাসে পাকিস্তানে সেনাবাহিনীর নজরদারিতে একটি সাধারণ নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে। নির্বাচনের আগে সে দেশের অন্যতম রাজনৈতিক নেতা পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ পার্টির প্রধান, সাবেক ক্রিকেটার ইমরান খানকে সে দেশের আদালত একটি মামলায় ১৪ বছর সাজা দিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার অযোগ্য ঘোষণা করেছেন।</p> </article> <article> <p style="text-align: justify;">তাঁর দলের প্রতীকও কেড়ে নেওয়া হয়েছে। ইমরান খান ২০১৮ সালে পাঁচ বছরের জন্য দেশটির প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছিলেন। সেনাবাহিনীর কথামতো না চলায় তাঁর সেই মেয়াদ ২০২২ সালে শেষ হয়ে যায়। এর পেছনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হাত আছে বলে ইমরান খান অভিযোগ করেছেন। মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার নাম উল্লেখ করে তিনি বলেছেন, এই অপকর্মের পেছনে তাঁর হাত আছে।</p> </article> <article> <p style="text-align: justify;">সেই ব্যক্তিকে বলা হয় সরকার উত্খাতের গুরু। বাংলাদেশেও তিনি ২০২৩ সালে একাধিকবার এসে শেখ হাসিনা সরকারকে তাঁদের ভাষায় ‘গণতন্ত্রকে রক্ষা করার জন্য’ কী কী করতে হবে তার সবক দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। শেখ হাসিনার দৃঢ়তার কারণে তিনি বাংলাদেশে খুব বেশি সুবিধা করতে পারেননি। বর্তমানে পাকিস্তানে নির্বাচন নিয়ে যা চলছে, তা নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চুপ।</p> <p style="text-align: justify;">একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের পর একটি স্বাধীন দেশ হিসেবে যখন বাংলাদেশের আবির্ভাব ঘটল, আশা করা গিয়েছিলে যে বাংলাদেশে একটি রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরে আসবে। কিন্তু সাড়ে তিন বছরের মাথায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করে সেই প্রত্যাশার ইতি ঘটিয়েছিল এ দেশের কিছু রাজনৈতিক ব্যক্তি ও বাংলাদেশে আওয়ামী লীগবিরোধী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করা জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল বা জাসদ। তাদের সঙ্গে ছিল একাত্তরের স্বাধীনতাবিরোধী দল ও ব্যক্তিরা। তাদের অন্যতম রাজনৈতিক পুঁজি ছিল ভারতবিরোধিতা। অথচ বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার আগে একাধিক ভারতীয় সংস্থা থেকে তাঁকে হত্যার ষড়যন্ত্র হচ্ছে—এই মর্মে হুঁশিয়ার করলেও তাকে তিনি গুরুত্ব দেননি।</p> <p style="text-align: justify;">বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে এটি পঞ্চম মেয়াদ। এই মেয়াদ পূর্ণ করতে পারলে তিনি হবেন বিশ্বের একমাত্র প্রধানমন্ত্রী, যিনি এত দীর্ঘ সময় ধরে একজন নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেশ শাসন করেছেন। এরশাদ সরকারের পতনের পর থেকে যতবারই দেশে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে, ততবারই দেশে ও দেশের বাইরের বিভিন্ন মহল থেকে চেষ্টা করা হয়েছে আওয়ামী লীগকে কিভাবে রাষ্ট্রক্ষমতার বাইরে রাখা যায়। এরশাদ-পরবর্তী সময়ে ১৯৯১ সালে যখন সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলো, তখন সবাই ধরেই নিয়েছিল আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসছে। ওই সময় বিএনপির কাছে ৩০০ আসনে মনোনয়ন দেওয়ার মতো প্রার্থী ছিলেন না। বেশ কিছু ব্যক্তি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করে মনোনয়ন বাগিয়ে নিয়েছিলেন। তাঁদের একটি উল্লেখযোগ্যসংখ্যক ছিল সরকারের সাবেক আমলা, অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা আর অন্য পেশার মানুষ। আর বেশ মুনশিয়ানার সঙ্গে বিএনপি গড়ে তুলেছিল জামায়াতের সঙ্গে গোপন আঁতাত। অন্যদিকে প্রশাসনে ছিল সাবেক দুই সেনা শাসক জিয়া ও এরশাদের আমলে নিয়োগ পাওয়াদের আধিক্য। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ছিল ক্ষমতায় চলে আসার স্বপ্নবিলাস। ফল যা হওয়ার, তা-ই হয়েছে। নির্বাচনে বিএনপি জয়ী হয়ে খালেদা জিয়ার হাত ধরে রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়। সেই মেয়াদে বিএনপি বেশ ফুরফুরে মেজাজে রাষ্ট্র পরিচালনা করছিল। ধাক্কাটা খেল মাগুরা আর ঢাকা-১০ আসনের উপনির্বাচন নিয়ে। এরপর আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে দেশব্যাপী তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তনের আন্দোলন শুরু হয়।</p> <p style="text-align: justify;">১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি বিএনপি আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের তীব্র গণ-আন্দোলনের মুখে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করে দুই মাসের মাথায় পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জয়ী হয়ে সরকার গঠন করলেও বিএনপি-জামায়াত জোট প্রায় দুই বছর সরকারকে নির্বিঘ্নে দেশ পরিচালনা করতে দেয়নি। নানা অজুহাতে হরতাল, শ্রমিক ধর্মঘট, অবরোধ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হানাহানি ছিল নিত্যদিনের ঘটনা। ২০০১ সালে মেয়াদ শেষ হয়ে এলে আওয়ামী লীগ শান্তিপূর্ণভাবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করে। এবার দেশের মানুষ দেখল তথাকথিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আওয়ামী লীগকে ক্ষমতার বাইরে রাখার এক সূক্ষ্ম পরিকল্পনার সফল বাস্তবায়ন। ২০০৬ সালে মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে বিএনপি-জামায়াত জোট শুরু করল ক্ষমতাকে দীর্ঘায়িত করার নানা ধরনের ফন্দিফিকির ও পরিকল্পনা। আবারও আওয়ামী লীগের আন্দোলন। তারপর এক-এগারোর সরকার। সংবিধান লঙ্ঘন করে জোরপূর্বক তাদের দুই বছর অবস্থান। আবারও আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে আন্দোলনের পর ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে নির্বাচন হয়। বিপুল ভোটে জয়ী হয়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফিরে আসে। এটি ছিল দেশের রাজনীতিতে একটি টার্নিং পয়েন্ট।</p> <p style="text-align: justify;">২০০৯ সালে শেখ হাসিনা দ্বিতীয়বারের মতো সরকার গঠন করার পর দেশের রাজনীতিতে একটি ভিন্ন ধারার পরিবর্তন লক্ষ করা যায়। কিন্তু যে বিএনপির জন্ম ক্ষমতায় থেকে, সেই বিএনপির কাছে ক্ষমতার বাইরে থাকাটা কেমন জানি অসম্ভব মনে হয়। তারা আন্দোলনের নামে দেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির চেষ্টা করে। এরই মধ্যে দেশের সর্বোচ্চ আদালত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে সংবিধানের মৌলিক কাঠামো ও গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার পরিপন্থী বলে ২০১১ সালে তা বাতিল করে দেয়। সংবিধান তার আগের অবস্থায় ফিরে আসে। এই বিধানের বিরুদ্ধে দেশের উচ্চ আদালতে রিট মামলাটি করেছিলেন জনৈক আবদুল মান্নান ২০০৫ সালে, যখন খালেদা জিয়া ক্ষমতায়। হতাশা নেমে এলো বিএনপির শিবিরে। তাদের দাবি, তারা এই রায় মানে না। শুরু হলো দেশে অশান্তি আর অরাজকতা। ২০১৪ সালের নির্বাচন হতে হবে বাতিল হওয়া তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে। তাদের এই দাবির সঙ্গে গলা মেলাল দেশের কিছু বিভ্রান্ত সুধীজন আর একাধিক মতলবি মিডিয়া। ২০১৪ সালের আন্দোলনের নামে বিএনপি-জামায়াত এ দেশে যা করেছে, তা ছিল এক নজিরবিহীন সন্ত্রাস। কয়েক শ মানুষ মরল আগুনে পুড়ে। দেশের সম্পদ নষ্ট হলো কয়েক শ কোটি টাকার। আর অর্থনীতির ক্ষতি তো হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেল। সে ভয়াবহ দিনগুলো এখনো মানুষের কাছে এক দুঃস্বপ্ন। সব বাধা অতিক্রম করে ২০১৪ সালের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলো। জয় হলো আওয়ামী লীগ ও তার মিত্রদের।</p> <p style="text-align: justify;">২০১৮ সালে বিএনপি তাদের নেতা বদল করে গণফোরামের ড. কামাল হোসেনকে নেতা মানে। মনোনয়ন বাণিজ্যের অসৎ উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের পরিকল্পনা থেকে নির্বাচনে অংশ নিয়ে তারা কয়েক শ কোটি টাকার মনোনয়ন বাণিজ্য করে। সেই নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে তাদের চেষ্টা কিছুটা সফলও হয়েছিল। বিএনপির যে সাতজন সেই নির্বাচনে জয়ী হন, তাঁদের একজন ছিলেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সবাইকে অবাক করে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে তিনি সংসদ সদস্য পদে শপথ নেওয়া থেকে বিরত থাকেন। বাকিরা সংসদে তাঁদের ভূমিকা ভালোভাবেই পালন করছিলেন। কিন্তু হঠাৎ করে ২০২২ সালের ১০ ডিসেম্বর তারেক রহমানের নির্দেশে তাঁরা পদত্যাগ করে অনেকটা নিজের পায়ে নিজেই কুড়াল মারেন। সংসদে থাকলে বিরোধী দল হিসেবে তারা যে ভূমিকা রাখত, তা তাদের হাতছাড়া হয়ে গেল। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে শেখ হাসিনা যদি চাইতেন সংসদ সদস্যদের নিয়ে একটি নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করবেন, সেখানে বিএনপির দু-একজন সদস্য থাকার সম্ভাবনা ছিল। তেমন একটি প্রস্তাব শেখ হাসিনা খালেদা জিয়াকে ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে দিয়েছিলেন। সেই পদত্যাগকারী সদস্যদের মধ্যে যে দু-একজন সদস্য নানা বিষয়ে সংসদে ঝড় তুলতেন, তাঁরা পরবর্তীকালে অনেকটা হারিয়ে গেছেন।</p> <p style="text-align: justify;">২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি নির্বাচনের প্রাক্কালে বাংলাদেশে সরকারবিরোধী আন্দোলনে বেশ কিছু অভিনব বিষয় যুক্ত হয়েছিল। এরই মধ্যে জামায়াত নির্বাচন কমিশনে তাদের নিবন্ধন হারায়। বিএনপির মূল নেতা খালেদা জিয়া দণ্ডিত হয়ে প্রধানমন্ত্রীর বদান্যতায় নিজ বাড়িতে আছেন। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডনে পলাতক। সেখান থেকে তিনি বহুজাতিক কম্পানির কর্ণধারের মতো তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় দল পরিচালনা করার এক অদ্ভুত পদ্ধতি প্রবর্তন করেন, যা তেমন একটি কার্যকর হয়নি। বিএনপির নেতৃত্বে এবার ডান, বাম ও হঠাৎ গজিয়ে ওঠা নানা ধরনের ওয়ান ম্যান পার্টির নেতারা মিলে মোর্চা গঠন করে প্রতিদিন দিন-তারিখ দিয়ে সরকার পতনের ঘোষণা দিয়েছেন। বলেছেন, কখন শেখ হাসিনা ডজনখানেক স্যুটকেস নিয়ে পালিয়ে যাচ্ছেন বা কখন দেশে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হচ্ছে। তাঁদের সঙ্গে যোগ দেন বিদেশে অবস্থান করা বাংলাদেশের কিছু সাংবাদিক, যাঁরা একইভাবে হাস্যকর সব ভবিষ্যদ্বাণী করেন। এটি করার জন্য বিভিন্ন মহল থেকে তাঁদের অর্থায়নও করা হতো।</p> <p style="text-align: justify;">সরকারবিরোধী আন্দোলনে এবার যোগ হয়েছে বিএনপি ও তাদের সমর্থক কিছু সুধীজনের বিদেশিদের কাছে দৌড়ঝাঁপ। তাঁদের আকুতি, যেন যেকোনোভাবে তাদের ক্ষমতার মসনদে বসিয়ে দেয়। তাঁদের মধ্যে দু-একজন আবার ছুটলেন ওয়াশিংটন, নিউ ইয়র্কে। ঘোষণা করা হলো নির্বাচন হবে না, হতে দেওয়া হবে না। যেকোনো মূল্যে তা প্রতিহত করা হবে। ডাক দেওয়া হলো হরতালের। কোনো সাড়া নেই। বলা হলো ঢাকা অবরোধ। কিন্তু ঢাকা তো কোনো দুর্গ শহর নয়। তা অবরোধ করা হবে কিভাবে? তারপর শুরু হলো শক্তিবৃদ্ধির সালসার গুণাগুণ প্রচার করার মতো লিফলেট বিলি। এতেও কাজ হচ্ছে না। আগুন দিল যাত্রীবাহী ট্রেনে। না তাতেও জনগণ নিজের কাজে ব্যস্ত। শুরু হলো কালো পতাকা মিছিল। নির্বাচনের দিন সমাগত। দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহমেদ ঘোষণা করলেন এক অদ্ভুত কর্মসূচি, ‘গণকারফিউ’। না, তাতেও কাজ হলো না। ভোটের দিন যাঁরা ভোট দিতে চেয়েছেন, তাঁরা গিয়ে ভোট দিয়ে এলেন।</p> <p style="text-align: justify;">ভোটের পর হতাশা চরমে। গঠিত হলো মন্ত্রিসভা। কাজ শুরু করল নতুন সরকার। এবার আর এক সার্কাসের পালা। সরকারবিরোধীরা আগেই আবিষ্কার করে ফেলেছিল সব কিছুর পেছনে ভারতের হাত। তা না হলে কি শেখ হাসিনা পশ্চিমের একাধিক শক্তিকে উপেক্ষা করে নির্বাচন করেন? সুতরাং এবার বিরোধী জোটে যোগ হলো ‘ভারতের পণ্য’ বর্জনের আকুতি। তবে ভারতীয় টিভি চ্যানেল চালু রাখা যেতে পারে। না হলে গৃহে অশান্তি। আর চিকিৎসার জন্য ভারতযাত্রা? ওটা তো জীবন-মরণের বিষয়। তা বন্ধ করে কিভাবে? শাহরুখ খানের ছবি রিলিজ হলে? সব কিছুতে রাজনীতি টেনে আনা ঠিক না। ঈদের বাজার করতে যারা কলকাতা-দিল্লি যায়, তাদের কী হবে? আবার একজন একটি মাইক নিয়ে বের হয়ে আওয়াজ তুললেন, ‘ভাই সব, ভারতীয় পণ্য বর্জন করুন। ভারতীয় পণ্য বিক্রি করবেন না।’</p> <p style="text-align: justify;">চীন, রাশিয়া তো খোলামেলাভাবে বলেছিল, বাংলাদেশের নির্বাচন তাদের সংবিধানমতো হবে, তাতে তাদের বলার কিছু নেই। কিন্তু তাদের নিয়ে কোনো কথা নেই। আবার কিছু ভারতীয় মিডিয়া মনে করে, বাংলাদেশে ভারতবিরোধিতা বাড়ছে, যদিও তার সপক্ষে কোনো প্রমাণ নেই। তবে সীমান্তে যখন বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশের সীমান্ত রক্ষীবাহিনী বা গ্রামবাসী মারা যায়, তাতে তো কোনো বাংলাদেশির খুশি হওয়ার কারণ নেই। তিস্তার পানিবণ্টন সমস্যা জিইয়ে রেখে কিছু মানুষকে তো নিয়মিত ভারতবিরোধিতায় উসকে দেওয়া হয়। তবে বাংলাদেশের মানুষ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের সহায়তার কথা কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করে। প্রকাশ্যে বিরোধী দলের ভারতবিরোধিতা এক ধরনের স্টান্টবাজি ছাড়া আর কিছু নয়। অবশ্য এটি স্বীকার করতেই হবে যে এবার সরকারবিরোধী আন্দোলনে এমন কিছু দল দেখা গেছে, কিছুদিনের মধ্যে যাদের বিলুপ্তি ঘটার কথা।</p> <p style="text-align: justify;"><b>লেখক : বিশ্লেষক</b> ও গবেষক।</p> </article>