<p style="text-align: justify;">তাজা ফলমূল বা ফলের রস প্রায় সব মানুষের জন্যই ভালো। আর সেই ফল যত রঙিন হয় ততই ভালো, বিশেষ করে সবুজ হলে। ডায়াবেটিক রোগীর ক্ষেত্রেও কিছুদিন আগ পর্যন্ত তেমনটিই ভাবা হতো। কিন্তু বেশির ভাগ ফলের রসই ডায়াবেটিক রোগীর রক্তের গ্লুকোজ বৃদ্ধির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।</p> <p style="text-align: justify;">আবার সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, কিছু কিছু ফলের রস দীর্ঘদিন নিয়মিত পান করলে টাইপ-২ ডায়াবেটিস হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়।<br /> ফলের রসে কী আছে?<br /> ভিটামিন সি ও ক্যালসিয়াম তো আছেই। তা ছাড়া<br /> ⬤ ২৫০ মিলিলিটার (এক গ্লাস) চিনিমুক্ত কমলার রসে ১০০ ক্যালরি থাকে (একটি প্রমাণ আকারের কমলায় ৬০ ক্যালরি থাকে)।<br /> ⬤ ফ্রুক্টোস (এক ধরনের চিনি) - ১ পাইন্ট (৪৭৩ মিলি) ফলের রসে যে পরিমাণ চিনি থাকে তা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নির্দেশিত ডায়াবেটিক রোগীর প্রতিদিনের চিনির পরিমাণের (প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষদের জন্য ৩০ গ্রাম আর প্রাপ্তবয়স্ক মহিলাদের জন্য ২৪ গ্রাম) চেয়ে বেশি।</p> <p style="text-align: justify;">⬤ আঁশহীনতা ফলের রসে সাধারণত আস্ত ফলের তুলনায় খুব সামান্য পরিমাণই আঁঁশ থাকে। প্রক্রিয়াজাতকৃত ফলের রসে কোনো আঁশ থাকে না বললেই চলে।<br /> এতে কী সমস্যা হয়?<br /> ⬤ এটি ডায়াবেটিস রোগীর রক্তে গ্লুকোজ চটজলদি বাড়িয়ে দেয়। ফলের রসের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স হিসাব করে তার পরিমাপ পেতে পারি।</p> <p style="text-align: justify;">কমলার রসের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স ৬৬-৭৬ (ভাতের ৮৬)।<br /> ⬤ আস্ত ফলের তুলনায় ফলের রসে তো বটেই, আস্ত সবজির তুলনায় সবজির রসেও আঁশ খুব কম থাকে।<br /> ⬤ আঁশ হলো এমন ধরনের শর্করা, যা আমাদের দেহের ভেতরে ভেঙে কোনো গ্লুকোজ তৈরি করে না। অর্থাৎ আঁশগুলো চিনিমুক্ত, তাই এতে ডায়াবেটিক রোগীর রক্তে গ্লুকোজ বাড়ার সম্ভাবনা নেই। তাই ডায়াবেটিক রোগীর জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ।</p> <p style="text-align: justify;">দ্রবীভূত আঁশগুলো রক্তের কোলেস্টেরল কমাতে ভূমিকা রাখে। কমলা, আপেল, নাশপাতি ইত্যাদিতে দ্রবীভূত আঁশ থাকে, কিন্তু এদের রসে নয়।      </p> <p style="text-align: justify;"><strong>সব ফলের রসই কি ডায়াবেটিক রোগীর জন্য ক্ষতিকর?</strong><br /> ফলের রসের চিনির পরিমাণের কথা বাদ দিলে একে ভিটামিন সির উৎস হিসেবে গুরুত্বপূর্ণভাবে বিবেচনা করা যেতে পারে। তবে ফলের রসে যথেষ্ট পরিমাণে সুগার থাকায় হাইপোগ্লাইসেমিয়ায় (রক্তের গ্লুকোজ খুব কমে যাওয়া) দ্রুত রক্তের সুগার বৃদ্ধির জন্য ফলের রস রোগীকে খাওয়ানো উচিত।</p> <p style="text-align: justify;"><strong>ফলের রস কি ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি বৃদ্ধি করে?</strong><br /> ২০১৩ সালের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, সপ্তাহে তিনবার বা তার চেয়ে বেশিবার ফলের রস খেলে ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি ৮ শতাংশ বেড়ে যেতে পারে। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো, নিয়মিত আপেল, নাশপাতি, ব্লুবেরি খেলে ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি কমে। আরো কিছু রঙিন ফল ডায়াবেটিস প্রতিরোধে উপকারী, তবে সবার ওপরে ব্লুবেরি (টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি ২৬ শতাংশ পর্যন্ত কমাতে পারে ব্লুবেরি)। </p> <p style="text-align: justify;"><strong>তাহলে কি ডায়াবেটিক রোগীরা ফলের রস খাবেন না?</strong><br /> অন্যদের জন্য ফলের রস পান বেশ ভালো হলেও ডায়াবেটিক রোগী খুব বেশি ফলের রস খেতে পারবে না। ডায়াবেটিক রোগীদের বরং আস্ত ফল খাওয়া ভালো হবে; এতে কম চিনি, বেশি আঁঁশ থাকে। তবে অবশ্যই সবার ওপরে ব্লুবেরি ও সবুজ আপেল থাকবে। টকজাতীয় অন্যান্য ফলও বেশ উপকারী (আমড়া, বাতাবি লেবু, কাঁচা আম ইত্যাদি)।</p> <p style="text-align: justify;">লেখক<br /> সহকারী অধ্যাপক<br /> এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগ<br /> বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়</p>