<p>দুজনের মধ্যে অনেক মাখামাখি ছিল। একে অন্যকে ছাড়া যেন থাকতেই পারে না। কিছু সময় পরে হয়তো দেখা গেল, সঙ্গী হয়ে উঠেছে চক্ষুশূল! ফলে ব্রেক আপ ছাড়া গতি থাকে না। সম্পর্কের সুখী পরিণতি সব সময়ই কাম্য, কিন্তু এই ব্রেক আপ কি শুধুই কেড়ে নেয়? কিছুই কি দিয়ে যায় না? মনোবিদরা কিন্তু বলছেন, ব্রেক আপ মানুষকে অনেকটা পরিণত করে তোলে। জীবনের বেশ কিছু ধ্রুব সত্যকে সামনে এনে অনেক বাস্তববাদী ও গোছানো মানুষে পরিণত করে।</p> <p>ভালোবাসার সম্পর্ক যখন ক্রমশ খারাপের দিকে যেতে শুরু করে, তার চরম পরিণতি হয় ব্রেক আপ। খুব ঘৃণায় পর্যবসিত না হলে যে কোনো প্রেমের সম্পর্কের ভাঙনই মানুষের মনে হতাশা ও দুঃখের জন্ম দেয়। তিরতিরে অভিমানটুকু হয়তো কারও কারও ক্ষেত্রে থেকে যায় আজীবন। সবচেয়ে কাছের জনের কাছ থেকে পাওয়া এমন আঘাত থেকে কোনোদিনই বের হওয়া যাবে না, এমন ধারণাও হতে থাকে অনেকের। তবে মনোবিদদের মতে, এই সবই খুব সাময়িক। সম্পর্কের ভাঙন যেমন দুঃখজনক, তেমনই তা জীবন সম্পর্কে শিখিয়ে যায় অনেক কিছু। তেমনি কিছু বিষয় জেনে নিন:</p> <p><strong>পারফেক্ট মানুষ বলে কিছু হয় না: </strong>প্রায়ই একটা কথা শুনতে পাওয়া যায়, 'মিস্টার অ্যান্ড মিসেস পারফেক্ট'। যতই শুনে আসুন না কেন, বাস্তবে এর কোনো ভিত্তি নেই। তবু প্রেমের ভালো সময়ে নিজেদের সবাই পারফেক্ট জুটি মনে করে। কিন্তু ব্রেক আপ বুঝিয়ে দিয়ে যায়, একটা মানুষ কখনওই পুরোপুরি সঠিক হতে পারে না। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই প্রেমের সম্পর্কে সঙ্গী দুজন একে অপরের গুণে এতটাই মুগ্ধ থাকে যে দোষগুলো তাদের চোখ এড়িয়ে যায়। আর এটাই একটা সম্পর্কে থাকাকালীন প্রথম ভুল। কিছু দিন সম্পর্কে  থাকার  পর যখন সঙ্গীর দোষগুলো চোখে পড়তে শুরু করে তখনই দেখা দেয় সমস্যা। তাই সম্পর্কের শুরুর দিক থেকেই সঙ্গীর গুণের সঙ্গে সঙ্গে খারাপ দিকটাও বিচার করা উচিত। গুণগুলো মেনে নেওয়ার পাশাপাশি দোষগুলোকেও এড়িয়ে যাওয়া যায় না।</p> <p><strong>দুজনের পছন্দ-অপছন্দে মিল থাকলেই সম্পর্ক স্থায়ী হবে না: </strong>সম্পর্কে সঙ্গী দুজনের মধ্যে পছ্ন্দ-অপছন্দের মিল হলেই যে সেই সম্পর্ক স্থায়ী হবে তার কোনো মানে নেই। সঙ্গীর সব অভ্যেসের সঙ্গে নিজের স্বভাবের সামঞ্জস্য আছে দেখলেই তা স্থায়ী হবে ভেবে ভুল করেন অনেকেই। কোনো পরিস্থিতিতে যদি এক জন উত্তেজিত হয়ে পরেন, সেই ক্ষেত্রে অপর জনের উচিত ঠান্ডা মাথায়  সম্যসার সামাধান করা। এই কারণে অনেক ক্ষেত্রেই দুজন বিপরীতধর্মী মানুষই হয়ে ওঠেন সেরা যুগল। আবার কখনও একই স্বভাবের দুজন অনেক ভালো থাকেন, এটা পুরোটাই পরিস্থিতি, নিজেদের বোঝাপড়া ও বিশ্বাসের উপর নির্ভর করে।</p> <p><strong>সব ক্ষেত্রে নারী-পুরুষ সমতা বজায় রাখা সম্ভব নয়: </strong>আমাদের এই প্রজন্ম সমতায় বিশ্বাসী। অর্থাৎ নারী-পুরুষ একে অপরের কাছে কোনো দিক থেকেই পিছিয়ে নেই এখন। আর এই ধারণা ঢুকে পড়েছে ভালোবাসার সম্পর্কেও। যা সব ক্ষেত্রে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয় না। আর এটাই অনেক সময় সম্পর্কের মাঝে অশান্তির বীজ বপন করে। সঙ্গী দুজনকে তাদের সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে জানতে হবে। দুজনের মধ্যে কারও পক্ষে কোন কাজটা করা সম্ভব, আর কোনটা নয় তা জানা প্রয়োজন। সেইসঙ্গে সমাজ আর পরিবারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখতে হবে। সবার সঙ্গে সম্পর্ক নষ্ট করে মঙ্গলগ্রহে গেলেও আপনারা সুখে থাকতে পারবেন না। এটা প্রমাণিত সত্য।</p> <p><strong>তিক্ত সম্পর্ক থেকে বেড়িয়ে আসতে দ্বিধাবোধ নয়: </strong>একটা সম্পর্ক হঠাৎ করেই খারাপ হয়ে যায় না। তার সূত্রপাত হয় অনেক দিন ধরেই। প্রতিনিয়ত হওয়া অশান্তি দেয় তারই ইঙ্গিত। কিন্তু সম্পর্ক বাঁচিয়ে রাখার তাড়নায় আমরা সেই সব ইঙ্গিতকে এড়িয়ে যাই। কিন্তু পরিস্থিতি সহ্যের বাইরে চলে গেলে তা দুজনের পক্ষেই ক্ষতিকর। তাই ক্ষতিকর ‌সম্পর্ক থেকে তিক্ততা বাড়ার আগেই নির্দ্বিধায় সেই সম্পর্ক থেকে বেড়িয়ে যাওয়া ভালো। একটা ব্রেক আপ কিন্তু সেই কঠিন সত্যকেও মেনে নিতে শেখায়।</p> <p><strong>তৃতীয় ব্যক্তির উপস্থিতি নিয়ে সতর্ক থাকতে হবে: </strong>সম্পর্কে  থাকাকালীন যে তৃতীয় কোনো ব্যক্তিকে ভালো লাগতে পারে। অনেক সময় আমরা ধরেই নিই, সঙ্গীর সঙ্গে দারুণ সম্পর্ক বজায় রাখলে কোনো ফাঁক গলে তৃতীয় কেউ আসতে পারে না। এই ধারণা সব সময় ঠিক নয়। দুজনের মধ্যে কোনো অশান্তি বা সমস্যা ছাড়াও যেকোনো সময় তৃতীয় কেউ ঢুকে পড়তে পারেন সম্পর্কে। তেমন হলে সঙ্গীর সঙ্গে আলোচনা করুন। ঝগড়া-অশান্তিতে না গিয়ে তার সঙ্গে খোলাখুলি আলোচনায় বুঝে নেওয়ার চেষ্টা করুন সেই আকর্ষণের প্রকৃতি। প্রয়োজন মনে হলে সরে আসুন। ভায়োলেন্ট কোনো ঘটনা ঘটাবেন না।</p>