<p>ভারতের সাবেক এমপি ও রাজনীতিবিদ বাবা সিদ্দিকির হত্যাকাণ্ডে নড়েচড়ে বসেছে গোটা মুম্বাই প্রশাসন। অতর্কিত হামলায় এই হত্যাকাণ্ড ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। শনিবার (১২ অক্টোবর) ছেলের বান্দ্রার অফিসের সামনে তিনজন আততায়ী এসে নির্মমভাবে গুলি করে হত্যা করে বাবা সিদ্দিকিকে। একাধিকবার গুলি করা হয় তাকে। বুক এবং পেটে একাধিক ক্ষত হওয়ায় তাকে দ্রুত মুম্বাইয়ের লীলাবতী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়, কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। সেখানেই মৃত্যু হয় তার।</p> <p>মুম্বাইয়ের ক্রাইম ব্রাঞ্চ থেকে জানানো হয়েছে, বাবা সিদ্দিকির দিকে ৬ রাউন্ড গুলি চালানো হয়। এর মধ্যে তিনটি তার দেহে লেগেছে। আর এই ঘটনা যেন আরো একবার বলিউডের সঙ্গে আন্ডার ওয়ার্ল্ডের নিবিড় যোগ এবং শত্রুতার কথা মনে করিয়ে দিল। এখনো একই সুতায় গাঁথা বলিউড ও আন্ডারওয়ার্ল্ড! </p> <p>বলিউড এবং আন্ডারওয়ার্ল্ডের সম্পর্ক বহু বছরের পুরনো। ষাট থেকে আশির দশকের ত্রাশ করিম লালা যার মূল ব্যবসা ছিল কিডন্যাপ, কন্ট্রাক্ট নিয়ে হত্যা করা, মাদকদ্রব্য পাচার করা- তিনিই ছিলেন একসময় বলিউড তারকাদের আস্থার জায়গা। কোনো বিষয়ে বিচার চাইলে সহজ সমাধান পাওয়ার একমাত্র ব্যক্তি। করিম লালা ঈদের সময় তার বাড়িতে বলিউড তারকাদের ডাকতেন। দিলীপ কুমার হেলেনকে নিয়ে গিয়েছিলেন করিম লালার কাছে একটা সমস্যার সমাধান করতে। লালা সেই সময় তার সমস্যা মিটিয়েও দেন বলে শোনা যায়।</p> <figure class="image"><img alt="5" height="290" src="https://www.bollywoodhungama.com/wp-content/uploads/2017/09/Company-to-Haseena-Parkar-This-is-how-Bollywood-has-hero-worshipped-Dawood-Ibrahim-2.jpg" width="400" /> <figcaption><sup><em>দাউদ ইব্রাহিম</em></sup></figcaption> </figure> <p>কিন্তু কিভাবে বলিউডে মাস্তানরা ঢুকেছিল? সেই ইতিহাস বেশ গভীর। জানা যায়, যখন অভিনেতারা ইচ্ছা করে শুটিং পিছিয়ে দিত, শুটিং করত না, তখন এই আন্ডারওয়ার্ল্ডের ডনদের সাহায্য নিয়ে প্রযোজকরা তাদের ভয় দেখাতেন। তবে করিম লালা বা ভরাদ্রজন মুদালিয়র ফিল্ম দুনিয়ায় এভাবে প্রবেশ করলেও নারীদের দিকে তারা ফিরেও তাকাতেন না। কিন্তু হাজী মাস্তান সুন্দরী অভিনেত্রীদের দিকে আকৃষ্ট ছিলেন। তার মধুবালাকে এতই পছন্দ হয় যে তিনি তার মতো একজনকেই বিয়ে করেন, সিনেমায় পয়সা লাগান। কিন্তু দাউদ ইব্রাহিম যখন বলিউডের সঙ্গে যুক্ত হন তখন তিনি আন্ডারওয়ার্ল্ডকে প্রথম করপোরেটাইজ করেন। অভিনেতাদের দুবাই নিয়ে যান শো করতে। ইন্ডাস্ট্রির অনেকেই তার হয়ে কাজ করতে থাকেন।</p> <p>বলিউডের জনপ্রিয় অভিনেতা সঞ্জয় দত্ত বহু হিট সিনেমায় মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করেছেন। তবে আন্ডারওয়ার্ল্ডের সঙ্গেও তার যোগসূত্রের জন্য তিনি বেশ পরিচিত। ১৯৯৩ সালের বিস্ফোরণের সময় সঞ্জয় দত্তের কাছ থেকে বেআইনি অস্ত্র উদ্ধার হয় এবং তাঁর সঙ্গে ছোটা শাকিলের কথোপকথন প্রকাশ করে মুম্বাই পুলিশ। গ্রেপ্তার হন সঞ্জয় দত্ত। এই ঘটনার সময় সঞ্জয় দত্তকে জঙ্গি তকমা দেওয়া হয়। বহু বছর ধরে সঞ্জয় দত্ত জেল খেটেছিলেন। ২০১৬ সালে তিনি জেল থেকে মুক্তি পান।</p> <p>বলিউডের ভাইজান সালমান খানের নামের সঙ্গে প্রায়শই দাউদ ইব্রাহিম, ছোটা শাকিল ও গুরু সাতামের নাম শোনা যায়। শোনা যায় যে সালমান খান আগে থেকেই ১৯৯৩ সালে মুম্বাই বিস্ফোরণ সম্পর্কে আগাম জানতেন। গুজব রটেছিল যে অক্ষয় ও টুইঙ্কলের সঙ্গে আন্ডারওয়ার্ল্ড ডনের যোগ রয়েছে। তাদের দুজনকে দাউদ ইব্রাহিমের পার্টিতে দেখা গিয়েছিল। যদিও পরে দুজনই এই অভিযোগ উড়িয়ে দেন। বলিউডের চুলবুলি নায়িকা মমতা কুলকার্নির সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে ওঠে আন্ডারওয়ার্ল্ড ডন বিক্রম গোস্বামীর। শোনা যায় যে ওই ডনের সঙ্গে সংসার পাতবেন বলে মমতা তার সিনেমার ক্যারিয়ার ছেড়ে দিয়েছিলেন। কেনিয়ায় এই যুগল গ্রেপ্তারও হন।</p> <p>একসময় বলিউডে আন্ডারওয়ার্ল্ডের আধিপত্য বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে চাপ দিয়ে টাকা আদায়ের প্রবণতাও বেড়ে যায়। দাউদ ইব্রাহিম বলিউডের জনপ্রিয় সুরকার গুলশান কুমারের কাছে মোটা অর্থ চাইলে গুলশান কুমার তা দিতে অস্বীকার করেন। ১৯৯৭ সালে টি-সিরিজ কর্ণধারকে দিনের আলোয় গুলি করে খুন করা হয়। বলা হয় যে এই ঘটনায় আবু সালেমের প্রত্যক্ষ মদদ ছিল। সেই থেকে আন্ডারওয়ার্ল্ডের ডনদের ভয়ে টাকা দিতে কার্পণ্য করতেন না বলিউড তারকারা। আর এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রথম সরব হন অভিনেত্রী প্রীতি জিনতা। তার পুরুষ সহকর্মীরা মুখে কুলুপ এঁটে রাখলেও তিনি আওয়াজ তোলেন। পরবর্তী সময়ে মুম্বাই পুলিশের দক্ষতায় দাউদ এবং ছোট রাজন ধীরে ধীরে বলিউডকে থ্রেট করা, চাপ দিয়ে টাকা আদায় করা বন্ধ করে দেন।</p> <figure class="image"><img alt="5" height="711" src="https://static.toiimg.com/photo/96532795/96532795.jpg" width="400" /> <figcaption><sub><em>কুখ্যাত গ্যাংস্টার লরেন্স বিষ্ণোই</em></sub></figcaption> </figure> <p>এখনো বলিউডে আন্ডারওয়ার্ল্ডের আধিপত্য রয়েছে। আর সেই সঙ্গে বাবা সিদ্দিকির মতো ভিআইপি ব্যক্তিদের হত্যাকাণ্ডের ঘটনাও ঘটছে। ভীতির সঞ্চার করছে তারকাদের মনে। বাবা সিদ্দিকির হত্যাকাণ্ডে অভিনেতা সালমান খানের জীবনাশঙ্কা নিয়ে তৎপর পুলিশ। বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে অভিনেতার নিরাপত্তা। বাবা সিদ্দিকির হত্যার জন্য পুলিশ বিষ্ণোই গ্যাংকে দায়ী করছে। ইতিমধ্যে বিষ্ণোই গ্যাংয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একজন এই হত্যার দায় স্বীকারও করেছে। পুলিশ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে এরই মধ্যে। সেই সঙ্গে সালমান খানের নিরাপত্তার বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। বলিউড আন্ডারওয়ার্ল্ডের কালো ছায়া থেকে মুক্ত হোক এমনটা যেমন চাইছেন বলিউডপ্রেমীরা। তেমনি সালমান খানও নিরাপদ থাকুক, সেই প্রত্যাশাই করছেন তার কোটি কোটি অনুসারী।</p>