<p>দুটি পোস্টারেই ফুটে উঠেছে দুই আওয়ামী লীগ নেতার চরিত্র। একজন খুলনা সদর থানা আওয়ামী লীগ ও জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম। অন্যজন খুলনা সিটি কর্পোরেশনের সাবেক কাউন্সিলর জেড এ মাহমুদ ডন। ৫ আগস্টে পট পরিবর্তনের সাথে সাথে ওই দুই নেতা চলে যান আত্মগোপনে। ইতোমধ্যে একজন হারিয়েছেন আইনজীবী সমিতির সভাপতির পদ। অন্যজন কেসিসির ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদ। তাদের দুজনকে নিয়ে পোস্টারে ছেয়ে গেছে নগরীর দেয়াল।</p> <p>সাইফুল ইসলামকে নিয়ে সাঁটানো পোস্টারের ছবিতে তাকে দেখা যায় শটগান হাতে কোট-টাই পরিহিত অবস্থায়। পাশে কয়েকজন সহকর্মী। ওপরে লেখা ‘আপনি আইনজীবীদের কলঙ্ক, আপনি খুলনাবাসীর কলঙ্ক- হাইকোর্ট।’ সচেতন খুলনাবাসী নামে ওই পোস্টারের ছবির নিচে লেখা আছে ‘অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী এড. সাইফুলকে ধরিয়ে দিন।’</p> <p>তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, সাম্প্রতিক ছাত্র-জনতার আন্দোলনের চূড়ান্ত মুহূর্তে ৪ আগস্ট নগরীর যশোর রোডস্থ শঙ্খ মার্কেট সংলগ্ন আওয়ামী লীগ অফিসে হামলা চালায় বিক্ষুব্ধ জনতা। খবর পেয়ে অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম শটগান নিয়ে ছাত্র-জনতার ওপর গুলি চালান। এরপর আরও ক্ষিপ্ত হয় ছাত্র-জনতা। এ ছাড়া আওয়ামী লীগ অফিসের সামনে দিয়ে মিছিল যাওয়ার সময়ও মিছিল লক্ষ্য করে পার্টি অফিস থেকে গুলি ছোড়ার অভিযোগ পাওয়া যায়। হামলায় নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম ডি এ বাবুল রানা ও নগর যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক শেখ শাহজালাল সুজন আহত হন। তাদেরকে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তির পর কোনো এক রাতে হাসপাতাল ছাড়েন দুজনই। তাদের দুজনের এখনও যেমন হদিস মিলছে না তেমনি প্রকাশ্যে অস্ত্র ব্যবহারকারী অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলামও ৫ আগস্টের পর থেকে আছেন আত্মগোপনে।</p> <p>জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সংশ্লিষ্ট শাখা বলছে, ৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত যেসব বৈধ অস্ত্রধারী অস্ত্র জমা দেননি তাদের অস্ত্রগুলি অবৈধ হিসেবে ঘোষিত হয়েছে। তবে অ্যাডভোকেট সাইফুলের শটগানটি নির্দিষ্ট সময়ে জমা হয়েছে কি না জানতে চাইলে খুলনার জেলা প্রশাসক মো. সাইফুল ইসলাম এড়িয়ে যান। তিনি বলেন, ‘বিষয়টি ব্যক্তিগত, এ তথ্য পাবলিকলি দেওয়া ঠিক হবে না।’ তবে যেসব লাইসেন্সধারী নির্দিষ্ট সময়ে অস্ত্র জমা দেননি তাদের অস্ত্রগুলি অবৈধ ঘোষিত হয়েছে। যদিও খুলনার কেউ দেশের অন্য কোনও জেলায় অস্ত্র জমা দিয়েছেন কি না সেটি এখনও যাচাই-বাছাই চলছে।</p> <p>অন্যদিকে সাবেক কাউন্সিলর ডনের ছবি দিয়ে সম্প্রতি পোস্টার সাঁটানো হয়েছে নগরীর বিভিন্ন দেওয়াল ও লাইট পোস্টে। যেখানে ফাঁসির দড়িবেষ্টিত ডনকে দেখানো হয় বড় করে। এর পাশাপাশি সহযোগী হিসেবে রয়েছে আরও ১১ জনের ছবি। এদের হাতে খুন হয়েছেন আলামিন নামের এমন একজন। পোস্টারে নৃশংসতার কিছু চিত্রও রয়েছে। আলোচিত আলামিন শেখ হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে উল্লেখ করা হয় সাবেক কাউন্সিলর ডন ও তার সহযোগীদের। এজন্য তাদের ফাঁসির দাবি করা হয় পোস্টারে। ডনের সহযোগীরা হলেন- রাসেল শেখ, মেহেদী, লাবু, রিয়াজুল, হেলাল, আলম, মিরাজ, চান্দু, আতা, মনি ও তরিক।</p> <p>পোস্টারে লেখা আছে ‘খুলনার ২৪ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জেড এ মাহমুদ ডন, মাদক সম্রাট, ভূমি দস্যু ও খুলনার কুখ্যাত সন্ত্রাসীর নির্দেশে তার বাহিনী নৃশংসভাবে আলামিনকে হত্যা করে। এই বাহিনীর সকলেই এখনো আলামিনের পরিবারকে হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। ২৮, ২৭ ও ২৪ নং ওয়ার্ডবাসী এই সকল আসামিদের ফাঁসি চাই দিতে হবে।’</p> <p>গত ৮ জুলাই রাতে আলামিন নামের একজনকে ধরে নিয়ে পূর্ব বানিয়াখামার লোহার গেট সংলগ্ন মামুনের রিকশার গ্যারেজের মধ্যে নিয়ে চাপাতি, রাম-দা, লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয় বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ।</p> <p>উল্লেখ্য, কেসিসির ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ছিলেন জেড এ মাহমুদ ডন। মূলত অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম ও জেড এ মাহমুদ ডন একই ওয়ার্ডের একই পাড়ার বাসিন্দা। গত বছর (২০২৩) ১২ জুন অনুষ্ঠিত কেসিসি নির্বাচনে ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদে প্রার্থিতা পরিবর্তন হওয়ায় ডনকে দেওয়া হয় ২৪ নম্বর ওয়ার্ডে। বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নেওয়ায় ওই ওয়ার্ডের তৎকালীন কাউন্সিলর শমসের আলী মিন্টু প্রার্থী হননি। ফলে একক প্রার্থী হিসেবে ডন নির্বাচিত হন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়।</p>