<p style="text-align:justify">দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে গতকাল শনিবার দুপুর ১টায় বন্যার সর্বশেষ পরিস্থিতিতে জানানো হয়, ১১ জেলায় ছয় লাখ ৯৬ হাজার ৯৯৫টি পরিবার এখনো পানিবন্দি। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা ৫৪ লাখ ৫৭ হাজার ৭০২। এখনো আশ্রয়কেন্দ্রে রয়েছে তিন লাখ ৯৩ হাজার ৩০৫ জন। দেশের উত্তর-পূর্ব, দক্ষিণ-পূর্ব ও পূর্বাঞ্চলে গতকাল পর্যন্ত বন্যায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৫৯ জনে দাঁড়িয়েছে।</p> <p style="text-align:justify">মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, চট্টগ্রাম, হবিগঞ্জ, সিলেট, খাগড়াছড়ি ও কক্সবাজার জেলার বন্যা পরিস্থিতি সম্পূর্ণ স্বাভাবিক হয়ে গেছে। মৌলভীবাজার ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার পরিস্থিতিরও উন্নতি হয়েছে। এ ছাড়া কুমিল্লা, ফেনী, নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুর জেলার বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে।</p> <p style="text-align:justify">কুমিল্লা, চাঁদপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ কয়েকটি জেলার আশ্রয়কেন্দ্র থেকে ঘরে ফিরতে শুরু করেছে মানুষজন। তবে নোয়াখালীর আশ্রয়কেন্দ্রগুলোর বেশির ভাগ মানুষই নিজ ঘরে ফিরতে পারেনি। কালের কণ্ঠ’র নিজস্ব প্রতিবেদক ও জেলা প্রতিনিধিরা জানান—</p> <p style="text-align:justify"><strong>কুমিল্লা : </strong>দ্রুতগতিতে পানি নামতে শুরু করায় অপেক্ষাকৃত উঁচু এলাকার লোকজন বাড়ি ফিরতে শুরু করেছে। তবে নিচু এলাকার আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে এখনো অনেকে রয়ে গেছেন। গতকাল শনিবার বিকেলে জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, যেসব এলাকা উঁচু সেসব স্থানের প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার মানুষ গত ২৪ ঘণ্টায় আশ্রয়কেন্দ্র ছেড়ে বাড়ি গেছেন।</p> <p style="text-align:justify">জেলার ১৪টি উপজেলার মধ্যে ১৩টির বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও ব্রাহ্মণপাড়ায় এখনো তেমন উন্নতি হয়নি। গতকাল নাঙ্গলকোট উপজেলার জোড্ডা বাজার পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয় ও আলিম মাদরাসা আশ্রয়কেন্দ্রে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এখনো ৫০ জনের মতো রয়েছে। দুই দিন আগেও এই দুই কেন্দ্রে প্রায় পাঁচ শ মানুষ ছিল।</p> <p style="text-align:justify">জোড্ডার উত্তর ইউনিয়নের সব আশ্রয়কেন্দ্র প্রায় খালি হয়ে গেছে। উপজেলার অন্যান্য আশ্রয়কেন্দ্র থেকেও মানুষজন কমতে শুরু করেছে।  এ ছাড়া লালমাই, কুমিল্লা সদর দক্ষিণ, বরুড়া ও লাকসাম—এই উপজেলাগুলোর আশ্রয়কেন্দ্র থেকে বেশি মানুষ ঘরে ফিরতে শুরু করেছেন। </p> <p style="text-align:justify"><strong>চাঁদপুর : </strong>ধীরগতিতে পানি নামার সঙ্গে দৃশ্যমান হচ্ছে নষ্ট হওয়া কিংবা ভেঙে পড়া বসতবাড়ি, সড়কগুলোর ক্ষতচিহ্ন। বিশেষ করে চাঁদপুর সেচ প্রকল্পের ভেতরের ছয়টি উপজেলা এবং শাহরাস্তি উপজেলার দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের দুটি ইউনিয়নে এমন চিত্র।</p> <p style="text-align:justify">শাহরাস্তি উপজেলার চিতৌষী পূর্ব ও চিতৌষী পশ্চিম ইউনিয়নের ২০টি গ্রামের চার হাজার পরিবার জলাবদ্ধতার শিকার হয়। চিতৌষী পশ্চিম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জোবায়ের কবির বাহাদুর বলেন, তাঁর ইউনিয়নে এখনো চারটি আশ্রয়কেন্দ্রে ২০০ পরিবার অবস্থান করছে। চাঁদপুরে শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভবনকে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা করা হয়। সেগুলোতে ছয় হাজার ২৫২টি পরিবার আশ্রয় নিয়েছে।</p> <p style="text-align:justify"><strong>ব্রাহ্মণবাড়িয়া :</strong> কসবা ও আখাউড়া উপজেলায় বন্যার পানি একেবারে নেমে গেছে। এসব এলাকার ঘরে ফেরা বন্যার্তরা এখন ত্রাণ নয়, ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার মতো সহায়তা চায়।</p> <p style="text-align:justify"><strong>নোয়াখালী : </strong>জেলা শহরে এখনো হাঁটু পানি, ডুবে আছে গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো। মূলত খাল-নালা দখল ও অপরিকল্পিত ড্রেনেজব্যবস্থার কারণে নামছে না বন্যার পানি। পানি না কমায় জেলার আট উপজেলায় এক হাজার ২৬৯টি আশ্রয়কেন্দ্র থেকে বেশির ভাগ মানুষই নিজ ঘরে ফিরতে পারেনি। উল্টো অনেকের ঘরে জমা পানি দূষিত হয়ে দুর্গন্ধ হয়ে পড়ায় গতকাল সেনবাগ ও বেগমগঞ্জের কয়েকটি আশ্রয়কেন্দ্রে কিছু লোক নতুন করে যোগ হয়েছে।</p> <p style="text-align:justify">ভুক্তভোগীরা বলছে, জেলা শহরের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ইসলামিয়া খাল, ছাগলমারা খাল, গাবুয়া খাল ও দত্তেরহাট খাল দিয়ে সদর উপজেলার পানি নিষ্কাশন হয়। কিন্তু এসব খাল অবৈধ দখল হওয়া ও খাল খননে অনিয়মের কারণে বন্যার পানি নামছে না। তা ছাড়া শহরেও আধুনিক ড্রেনেজ ব্যবস্থাপনা নেই।</p> <p style="text-align:justify">গতকাল বেগমগঞ্জ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, চারতলা ভবনের পুরোটাতেই বানভাসিরা থাকছে। তারা জানায়, নিজেদের ঘরে এখনো হাঁটু পানি, কবে যে ফিরতে পারবে, তা জানে না। কাঁচা ঘরগুলো পানিতে ধসে খুবই নাজুক অবস্থায় পড়ে আছে। বাড়ির হাঁস-মুরগি সব মরে গেছে। পুরুষ সদস্যরা মাঝে মাঝে নৌকা দিয়ে বাড়িঘর দেখে আসেন।</p> <p style="text-align:justify">সেনবাগের ছাতারপাইয়া স্কুলে গতকালও কয়েকটি পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। তাদেরই একজন কৃষক সলিম উল্যা জানান, তাঁর ঘরের পানি সামান্য একটু কমেছে। পানি খারাপ হওয়ায় গায়ে চুলকানি শুরু হয়েছে। অবস্থা খারাপ দেখে তিনি পরিবার নিয়ে এখানে উঠেছেন।</p>