<p>বৃষ্টি এলেই পানি বাড়বে—এমন শঙ্কা পিছু ছাড়ছিল না। বন্যার পানিতে দালান-ঘর তলিয়ে যাওয়ায় ছাদে আশ্রয় নেওয়া সাত সদস্যের পরিবারে এমন শঙ্কা। তবে সেই বৃষ্টির পানিই যেন আশীর্বাদ হয়ে এলো। বৃষ্টির পানিতে ক্ষুধা মেটালেন তারা। ভয়ের বৃষ্টিতে হলো ক্ষুধার জয়। ঘটনাটি বন্যা দুর্গত এলাকা ফেনীর। স্থানীয় ব্যবসায়ী মো. হারুণ, সিঙ্গাপুরপ্রবাসী মো. সাহাব উদ্দিন আহমেদ ও ঢাকার ব্যবসায়ী মো. রাসেলের পরিবারের এমন পরিস্থিতি। পরিবারের সব সদস্যরা এখনো কে কোথায় আছেন নিশ্চিত নয়। অনেক চেষ্টা করেও সবাই একত্র হতে পারেনি।<br />  <br /> স্বজনদের একাধিক সূত্র জানায়, চার দিন ধরে তারা বৃষ্টির জমানো পানি আর মুড়ি খেয়ে বেঁচে আছে। এর মধ্যে রয়েছে ৮০ বছরেরও বেশি বয়সী এক বৃদ্ধা। পানি কমতে শুরু করলেও একতলা বাড়ির অর্ধেকটা এখনো ডুবে থাকায় ছাদ থেকে নামা সম্ভব হয়নি।</p> <p>বন্যা নিয়ে ভয়ংকর অভিজ্ঞতা এ পরিবারের সদস্য মো. রাসেলের। খাবারের সন্ধানে এক ভাইয়ের বাড়িতে আসতে প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকা সাঁতরে পার হয়েছেন। বাকি পাঁচ কিলোমিটার পথের বেশির ভাগ এসেছেন নৌকায় করে। তাও বেশ অনুরোধ করে নৌকায় উঠতে হয়। কিছু পথ পানি মাড়িয়ে হেঁটে আসেন তিনি।</p> <div class="d-flex justify-content-center"> <div class="col-12 col-md-10 position-relative"><strong>আরো পড়ুন</strong> <div class="card"> <div class="row"> <div class="col-4 col-md-3"><img alt="বন্যায় বিশুদ্ধ পানির অভাব, যে উপায়ে পানি শোধন করবেন" height="66" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/2024/08/25/1724592665-4918d41d16674f5fcc359155920ea877.jpg" width="100" /></div> <div class="col-8 col-md-9"> <p>বন্যায় বিশুদ্ধ পানির অভাব, যে উপায়ে পানি শোধন করবেন</p> </div> </div> </div> <a class="stretched-link" href="https://www.kalerkantho.com/online/lifestyle/2024/08/25/1418654" target="_blank"> </a></div> </div> <p>সাত কিলোমিটারের পথ পাড়ি দিতে রাসেলের সময় লাগে ছয় ঘণ্টারও বেশি সময়। নিজ গ্রাম মৌটুবি ইউনিয়নের বাঘাইয়া থেকে ফেনী পৌর এলাকার এসএসকে রোডে ভাইয়ের বাড়িতে এসে দেখেন পুরো শরীর সাদা হয়ে গেছে। ভাবির সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। প্রবাসী সাহাব উদ্দিনের স্ত্রী ও সন্তান ঢাকা থেকে ফেনী শহরের বাড়িতে এসে আটকা পড়ে বন্যার পানির কারণে। কয়েক ঘণ্টা থাকার পর আবার বাড়ি যাওয়ার কথা বলে বের হলেও গত দুদিন ধরে রাসেলের খোঁজ মিলছে না বলে স্বজনদের একাধিক সূত্র জানায়।   </p> <p>বন্যা পরিস্থিতি অবনতি হচ্ছে জেনে ঢাকা থেকে পরিবার নিয়ে ছুটে এসেছিলেন মো. রাসেল। তবে ঘুনাক্ষরেও টের পাননি ফেনীর এ অবস্থা। শহরে এসে পৌঁছলেও বাঘাইয়া গ্রামে যেতে গিয়ে বাঁধে বিপত্তি। পানির বেগ বেশি থাকায় তিনি স্ত্রী সন্তানদেরকে নিয়ে রওয়ানা হন বোনের সিলনিয়া গ্রামে। সেখানেও পানি থাকায় যাওয়া হয়নি। পরে অপেক্ষাকৃত উঁচু জায়গায় আরেক বোনের বাড়িতে তাদেরকে রেখে আবার ছুটে যান বাঘাইয়া গ্রামে মা আনোয়ারা বেগম, ভাই মো. হারুণসহ অন্যদের কাছে। </p> <p>এরই মধ্যে পানি বেড়ে একতলা সমান হয়। বাড়ির সবাই আশ্রয় নেয় ছাদে। ২১ আগস্ট থেকে চলে এ অবস্থা। ছাদে থাকা লাকড়ি রাখার ঘরে অবস্থান নেয় তারা। কিন্তু ঘরে খাবার বা অন্য কিছুই ছিল না। অনেক চেষ্টা করেও সহায়তাকারীদের কাছ থেকে খাবার নিতে পারেননি। বিদ্যুৎ ও মোবাইল ফোন নেটওয়ার্ক না থাকায় স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেলে সবার মাঝে আতঙ্ক দেখা দেয়। এরই মধ্যে ২২ আগস্ট বৃষ্টি হলে তারা পানি ধরে রাখে। সাঁতরে ঘরে ঢুকে পানি ধরে রাখার জন্য একটি পাত্র নিয়ে আসে তারা। ২৩ আগস্ট সহায়তা হিসেবে তাদের কাছে পৌঁছর মুড়ি।</p> <div class="d-flex justify-content-center"> <div class="col-12 col-md-10 position-relative"><strong>আরো পড়ুন</strong> <div class="card"> <div class="row"> <div class="col-4 col-md-3"><img alt="‘উড়ন্ত নদীর’ কারণে বিশ্বজুড়ে আকস্মিক বন্যা ও ভূমিধস" height="66" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/2024/08/25/1724582989-ec52128845ab3e314763873de08f2677.jpg" width="100" /></div> <div class="col-8 col-md-9"> <p>‘উড়ন্ত নদীর’ কারণে বিশ্বজুড়ে আকস্মিক বন্যা ও ভূমিধস</p> </div> </div> </div> <a class="stretched-link" href="https://www.kalerkantho.com/online/world/2024/08/25/1418599" target="_blank"> </a></div> </div> <p>বানের পানিতে ভাসছে ফেনী। সর্বত্রই হাহাকার। বেঁচে থাকার লড়াইয়ে ব্যস্ত হাজার হাজার মানুষ। উদ্ধারের জন্য আকুতি। সেনাবাহিনীসহ সংশ্লিষ্টরা উদ্ধারকাজকে গুরুত্ব দিচ্ছেন। অনেককে উদ্ধারও করেছেন তারা। তবে এখনো অনেকে পানিতে আটকা পড়ে আছেন। সরকারি সহায়তার পাশাপাশি প্রচুর বেসরকারি সহায়তাও এসেছে ফেনীতে। তবে এসব সহায়তা সঠিকভাবে বিতরণ না হওয়ার অভিযোগও রয়েছে। এ ছাড়া দুর্গম এলাকাগুলোতে লোকজন যেতে পারছেন না বলে এসব খাদ্য সহায়তাও পৌঁছানো যাচ্ছে না। </p> <p>ফেনী সরকারি কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সাবেক ছাত্রী শান্তি কম্পানি রোডের বাসিন্দা জানান, পানিতে আটকা পড়লে তাদেরও খাবারের সংকট দেখা দেয়। কিন্তু অনেক চেষ্টা করেও খাবার পাননি। ছাদে লাল পতাকা উড়িয়ে লাভ হয়নি। কেউ খাবার নিয়ে গেলে জানতে চাইলেন বলে দিয়েছেন তালিকা অনুযায়ী দেওয়া হচ্ছে। তবে শেষ পর্যন্ত দুদিন পর তাদের খাবারের ব্যবস্থা হয় বলে জানান।<br />   <br /> ‘ফেনী ফুডিস’ নামের একটি ফেসবুক পেজ ঘেঁটে দেখা যায়, শত শত আকুতি। পানিতে আটকা পড়া লোকজনকে উদ্ধারের আকুতি বেশি। এ ছাড়া অনেকে সহায়তার করার ইচ্ছা পোষণ করেও পোস্ট দিচ্ছেন। লেখা হচ্ছে নানা নির্দেশনার কথা। </p> <p>রবিবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে ফেনী-সোনাগাজী রোডের আমির উদ্দিন মুন্সীর হাটের নাজমুন তৃষা নামের একজন পেজটিতে একজন লিখেন, ‘এই গ্রুপে লস্করহাটের কেউ আছেন? আমার বোন, তার দুই ছেলে মেয়ের খোঁজ পাচ্ছিনা চার দিন ধরে।’</p> <p>ইনুর নাহার রাফি নামের একজন সন্ধ্যা সাতটার দিকে ছবি পোস্ট করে লিখেন, তার মা-বাবার কোনো খোঁজে পাচ্ছেন না চার দিন ধরে। মো. রাশেদ নামের একজন সকালে লিখেন, ‘ফুলগাজী উপেজলার পুরাতন মুন্সীর হাটের উত্তর শ্রীপুর সৌদিয়া হোটেলের পাটোয়ারি টাওয়ারেও ২৫০ জনেরও বেশি মানুষ অবস্থান করছে। তিন দিন ধরে তারা বন্যার পানি খাচ্ছে।’</p> <p>ফাহমিদা রিশাদ লিখেন, ‘আজিম ধুল মিয়া উচ্চ বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রে অনেক মানুষ খাবার সংকটে আছে। আমার চাচা-চাচীও আছে। চার দিন পর তাদের খোঁজ পেলাম। খাবার দিয়ে সহায়তা করুন।’ আদনান হাসান নামের একজন লিখেন, ‘পশ্চিম সোনাপুরে ত্রান নিয়ে কেউ যেতে পারবেন? ওখানে অনেক মানুষ না খেয়ে আছে।’ </p>