<p>অন্তর্বর্তী সরকারে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার বাঙ্গরা বাজার থানার আন্দিকুট ইউনিয়নের আকুবপুর গ্রামের সন্তান তিনি। এখন ছোট-বড় সবার মুখে আসিফ মাহমুদের নাম। এলাকাবাসীসহ উপজেলার মানুষ তাকে নিয়ে উচ্ছ্বসিত।</p> <p>আসিফ ১৯৯৮ সালে কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার আন্দিকুট ইউনিয়নের আকুবপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। মো. বিল্লাল হোসেন ও রোকসানা বেগম দম্পতির দ্বিতীয় সন্তান তিনি। ২০১৫ সালে ঢাকার নাখালপাড়া হোসেন আলী হাই স্কুল থেকে এসএসসি পাস করেন আসিফ। পরবর্তীতে আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাষাবিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন তিনি। বর্তমানে মাস্টার্সের শিক্ষার্থী আসিফ মাহমুদ। তার পিতা বিল্লাল হোসেন মুরাদনগর উপজেলার আকুবপুর ইয়াকুব আলী ভূইয়া পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে কর্মরত আছেন। তার মাতা রোকসানা আক্তার একজন গৃহিণী। আসিফ মাহমুদ তার পিতা-মাতার একমাত্র পুত্রসন্তান। তার বড় একজন ও ছোট দুজন বোন রয়েছেন।</p> <p>পরিবারের সদস্যদের না জানিয়েই আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। প্রথম দিকে পুলিশের গুলিতে কয়েকজন শিক্ষার্থী মারা যাওয়ার পর তার পরিবার জানতে পারে তিনি আন্দোলনের সমন্বয়ক। তখন আসিফ মাহমুদকে বাড়িতে ফিরে আসতে অনুরোধ করেন বাবা, মা ও বোনেরা। </p> <p>পরিবারের সদস্যদের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে আসিফ বলেন, ‘আমার অনেক ভাই-বোন পুলিশের গুলিতে শহীদ হয়েছেন। আমি আন্দোলন থেকে ফিরে আসব না। হয় গুলি খেয়ে মরব না হয় আন্দোলন সফল করে ঘরে ফিরব।’ </p> <p>আসিফ মাহমুদের ছোট বোন ইফাত জাহান লামিয়া জানান, পাঁচ দিন নিখোঁজের সময় তার মা, বোনসহ পরিবারের সবার অবস্থা অনেক খারাপ হয়ে যায়। ঘরে রান্নাবান্না হয়নি। ঢাকার বিভিন্ন লাশঘরে তাকে খুঁজেছেন।</p> <p>আসিফ মাহমুদের পিতা বিল্লাল হোসেন বলেন, ‘কোটা সংস্কার আন্দোলনে যাওয়ার সংবাদ পেয়ে আমরা আতঙ্কিত হয়ে পড়ি। উৎকণ্ঠা নিয়ে প্রতিদিন আসিফ মাহমুদের সঙ্গে যোগাযোগ করি। কিন্তু ১৯ জুলাই তার সঙ্গে সব যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। তারপর বিভিন্ন যায়গায় তাকে খোঁজ করে পাইনি। তখন আমরা দিশাহারা হয়ে যাই। ২৩ জুলাই ইত্তেফাক পত্রিকায় খবর প্রকাশ হয়, আসিফ মাহমুদকে গুম করা হয়েছে। তারপর আমরা শাহবাগ থানায় নিখোঁজের ডায়েরি করতে গেলে দায়িত্বরত ওসি আমাদের জিডি নেননি। সেখানে থেকে যাত্রাবাড়ী থানায় যাই, সেখানেও একইভাবে আমাদের ফিরিয়ে দেয় পুলিশ। তারপর ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে প্রতিটা ওয়ার্ডে খোঁজ করি কিন্তু আসিফের কোনো সন্ধান না পেয়ে হাসপাতালের লাশঘরে খোজাঁখুজি করেও পাইনি।’ </p> <p>তিনি আরো বলেন, তারপর প্রেস ক্লাবে গিয়ে সংবাদ সম্মেলন করে আসিফের গুমের বিষয়টি দেশবাসীকে জানাই। ২৪ জুলাই হাতিরঝিল এলাকায় আসিফ মাহমুদকে অজ্ঞান অবস্থায় পাওয়া যায়। এ সময় তাকে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে চিকিৎসার জন্য নিলে সেখান থেকে ২৬ জুলাই পুলিশ পরিচয়ে আবারও তাকে তুলে নিয়ে যায়। ২৭ জুলাই ডিবি কার্যালয় থেকে ফোন করে জানায়, আপনার ছেলে ডিবি কার্যালয় আছে এসে দেখে যান। আমি আর আসিফের মা সেখানে গিয়ে দেখা করলে তাদের ছেড়ে দেবে বললেও পরে আর ছাড়েনি। ডিবিপ্রধান হারুন সাহেব আমার থেকে ভিডিও রেকর্ড নিতে চেয়েছিলেন যে সমন্বয়করা আন্দোলন প্রত্যাহারের ঘোষণা স্বেচ্ছায় দিয়েছে, কিন্তু আমি রাজি হইনি। এক দিন পর আবারও ফোন করে আমাদের যেতে বলে তখন তাদের গাড়ি দিয়ে আসিফসহ আমাদের বাড়ি পৌছে দেয়।’ </p> <p>দেশবাসীর নিকট দোয়া চেয়ে তিনি বলেন, ‘আসিফ মাহমুদ ছোটবেলা থেকেই একরোখা ছিল। যেখানে অন্যায় দেখত সেখানেই প্রতিবাদ করত। আসিফ মাহমুদ অন্তর্বর্তী সরকারে উপদেষ্টা হয়েছে। তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথ পালন করতে পারে।’</p> <p>আন্দুকুট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শিমুল বিল্লাল বলেন, ‘মঙ্গলবার থেকে বিভিন্ন এলাকার লোকজন আসিফের বাড়িতে ভিড় করছে। বিভিন্ন জায়গা থেকে অনেকে আমাকে ফোন দিয়ে তাদের খোঁজখবর নিচ্ছেন। আমরা অনেক গৌরবান্বিত বোধ করছি।’</p>