<p style="text-align:justify">‘আগে তো হমানে বেহেই (সকলেই) পাট আবাদ করতো। লাভও বেশি অইতো। সোনার মতো দাম পাওয়া যাইতো। অহন তো এই অবস্থা নাই। পাটের কদর নাই। লস দিয়া আর কত করণ যায়। তারপরও নিজেরার প্রয়োজনের রশি-দড়ি ও পাটখড়ির লাইগ্যা অইলেও কিছু পাট করণ লাগে। সব লোকসান অইলেও পাটখড়িডাই লাভে থাহে।’</p> <p style="text-align:justify">পাট চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলা ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার রাজিবপুর ইউনিয়নের উদয়রামপুর গ্রামের অশীতিপর বৃদ্ধ কৃষক আলতাব হোসেন আলতু মিয়া এসব কথা বলেন।</p> <p style="text-align:justify">তিনি জানান, এক কাঠা (১০ শতক) জমিতে পাট চাষে খরচ হয় অন্তত ৫ হাজার টাকা। প্রতি কাঠায় কমপক্ষে ১শ ২০ কেজি পাট উৎপাদন হয়। বর্তমান বাজারে প্রতি ৪০ কেজি পাটের মূল্য প্রায় ১৮শ টাকা। সেই হিসাবে পাট চাষ করে সাকূল্য খরচ বাদ দিয়ে লাভ শুধুই ওই পাটখড়ি।</p> <p style="text-align:justify">একই গ্রামের কৃষক আলাল হোসেন (৬০) জানান, সার ও ওষুধের দাম বেড়েছে। শ্রমিকদের মজুরিও অনেক বেড়েছে। তবে পানির অভাবে পাটের রঙ ভালো হয় না। </p> <p style="text-align:justify">চরাকোনা গ্রামের মাজেদা বেগম বলেন,‘আমরা কিন্তু পরিশ্রম কম করি না। কিন্তু পাটের মান ভালো হয় না। জাগ দেওয়ার সময়ও ঠিকমতো পানি পাওয়া যায় না। বাজারে এবার পাটের দাম নাই। মূল খরচও উঠবে না। এখন চিন্তায় আছি আগামীতে পাট চাষ করবো কি-না। </p> <p style="text-align:justify">রাজিবপুর ইউনিয়নের দায়িত্ব থাকা উপজেলা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. নুরুল ইসলাম জানান, এই এলাকায় ধান চাষ হয় বেশি। আগের মতো পাট চাষে কৃষকদের আগ্রহ নেই। তারপরও পাট চাষের জন্য কৃষকদের উৎসাহিত করা হয়।</p> <p style="text-align:justify">ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর দেশি, তোষা ও কেনাফ জাতের পাটের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬৫০ হেক্টর। এর মধ্যে তোষা ৩৪০, দেশি ২৪০ ও কেনাফ ৫০ হেক্টর।</p> <p style="text-align:justify">জানতে চাইলে ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রিপা রাণী চৌহান কালের কণ্ঠকে বলেন, যথাযথ পাটের ব্যবহার না থাকায় ও বাজারে মূল্য কম হওয়ায় পাট চাষ করে কৃষকরা খুশি নন। উপজেলা কৃষি অফিস থেকে প্রতিবছর কৃষকদের পাট চাষে উৎসাহিত করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে পাট অফিস থেকে পাটের বীজ সরবহরাহ করা হয়।</p> <p style="text-align:justify">ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা পাট কর্মকর্তা মো. শামীম হাসান কালের কণ্ঠকে বলেন, গত এপ্রিলে ৩০ হাজার কৃষককে প্রশিক্ষণ দিয়ে ৩ হাজার কেজি পাট বীজ দেওয়া হয়েছে। প্রায় ১০ হেক্টর জমিতে এই বীজ বপন করতে পারবে।</p> <p style="text-align:justify">তিনি আরো জানান, খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কথিত যেসব কৃষককে বিনামূল্যে এই বীজ দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে বেশিরভাগই বিফলে গেছে। তারা চাষ না করে বীজগুলি নষ্ট করেছে।</p>