<p style="text-align:justify">চারদিকে অথই পানি, মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছে রংপুরের পীরগাছা উপজেলার ছাওলা ইউনিয়নের চর দক্ষিণ গাবুড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এর তিন পাশে ভাঙন এসে ঠেকেছে ১০ মিটারের মধ্যে। বিদ্যালয় থেকে ভাঙন যখন ৫০০ মিটার দূরে ছিল, তখন থেকে প্রতিবছর বন্যার সময় জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে। এতে নদীতে বিলীন না হলেও ভাঙনঝুঁকিতে রয়েছে বিদ্যালয়টি।</p> <p style="text-align:justify">গতকাল সোমবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দক্ষিণ গাবুড়া গ্রামের ওপর দিয়ে বয়ে গেছে তিস্তা নদী। এই গ্রামটি প্রত্যন্ত অঞ্চলে হওয়ায় যোগাযোগব্যবস্থার পাশাপাশি গড়ে ওঠেনি আধুনিক সুযোগ-সুবিধা। এই গ্রামের তিন ভাগের দুই ভাগ আগেই বিলীন হয়েছে তিস্তায়। বাকি অংশও ভাঙনের কবলে পড়ে ছোট হয়ে আসছে।</p> <p style="text-align:justify">এ গ্রামেই অবস্থিত চর দক্ষিণ গাবুড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ২০১৪ সালে বিদ্যালয়টি ভাঙনের কবলে পড়ে বিলীন হয়েছিল। পরে স্থান পরিবর্তন করে বর্তমান স্থানে নতুন করে ভবন নির্মাণ করা হয়। কয়েক বছরের ব্যবধানে আবারও বিদ্যালয়টি নদীভাঙনের মুখে পড়েছে।</p> <p style="text-align:justify">ভাঙন এখন বিদ্যালয়ের একদম কাছে এসে পৌঁছেছে। বিদ্যালয়ে যাতায়াত ও ভাঙন রোধে স্থানীয় বাসিন্দারা স্বেচ্ছাশ্রমে একটি বেড়িবাঁধ নির্মাণ করেছিল। সেটিও তীব্র স্রোতের কারণে ধসে গেছে। তাই স্থানীয় লোকজন নিজেরাই বাঁধটি রক্ষার শেষ চেষ্টা চালাচ্ছে।</p> <p style="text-align:justify">স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ, সময়মতো উদ্যোগ নিলে বিদ্যালয়ের পাশাপাশি বাড়িঘরও রক্ষা পেত।</p> <p style="text-align:justify">পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় প্রতিবছর ভাঙনের শিকার হচ্ছে নদীপারের বাসিন্দারা। ছাওলার ১০ নম্বর বোল্ডারের পার থেকে আরো তিন কিলোমিটার বোল্ডার দিয়ে বাঁধ নির্মাণ করে নদী শাসন করলে এই গ্রামগুলো রক্ষা পেত। কর্তৃপক্ষ অপরিকল্পিতভাবে ১ নম্বর ও ২ নম্বর বেড়িবাঁধ নির্মাণ করলেও বাঁধের পূর্ব পারের গ্রামগুলো বন্যা ও নদীভাঙনের হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছে না।</p> <p style="text-align:justify">তিস্তা নদীর ভাঙনে বিলীন হয়েছে মকবুল হোসেন, গনি মণ্ডল, জাফর আলী, ছামাদ আলী, খয়বর আলী, কফের উদ্দিন, ছমের আলী, সজব উদ্দিন, আনিছুর রহমানসহ বেশ কয়েকজনের বাড়িঘর।</p> <p style="text-align:justify">নদীভাঙনের শিকার স্থানীয় বাসিন্দা ছমের উদ্দিন বলেন, ভাঙন যখন একটু দূরে ছিল, তখন উদ্যোগ নিলে হয়তো বিদ্যালয়টি রক্ষা করা সম্ভব ছিল। এ বিষয়ে বারবার কর্তৃপক্ষকে জানানোর পরও কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। এখন ভাঙন কাছে আসার পর বালুর বস্তা ফেলার নামে সরকারি টাকা জলে ফেলা হয়েছে।</p> <p style="text-align:justify">বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আকরাম হোসেন বলেন, ভাঙন বিদ্যালয়ের ১০ মিটারের মধ্যে এসেছে। এখন জিও ব্যাগের কারণে বিদ্যালয়টি টিকে আছে। জিও ব্যাগ ধসে গেলে বিদ্যালয়টি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যেতে পারে।</p> <p style="text-align:justify">এ ব্যাপারে পীরগাছা উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আবুল হোসেন বলেন, তিস্তার ভাঙন বিদ্যালয়টির কাছে এসেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন রোধের চেষ্টা করা হয়েছে। তবে এ বছর নতুন করে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।</p> <p style="text-align:justify">রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম বলেন, ‘বিদ্যালয়টি রক্ষায় বিগত বছরে জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছে। আমরা খোঁজখবর রাখছি।’</p>