<p>ফরিদপুরের চরভদ্রাসন উপজেলার পদ্মা নদীর গোপালপুর ঘাটে হঠাৎ যাত্রীদের কাছ থেকে স্পিডবোট ও লঞ্চ পারাপারে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ উঠেছে।</p> <p>যাত্রীদের অভিযোগ যেখানে দুদিন আগেও জনপ্রতি স্পিডবোটের নিয়মিত ভাড়া ছিল মাত্র ১৫০ টাকা ও লঞ্চের ভাড়া ৭০ টাকা করে, সেখানে হঠাৎ করেই আজ যাত্রীদের কাছ থেকে জনপ্রতি স্পিডবোটের ভাড়া নেওয়া হচ্ছে ২০০ টাকা ও লঞ্চের ভাড়া ১০০ টাকা করে।</p> <p>ঘাট সূত্রে জানা গেছে, ২০২২ সালের ১৯ অক্টোবর থেকে বিআইডব্লিউটিএর তত্ত্বাবধানে গোপালপুর-মৈনট নৌপথে চালু হয় লঞ্চ সার্ভিস। কিন্তু স্পিডবোটের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে উপজেলা প্রশাসনের হাতে। একেক সময়ে একেক রকম ভাড়া আদায় করে ঘাট কর্তৃপক্ষ। ঈদ কিংবা যেকোনো উৎসব এলেই ভাড়া বাড়িয়ে দেয়। আবার কোনো কারণ ছাড়াই মাঝে মাঝে বাড়িয়ে দেয় ভাড়া। এ নিয়ে উপজেলা প্রশাসনের কোনো তদারকি নেই বলে অভিযোগ যাত্রীদের।</p> <p>সরেজমিনে শনিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে উপজেলার পদ্মা নদীর গোপালপুর ঘাট ঘুরে দেখা যায়, স্পিডবোটের যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ৫০ টাকাসহ ২০০ টাকা করে ভাড়া নেওয়া হচ্ছে, আর লঞ্চের যাত্রীদের কাছে অতিরিক্ত ৩০ টাকাসহ ১০০ টাকা করে ভাড়া আদায় করা হচ্ছে।</p> <p>অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের বিষয়ে জানতে চাইলে স্থানীয় এবং পার্শ্ববর্তী নগরকান্দা ও ভাঙ্গা উপজেলার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক স্পিডবোট যাত্রী জানান, আমরা এ ঘাট দিয়ে যেখানে আজকে সকালেও ১৫০ টাকা করে স্পিডবোট ভাড়া দিয়ে পার হয়েছি। আর একই ঘাটে বিকেলে ২০০ টাকা করে আমাদের বেশি ভাড়া গুনতে হচ্ছে।</p> <p>তারা বলেন, এটি ঘাট কর্তৃপক্ষের অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা ও দুর্নীতি। তারা যাত্রীদেরকে এক পর্যায় জিম্মি করেই বেশি ভাড়া আদায় করছে। আমরা ঘাট মালিকদেরকে অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়ার বিষয়ে প্রতিবাদ করলেও তারা তা শুনছে না। তারা আমাদের কথা কোনো মূল্যায়নই করছে না। তারা তাদের মনমতো করে যাত্রীদের কাছ থেকে ভাড়া আদায় করে চলেছে।</p> <p>চরভদ্রাসন ইউনিয়নের সবুল্যা মাতুব্বারের ডাঙ্গী গ্রামের রহমান সর্দার বলেন, ‘বাড়ি থেকে বের হয়েছি মেলায় যাওয়ার জন্য, খুবই ভালো লাগছে। তবে বোটের ভাড়া ৫০ টাকা বেশি দিতে হলো। প্রায় সময়ই কারণে অকারণে ভাড়া বাড়িয়ে দেয় ঘাট কর্তৃপক্ষ। বিষয়টি উপজেলা প্রশাসন সঠিকভাবে তদারকি করলে এমন হত না।</p> <p>সংশ্লিষ্ট ঘাট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে জানা যায়, এপার-ওপার গোপালপুর-মৈনটঘাট পদ্মা পারাপারের জন্য প্রতিদিন সন্ধ্যা ৬ পর্যন্ত স্পিডবোট চালানোর সময় নির্ধারণ থাকলেও ঘাট মালিকরা নিয়মের কোনো তোয়াক্কা না করেই ঢাকা জেলার দোহার থানার সানাল ফকিরের মেলা কেন্দ্র করে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের লক্ষ্যে রাত ৯টা পর্যন্ত যাত্রীদেরকে পারাপার করে চলেছে। ফলে এভাবে পদ্মা পারাপারে যাত্রীদের একদিকে যেমন জীবন ঝুঁকি রয়েছে পাশাপাশি তাদের অতিরিক্ত অর্থও গুনতে হচ্ছে।</p> <p>পার্শ্ববর্তী সদরপুর উপজেলার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক স্প্রীডবোট যাত্রী জানান, গত শুক্রবার রাত ৯টার সময় গোপালপুর ঘাট থেকে ২৫০ টাকা ভাড়া দিয়ে আমি ওপার মৈনটঘাটে গিয়েছি। যেখানে রেগুলার ভাড়া থাকে ১৫০ টাকা সেখানে আমাকে নিরুপায় হয়ে ১০০ টাকা অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে পদ্মা পার হতে হয়েছে।</p> <p>স্প্রীডবোট যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ৫০ টাকা করে ভাড়া নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে ঘাটের দায়িত্বে থাকা উপজেলা প্রশাসনের কর্মচারী মো. ইব্রাহিম জানান, আমাদের কাছে আজকের দিনের জন্য উপজেলা প্রশাসনের থেকে ২০০ টাকা করে ভাড়া আদায়ের নির্দেশ আছে। </p> <p>তিনি আরো জানান, যাত্রীদের অতিরিক্ত চাপ সামলাতে ওপার থেকে খালী স্পিডবোট আনতে হচ্ছে। ফলে বোটের তেলের খরচ মেটাতে যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ৫০ টাকাসহ ২০০ টাকা করে ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। তবে, এ সময় তার কাছে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের আদেশের কপি দেখতে চাইলে তিনি তা সাংবাদিকদের দেখাতে পারেন নাই।</p> <p>এদিকে, ঘাটে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের বিষয়ে জানতে চাইলে, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মেহেদি মোর্শেদ জানান, ঘাটে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের বিষয়টি আমার জানা নেই। এ বিষয়টি আমি আপনার কাছ থেকেই জানলাম। আমি এ ব্যাপারে খোঁজ নিচ্ছি।</p> <p>এদিকে, একই ঘটনা ঘটছে গোপালপুর ঘাটের লঞ্চ পারাপারেও। সেখানে রেগুলার জনপ্রতি ৭০ টাকার পরিবর্তে যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ৩০ টাকাসহ ১০০ টাকা করে বেশি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে বলে যাত্রীদের অভিযোগ।</p>