<p>নবীগঞ্জে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে ফসলি জমি থেকে মাটি কাটার মহোৎসব চলছে। অবৈধ মুনাফার জন্য এসব কাজে সহযোগিতা করছেন জনপ্রতিনিধি, সরকারদলীয় রাজনৈতিক নেতারা। ইটভাটার মালিকরা প্রভাবশালী হওয়ায় প্রশাসন মাটি কাটার বিষয় জানার পর রহস্যজনক কারণে পালন করা হচ্ছে নীরবতা, যেন দেখার কেউ নেই। </p> <p>নবীগঞ্জ উপজেলার বেশ কয়েকটি ইউনিয়নে এক্সকাভেটর ও শ্রমিক দিয়ে আবাদি জমির উপরিভাগের মাটি কেটে শতাধিক ট্রাক্টর দিয়ে নেওয়া হচ্ছে বিভিন্ন ইটভাটায়। এভাবে জমির মাটি কাটার ফলে আবাদি জমির উৎপাদন হ্রাস পাচ্ছে। পাশাপাশি নষ্ট হচ্ছে মাটির জৈব গুণাগুণ। নিচু হয়ে যাচ্ছে কৃষিজমি। ভারসাম্য হারাচ্ছে পরিবেশ। </p> <p>নবীগঞ্জ উপজেলার এনাতাবাদ, বাংলাবাজার, রতনপুর, মাটভাঙ্গা দাগা নোয়াগাঁও গ্রামের ফসলিজমি থেকে মাটি কেটে নেওয়া হচ্ছে নবীগঞ্জের গোল্ড ব্রিকফিল্ড, বিজনা ব্রিকফিল্ড, মাস্টার ব্রিকফিল্ডে। এসব ভাটার চাহিদা মেটাতে ফসলি জমি থেকে নির্বিচারে আবাদি জমির উপরিভাগের মাটি কাটা হচ্ছে। </p> <p>বসতবাড়ি বাড়ার সঙ্গে বেড়েছে ইটের চাহিদা। ভাটার মালিকরা হয়েছেন বেপরোয়া। অভাবী জমির মালিকদের অর্থের লোভে ফেলে কেটে নিচ্ছেন আবাদি জমির মাটি। অবাধে মাটি কাটার ফলে এসব ইউনিয়নের আবাদি জমি নিচু হয়ে গেছে। </p> <p>সচেতন মহলের ভাষ্য, এভাবে জমির মাটি কাটা অব্যাহত থাকলে একসময় কৃষিতে বিপর্যয় দেখা দেবে। কমে যাবে আবাদি জমির পরিমাণ। জমি থেকে কেটে নেওয়া মাটি দিয়ে ভরাট করা হচ্ছে কোটি কোটি টাকার জায়গা, সরবরাহ করা হচ্ছে বিভিন্ন ইটভাটায়। এতে জমির উর্বরতা নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি পরিবেশের ভারসাম্যও হুমকির মুখে পড়েছে।</p> <p>পরিবেশ আইন অনুযায়ী, কৃষিজমির মাটি কাটা দণ্ডনীয় অপরাধ। জানা যায়, পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ (সংশোধিত ২০১২-এর ৬ ধারায়) অনুযায়ী, প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট টিলা ও পাহাড় কাটা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।</p> <p>অন্যদিকে ১৯৮৯ সালের ইট পোড়ানো নিয়ন্ত্রণ আইন (সংশোধিত ২০০১) অনুযায়ী, কৃষিজমির টপ সয়েল বা উপরিভাগের মাটি কেটে শ্রেণি পরিবর্তন করাও সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ রয়েছে। </p> <p>দুই আইনে শাস্তির বিধান একই রকম। এসব কাজে জড়িত ব্যক্তিদের দুই লাখ টাকা জরিমানা ও দুই বছরের কারাদণ্ড দেওয়ার বিধান রাখা হয়েছে। একই অপরাধ দ্বিতীয়বার করলে দায়ী ব্যক্তির ১০ লাখ টাকা জরিমানা ও ১০ বছরের কারাদণ্ড হবে। এ ক্ষেত্রে এ কাজের সঙ্গে জড়িত জমি ও ইটভাটার মালিক উভয়ের জন্যই সমান শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। </p> <p>এ ব্যাপারে নবীগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) শাহীন দেলোয়ার বলেন, ‘আমি অভিযোগ পেয়ছি। দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’</p>