<p>খুলনার ছয়টি সংসদীয় আসনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মনোনয়নে বাদ পড়েছেন বর্তমান প্রতিমন্ত্রী, হুইপসহ তিন সংসদ সদস্য। তাঁরা হলেন খুলনা-১ (দাকোপ-বাটিয়াঘাটা) আসনে এমপি ও হুইপ পঞ্চানন বিশ্বাস, খুলনা-৩ (খালিশপুর-দৌলতপুর) আসনের এমপি শ্রম প্রতিমন্ত্রী বেগম মুন্নজান সুফিয়ান, খুলনা-৬ (পাইকগাছা-কয়রা) আসনে মো. আখতারুজ্জামান বাবু।</p> <p>নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পর পরই খুলনার ছয়টি আসনে মনোনয়ন নিয়ে আলোচনায় সরব ছিল। এর মধ্যে দলটিতে প্রার্থীতায় আগ্রহীর তালিকায় শীর্ষে ছিল খুলনা-৬ আসন। এর পরেই খুলনা-৫ আসনে প্রার্থী হতে আগ্রহী হয়েছিলেন ১৩ জন। তবে খুলনা-৫ আসনে বর্তমান এমপি নারায়ন চন্দ্র চন্দ বহাল থাকলেও উল্টে গেছে খুলনা-৬-এর চিত্র। এখানে মনোনয়ন পেয়েছেন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও লবণ পানির ঘেরবিরোধী আন্দোলনের নেতা মো. রশীদুজ্জামান।</p> <p>এদিকে বর্তমান সংসদ সদস্যের বাদ পড়ায় শুরু হয়েছে নানা আলোচনা। কী কারণে বাদ পড়লেন, কেন বাদ পড়লেন তা নিয়ে চলছে দলীয় নেতাকর্মীসহ নির্বাচনী এলাকার মানুষদের নানা মন্তব্য। তবে বিভিন্ন সূত্র জানিয়েছে, বাদ পড়া এমপিদের মধ্যে একজন অসুস্থতা ও বার্ধ্যকজণিত কারণে মনোনয়ন বঞ্চিত হয়েছেন। অপর দুইজনের বিরুদ্ধে দল ও দলের বাইরে একাধিক অভিযোগ থাকায় ইমেজ সংকটে ভুগছিলেন।</p> <p>খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, খুলনা-৩ আসনে দীর্ঘদিন সংসদ নির্বাচিত হয়ে আসছেন শ্রম প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান। তিনি দীর্ঘদিন শ্রমিক রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। ছিলেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য। সাদাসিদে জীবনযাপনের অভ্যস্ত এই নারী নেত্রী সব সময়ই নেতাকর্মীদের কাছে অন্য উচ্চতায় আসীন ছিলেন। তবে মন্ত্রীত্ব হয়ে নিজ ভাই সাহাবুদ্দিন আহমেদকে ব্যক্তিগত সহকারী নিয়োগ দিয়ে সমলোচনায় পড়েন। পরবর্তীতে মন্ত্রীর ভাই সাহাবুদ্দিন, সাহাবুদ্দিনের স্ত্রী ও কন্যার বিরুদ্ধে নিয়োগ, সিন্ডিকেট গড়ে তোলাসহ গণমাধ্যমে বিভিন্ন খবর প্রকাশিত হয়। খুলনায় শ্রম দপ্তরটি এক শীর্ষ কর্মকর্তার যোগসাজসে এখানে গড়ে ওঠে বড় সিন্ডিকেট। শুধু তাই নয়, তাদের দাপটে শ্রম মন্ত্রণালয়ে অসন্তোষ রয়েছে।</p> <p>আওয়ামী লীগের স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পরিবারের কারণেই এবার ডুবেছেন প্রতিমন্ত্রী ও খুলনা-৩ আসনের এমপি বেগম মুন্নুজান সুফিয়ান। এই আসনটিতে এবার মনোনয়ন পেলেন সাবেক ছাত্রনেতা ও দলটির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন।</p> <p>অপরদিকে খুলনা-১ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য পঞ্চানন বিশ্বাস বর্তমান সংসদের হুইপ ছিলেন। একাধিক বারের এই সংসদ সদস্য বার্ধক্যজণিত কারণে দীর্ঘদিন অসুস্থ ছিলেন। ফলে দলীয় ও সরকারি কার্যক্রমে তিনি অনেকটাই নিষ্ক্রিয় ছিলেন। এবার মনোনয়ন পেতে আগ্রহী হলেও শারীরিক অসুস্থতার কারণে এবার বাদ পড়েছেন তৃণমূল স্তরের এই নেতা। এখানে মনোনয়ন পেয়েছেন সাবেক এমপি ননী গোপাল মন্ডল।</p> <p>এদিকে সবচেয়ে চমক দেখা দিয়েছে খুলনা-৬ আসনে। এখান থেকে বাদ পড়েছেন সাবেক ছাত্রনেতা মো. আখতারুজ্জামান বাবু। এর আগের একাদশ জাতীয় নির্বাচনে মনোনয়ন পেয়ে চমক দেখিয়েছিলেন এই নেতা। তিনি ছিলেন খুলনার বয়সে সর্বকনিষ্ঠ এমপি। কিন্তু এক মেয়াদেই মনোনয়ন দৌড়ে হেরে গেলেন তিনি।</p> <p>দলটির একাধিক সূত্র জানিয়েছে, সংসদ সদস্য আখতারুজ্জামান বিভিন্ন সময়ে খবরের শিরোনাম হয়েছেন। এতে দলের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। আওয়ামী লীগের স্থানীয় কোন্দলও তাঁকে কোনঠাসা করে রাখে। ফলে প্রতিটি দুর্যোগে এলাকায় থাকা, উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করেও শেষ হাসি হাসতে পারেননি। সর্বশেষ এই এমপির বিরুদ্ধে প্রভাব খাটিয়ে ঠিকাদারি করার অভিযোগ করে দলের একটি অংশ। এ নিয়ে বিভিন্ন সংবাদ প্রকাশ হয়।</p> <p>তবে এবারও এ আসনটিতে মনোনয়নের ক্ষেত্রে চমক দিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এবার এখানে মনোনয়ন পেয়েছেন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতা মো. রশীদুজ্জামান। এক সময়ের সিপিবি’র এই রাজনীতিক লবন পানিতে ঘের বিরোধী আন্দোলনের নেতা হিসেবে এলাকায় পরিচিত। মনোনয়ন চাওয়া সবোর্চ্চ ১৫ জনের তালিকায় তাঁকে অনেকেই আলোচনায় আনেননি।</p> <p>পাইকগাছা এলাকার ভোটার শঙ্কর কুমার জানান, তাঁরা কোনোভাবেই ভাবতে পারেননি রাশিদুজ্জামান মনোনয়ন পাবেন। এখানে সাবেক এমপিই বহাল থাকবে বলে তাঁরা মনে করেছিলেন। রাশিদুজ্জামান মনোনয়ন পাওয়ায়ও তাঁরা খুশি।</p>