<p>ঢাকার ধামরাইয়ে একটি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধানশিক্ষকের বিরুদ্ধে বিদ্যালয়ের টাকা আত্মসাৎ, অসদাচরণ, স্বেচ্ছাচারিতা, শিক্ষক, অভিভাবকের সঙ্গে চরম দুর্ব্যবহার করাসহ বিভিন্ন অভিযোগে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করেছেন বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে সভাপতির কাছে বরখাস্তকৃত প্রধানশিক্ষক জাহাঙ্গীর আলম কোনকিছু হস্তান্তর না করেই বিদ্যালয় ত্যাগ করেন। এ ঘটনায় প্রধানশিক্ষকের কক্ষে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। পরে দলবল নিয়ে বরখাস্ত হওয়ার প্রধানশিক্ষক আরেকটি তালা ঝুলিয়ে দেন। এ নিয়ে উভয়পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। ঘটনাটি ঘটেছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী আতাউর রহমান খানের প্রতিষ্ঠিত ১৯৫৭ সালের বিদ্যাপীঠ ভালুম আতাউর রহমান খান উচ্চ বিদ্যালয়ে। </p> <p>জানা গেছে, ভালুম আতাউর রহমান খান উচ্চ বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সাবেক সভাপতি কর্নেল (অব.) আউলাদ হোসেন সম্পর্কে প্রধানশিক্ষক জাহাঙ্গীর আলমের মামা। গত জুলাই মাসে নতুন সভাপতি হিসেবে কফিল উদ্দিন নির্বাচিত হন। সাবেক সভাপতির সময় বিদ্যালয়ের বিভিন্ন খাতের প্রায় সোয়া দশ লাখ টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ ওঠে প্রধানশিক্ষক জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে। নতুন সভাপতি আসার পর তিনি প্রধানশিক্ষকের অর্থ আত্মসাতের বিষয়টি  শিক্ষক ও ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যদের সমন্বয়ে সাত সদস্য বিশিষ্ট একটি অভ্যন্তরীণ অডিট উপকমিটি গঠন করেন। এ কমিটির সদস্যরা বিভিন্ন অনিয়মের মধ্যে ক্যাশ খাতায় অনিয়মে চার লাখ আটানব্বই হাজার সাতশত বারো টাকা, শিক্ষকদের গ্র্যাচুইটি থেকে আটত্রিশ হাজার দুইশত তিন টাকা, সোনালী ব্যাংক কালামপুর শাখায় শুধুমাত্র দরখাস্তের মাধ্যমে (চেকবিহীন) স্কুলের হিসাব নম্বর থেকে ৪০ হাজার টাকা তার নিজের হিসাব নম্বরে স্থানান্তর, তিন বছরে কালামপুর গো-হাট থেকে রসিদ ছাড়া সাড়ে চার লাখ টাকা থেকে দেড় লাখ টাকাসহ বিভিন্ন খাত থেকে প্রায় সোয়া দশ লাখ টাকা আত্মসাতের ঘটনা উল্লেখ করে প্রতিবেদন প্রস্তুত করেন। </p> <p>এসব দুর্নীতি-অনিয়ম ও অর্থ আত্মসাতের কারণে গত বুধবার বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সাধারণ সভায় প্রধানশিক্ষক জাহাঙ্গীর আলমকে সাময়িক বরখাস্তের চিঠি প্রদান করেন সভাপতি কফিল উদ্দিন। বরখাস্তের চিঠি পাওয়ার পর প্রধানশিক্ষক তার কক্ষের চাবি ও আলমিরাতে রাখা প্রয়োজনীয় কাগজপত্র হস্তান্তর না করেই ক্ষিপ্ত হয়ে বিদ্যালয় ত্যাগ করেন। এরপর তার কক্ষে তালা ঝুলিয়ে দেন সভাপতি। এ খবর পেয়ে দলবল নিয়ে ওই রাতেই আরেকটি তালা ঝুলিয়ে দেন প্রধানশিক্ষক। এনিয়ে উভয়পক্ষের মধ্যে চলছে উত্তেজনা। </p> <p>এদিকে জাহাঙ্গীর আলম তার অনুসারীদের নিয়ে অভ্যন্তরীন অডিট উপকমিটি ও সভাপতির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ এনে মানববন্ধন করেন। অভ্যন্তরীন অডিট উপকমিটি প্রধানশিক্ষক জাহাঙ্গীর আলমই গঠন করে দিয়েছেন। কিন্তু তিনি অডিট প্রতিবেদন না মেনে উল্টো আমাদের বিরুদ্ধেই মানববন্ধন করেছেন বলে জানান কমিটির আহ্বায়ক মনির আহম্মেদ চৌধুরী। </p> <p>এ বিষয়ে জানতে, প্রধানশিক্ষক জাহাঙ্গীর আলমের মুঠোফোনে কয়েকবার যোগাযোগের চেষ্ট করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। ফলে তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।  </p> <p>সভাপতি কফিল উদ্দিন বলেন, জাহাঙ্গীর আলমের মামা কর্নেল (অব.) আউলাদ হোসেন সভাপতি থাকাকালীন তার অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা, শিক্ষক-অভিভাবকদের সঙ্গে চরম দুর্ব্যবহার ও অর্থ আত্মসাতের ঘটনা থাকলেও কেউ কিছু বলতে সাহস পেতেন না। এখন তার গঠিত অভ্যন্তরীণ অডিট উপকমিটি তার বিরুদ্ধে দশ লাখ টাকা আত্মসাতের প্রমাণ পেয়েছে। এ কারণে তাকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। </p> <p>নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শিক্ষক ও বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যরা জানান, বিদ্যালয় সংলগ্ন ভালুম গ্রামে প্রধানশিক্ষকের বাড়ি হওয়ায় এবং তার মামা সাবেক সেনা কর্মকর্তা বিদ্যালয়ের সভাপতি থাকাকালীন সময়ে স্থানীয়দের নিয়ে প্রভাব বিস্তার করে স্বেচ্ছাচারিতা করে আসছিলেন তিনি। </p>