<p>বগুড়ার নন্দীগ্রামে হতদরিদ্রদের ১০ টাকা কেজি দরের চাল কালোবাজারে ক্রয় করে মজুদ করার দায়ে আওয়ামী লীগ নেতার গুদাম থেকে ১৬৮ বস্তা চাল উদ্ধার করা হয়েছে। এর আগে ওই নেতার মাদক সেবনের ভিডিও দৃশ্য প্রকাশ নিয়ে সর্বত্র সমালোচনার ঝড় উঠে। এসব অভিযোগে দল থেকে তাকে সাময়িক ভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে।</p> <p>শনিবার (১১এপ্রিল) রাত ১১টায় র‌্যাব-১২ বগুড়া স্পেশাল কম্পানির সদস্যরা অভিযান চালিয়ে চাল উদ্ধারসহ দুজনকে আটক করে। আটককৃতরা হলেন- নন্দীগ্রাম উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আনিছুর রহমান ও তার সহযোগী নন্দীগ্রাম সদর ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি আনছার আলী।</p> <p>স্থানীয়রা জানায়, শনিবার রাতে নন্দীগ্রাম উপজেলার শিমলা গ্রামে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আনিছুর রহমানের বাড়িতে অভিযান চালায় র‌্যাব। এ সময় তার বাড়ি তল্লাশি করে ৫৮ বস্তা চাল উদ্ধার করা হয়। এরপর র‌্যাব সদস্যরা শিমলা বাজারে আনিছুর রহমানের গোডাউনে তল্লাশি চালিয়ে আরও ১১০ বস্তা চাল উদ্ধার করে। পরে র‌্যাব সদস্যরা আনিছুর রহমান ও তার সহযোগী আনছার আলীকে গ্রেপ্তার করে। র‌্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানান- খাদ্য বিভাগের ডিলার মিলন সরদারের নামে বরাদ্দকৃত চাল কালোবাজারে ক্রয় করে মজুত করেছেন তারা।</p> <p>র‌্যাব-১২ বগুড়া বিশেষ ক্যাম্পের ভারপ্রাপ্ত কম্পানি কমান্ডার রওশন আলী জানান, আটক দুইজনসহ ডিলারের নামে মামলা দায়েরর প্রস্তুতি চলছে।</p> <p>এছাড়া ‘নোশাখোর’ নেতার ভিডিও ভাইরাল শিরোনামে ২০১৯ সালের ৮ অক্টোবর কালের কণ্ঠে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের নেশা সেবনের সেই ভিডিও দৃশ্য প্রকাশ নিয়ে নন্দীগ্রামে তোলপাড় শুরু হয়। চায়ের স্টল থেকে শুরু করে সর্বত্র সমালোচনার ঝড় বইছে। ভাইরাল হয়ে পড়া ভিডিওটি নিয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা বিব্রত, ক্ষুব্ধ । কালের কণ্ঠ’র হাতে আসা এই ভিডিও চিত্রে আয়েশি ভঙ্গিতে সহযোগীদের নিয়ে নেশা সেবন করতে দেখা গেছে আলোচিত নেতা আনিছুর রহমানকে।</p> <p>জানা গেছে, জাসদের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত থাকা আনিছুর রহমান ২০১২ সালের শুরুতে আওয়ামী লীগে যোগদান করেই উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদ পান। আর পদ পেয়েই বেপরোয়া হয়ে ওঠেন আনিছুর। কখনো নিজ বাড়িতে, কখনো নাটোরের সিংড়া উপজেলায় আবার কখনো বগুড়া শহরের বিভিন্ন বাড়িতে অবস্থান করে মাদক সেবন করেন।</p> <p>তিন মিনিট আট সেকেন্ডের ভিডিও চিত্রে দেখা গেছে, স্যান্ডো গেঞ্জি পরিহিত আনিছুর রহমান ইয়াবা সেবন করছেন। পাশে বসে তাঁকে সঙ্গ দিচ্ছেন সহযোগীরা। ভিডিওটি প্রকাশ হওয়ার পর চায়ের স্টল থেকে শুরু করে অফিসপাড়া পর্যন্ত সর্বত্র আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে। এর আগেও আনিছুর রহমানের ইয়াবা ও গাঁজা সেবনের ছবিসহ পোস্টার উপজেলার বিভিন্ন এলাকার দেয়ালে দেয়ালে দেখা গেছে। পোস্টারে লেখা ছিল— ‘আওয়ামী লীগ নেতা আনিছুর রহমান শুধু মাদকসেবীই নয়, উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকার মাদক ব্যবসাও নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন। অবিলম্বে কুখ্যাত মাদক ব্যবসায়ী আনিছুর রহমানকে আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কার করা হোক। পাশাপাশি এ মাদক ব্যবসায়ীকে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া হোক। প্রচারে নন্দীগ্রাম উপজেলার আওয়ামী লীগপ্রেমী ত্যাগী নেতাকর্মীবৃন্দ।’ এবার তার চালসহ গ্রেপ্তার হওয়ার পর নেতাকর্মীদের সেই ক্ষোভ চরম আকার নিয়েছে। একই সঙ্গে তাঁকে দল থেকে বহিষ্কারের দাবি উঠেছে।</p> <p>জানতে চাইলে বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ্ব মজিবর রহমান মজনু বলেন, তার বিরুদ্ধে নানান অভিযোগ উঠায় তাকে সংশোধন হওয়ার জন্য সর্তক করে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তারপরেও তিনি বিভিন্ন অপরাধের সাথে জড়িত থাকায় তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।</p>