<p>এক্কান পুলাহান নাই, ভিক্ষা কইরা পঙ্গু বুড়াডারে লইয়া খাইতাম, এহন ভিক্ষার লিগা গাওয়ে বাইরবার পাইনা, তিন দিন ধইরা চুলাত আগুন জ্বলে না, বিসুদবার (বৃহস্পতিবার) বৈকালে বোইনের বাইত একমুঠ খাইয়া, বুড়াডার লিগা চাইড্ডা লইয়া আইছিলাম, এরপর দুই দিন ধইরা বুড়া-বুড়ি পেটে পানি ছাড়া দানা কি জিনিস পড়ে নাই, ঘরও এক মোঠ চাইল নাই, মাইনষের বাড়িত গেলে ভিক্ষা দেয় না, উল্টা আরো কথা কয়, আমগরে দুইড্ডা চাইল ডাইলে বাউ (ব্যবস্থা) কইরা দিবাইন, পঙ্গুডারে লইয়া খাইয়া বাছি।</p> <p>গতকাল শনিবার সকালে কুশমাইল ইউনিয়ন পরিষদের বারান্দায় বসে দেওনাইপাড় গ্রামের নাজমা আক্তার (৫৮) কথাগুলো বলছিলেন। এসময় তাঁর পাশেই বসা ছিলেন শারীরিক প্রতিবন্ধী স্বামী আ. কাদের (৬৭)। স্ত্রী কথা বলার সময় ষাটোর্ধ্ব বৃদ্ধার দুই চোখে টলমল করছিল পানি। স্বামী-স্ত্রী ক্ষুধার যন্ত্রণার কথা বলতে গিয়ে দুজনেই কান্না করে দেন। </p> <p>ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপেজলার কুশমাইল ইউনিয়নের দেওনাইপাড় গ্রামে আ. কাদের ও নাজমা খাতুনের সংসার জীবনে কোনো সন্তান হয়নি। বাড়ি ভিটের জায়গা ছাড়া জমি-জমা নেই। স্বামী দিনমজুরের কাজ করতো। বেশ কয়েক বছর আগে ধানের একটি মিলে কাজ করার সময় তাঁর স্বামী দুর্ঘটনায় মারাত্মক আহত হয়ে বাম হাতের কর্মক্ষমতা হরিয়ে ফেলে। বয়সের ভারে স্বামী ঘরে পড়ে যায়। লাঠির ওপর ভর করে চলতে হয়। নাজমা খাতুন গ্রামে গ্রামে ভিক্ষাবৃত্তি করে সংসার চালায়। </p> <p>প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সরকার অফিস আদালত ও দোকানপাট বন্ধ করে দিয়েছেন। জরুরী প্রয়োজন ছাড়া মানুষজন বাড়ি থেকে বের হচ্ছে না। হাট-বাজার ও অন্যগ্রামে ভিক্ষাবৃত্তি করতে যায় না গত এক সপ্তাহ যাবৎ। নিজ গ্রামে এক দিন ভিক্ষা করতে বের হলেও ভিক্ষা না দিয়ে গ্রামের মানুষ নানা ধরনের কথাবার্তা বলে তাড়িয়ে দেয়। যে কারণে এখন আর ভিক্ষা করতে বের হয় না। </p> <p>যাটোর্ধ্ব স্বামী যখন ক্ষুধার যন্ত্রণায় কাতর হয়ে পড়ে, দিকবিদিক না দেখে আশপাশের বাড়িতে একমুঠো ভাতের জন্য থালা নিয়ে ছুটে যায়। প্রথম ১-২ দিন ভাত দিলেও করোনার ভয়ে আশপাশের বাড়ির লোকজন তাঁকে ভাতের জন্য বাড়িতে যেতে নিষেধ করে দিয়েছেন। করোনাভাইরাস মোকাবেলায় ভ্যান, রিকশা, দোকানপাট, যানবাহন বন্ধ করে দেওয়ায় কর্মহীন হয়ে পড়েছে মানুষ। নিম্ন আয়ের মানুষগুলোর দেখা দিয়েছে অভাব অনটন। ভিক্ষুক ও যারা দিন আনে দিন খায় এমন মানুষের ঘরে চরম খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে।</p> <p>খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কুশমাইল ইউনিয়নের সরকারিভাবে ত্রাণের মাত্র এক টন চাউল বরাদ্দ হয়েছে। হতদরিদ্র ও কর্মহীন ১০০ পরিবারকে ১০ কেজি করে চাউল দেওয়া হবে। গত শুক্রবার জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান ফারজানা শারমিন বিউটি কুশমাইল ইউনিয়নের ২০০ জন হতদরিদ্র ও কর্মহীন মানুষদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করেন। ইউনিয়ন পরিষদের ভিজিএফের হিসেব অনুয়ায়ী প্রায় ৮ হাজার হতদরিদ্র মানুষ রয়েছে এ ইউনিয়নে। তবে স্থানীয়দের মতে বর্তমানে কর্মহীন ও হতদরিদ্র মানুষের সংখ্যা অন্তত ১২ হাজার হবে।</p> <p>ভিক্ষুক নাজমা খাতুন ও তাঁর স্বামী আ. কাদের এ প্রতিবেদককে বলেন, স্যার মাইনসে বলে চাইল, ডাইল দিতাছে, আমগরে কয়ডা আইন্না দিবাইন? দুই দিন ধইরা পেড ভাত নাই, না খাইয়া আর থাকবার পাইতাছিনা, এই দুনিয়াতে আমগর কেউ নাই, স্যার ইট্টু দয়া করুইন।</p> <p>কুশমাইল নাটুয়া পাড়া গ্রামের আমিরুল ইসলাম বলেন, প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের কারণে গ্রামের বহু মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছে, ভিক্ষুক, হতদিরদ্র ও নিম্ন আয়ের মানুষদের অনেকের ঘরে খাবার নেই। জনপ্রতিনিধি ও সমাজের ধর্ণাঢ্য ব্যক্তিদের উচিত অসহায় গরিব মানুষের পাশে খাদ্যসামগ্রী নিয়ে দাঁড়ানো।</p> <p>কুশমাইল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. শামছুল হক বলেন, সরকারিভাবে যে পরিমাণ ত্রাণের চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে তা চাহিদার তুলনায় একেবারেই অপ্রতুল্য, ভিক্ষুক দম্পতির জন্য ত্রাণের ব্যবস্থা করা হবে।</p>