<p>ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদর থেকে সরাইল হয়ে নাসিরনগর যেতে বেশ একটা হাওড়ের দেখা মিলে। ওই হাওড় বাদেও দুই উপজেলায় রয়েছে বেশ ধানি জমি। কিছু জমি অপেক্ষাকৃত উঁচু এলাকায় হওয়ায় এখনো ধান কাটা বাকি রয়েছে। </p> <p>বুধবার (৮ মে) ওইসব এলাকায় অনেককেই ধান কাটায় ব্যস্ত থাকতে দেখা যায়।<br />  <br /> ভোটের মাঠে ধানকাটার অনেকটা প্রভাব পড়েছে বলেই মনে করছেন অনেকে। সকালের দিকে বেশি বেশি নারী ভোটার ও বিকেলের দিকে পুরুষ ভোটার কেন্দ্র আসেন। বিকেলে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দুই উপজেলাতে প্রায় ৩৫ ভাগ ভোট পড়ার ধারণা পাওয়া যায়।</p> <p>বুধবার সকাল থেকেই প্রকৃতি অবশ্য বেশ সায় দেয়। সূর্যের তাপ তেমন ছিলো না। যদিও মুখ ‘গোমড়া’ করেছিলেন ভোটাররা। ভোটের আগে সভা-সমাবেশে বেশ উত্তাল থাকলেও সে অনুযায়ি কেন্দ্রে আসেননি ভোটাররা। তবে দুপুরের পর থেকে ভোটার উপস্থিতি বাড়তে থাকে। দুই এলাকার কোনো সংসদ সদস্যই ভোট নিয়ে কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ না করায় সুষ্ঠু পরিবেশের কারণে উৎমুখর ভোটের আশা করেছিলেন সবাই।</p> <p>অপেক্ষা পৌনে দুই ঘণ্টার</p> <p>সকাল ১০টা। সরাইল উপজেলার রাজাবাড়িয়া কান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ভোট কেন্দ্রের বাইরে কিছু লোকজনের জটলা। তবে কেন্দ্রের ছোট মাঠে কোনো ভোটার নেই। দায়িত্ব পালন করছিলেন কয়েকজন পুলিশ ও আনসার সদস্য।<br />  <br /> প্রিজাইডিং অফিসার দীপংকর মণ্ডল জানান, আটটা থেকে শুরু হয়ে সকাল ১০টা নাগাদ আটটি বুথে ১৯৮টি ভোট পড়ে। কেন্দ্রের মোট ভোটার সংখ্যা ৩০৯২। তবে দুপুরের পর থেকে ভোটার উপস্থিতি আরো বাড়বে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। </p> <p>কেন্দ্রটির ৮নং বুথে গিয়ে জানা যায়, ভোট শুরুর কয়েক মিনিটের শাতায় তাদের এখানে প্রথম ভোট দেন এ কেন্দ্রেরই একজন পোলিং এজেন্ট। এরপর তাদের অপেক্ষা করতে হয় আরো পৌনে দুই ঘণ্টা। সকাল ৯টা ৫০ এর দিকে একজন ভোটার এসে ভোট দিয়ে যান বলে জানান সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভোটার বাড়বে বলে তিনিও আশাবাদ ব্যক্ত কনে।</p> <p>এক ঘণ্টা ২২ মিনিট পর ভোট</p> <p>সহকারী প্রিসাইডিংসহ সাতজনের অপেক্ষা! মনে মনে প্রশ্ন কখন আসবে ভোটার। অপেক্ষার পালা ফুরালো। বেলা ৯টা ২২ মিনিট। অর্থাৎ ভোট শুরুর এক ঘণ্টা ২২ মিনিট পর এলেন ভোটার। রীনা আক্তার নামে ওই নারী ভোটারকে আন্তরিকভাবেই সহযোগিতা করলেন সবাই। ব্যালট পেপারের সাথে নিজের এনআইডি কার্ড ভেতরে ফেলে দেওয়ার সময় সবার ডাক চিৎকারে তিনি থামলেন। বুঝানো হলো এনআইডি ফেলতে হবে না।</p> <p>এ চিত্র ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার শাহবাজপুর বহুমুখি উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে। উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের এ ভোট কেন্দ্রটির ১২নং বুথে এক ঘণ্টা ২২ মিনিট পর ভোট পড়ে। ওই সময়ে মোট ১২ বুথে ভোট পড়ে ১৩৪টি। মোট ভোটার ৪৯২৬ জন। </p> <p>এ বিষয়ে কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার মো. এবাদুল হক বলেন, ‘মহিলা ভোটাররা হয়তো রান্না সেরে আসবেন।’ সময় বাড়ার সাথে সাথে ভোটার বাড়ার আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। বেলা ৯টার দিকে কেন্দ্রটিতে দেখা হয় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (নবীনগর সার্কেল) মো. সিরাজুল ইসলামের সঙ্গে। এ সময় তিনি সকল প্রার্থীদের কাছ থেকে মোবাইল ফোন নিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দিলে পুলিশ তৎপর হয়ে উঠে। সকাল নয়টার পরও কেন্দ্রটিতে পোলিং এজেন্টদের এসে দায়িত্ব নিতে দেখা যায়। কেন্দ্রের বাইরে থাকা মো. আল-আমীন নামে এক ব্যক্তি বলেন, ‘ধান কাটার সময় এখন। যে কারণে ভোটাররা কাজ সেরে বিকেলে দিকে আসতে পারেন।’</p> <p>মাঠে শামিয়ানা টানিয়ে ভোট</p> <p>মোট ভোটার ৪৯১২। ছোট্ট একটি ভবনে এত ভোটারের ভোট নেওয়া সম্ভব না। তাই মাঠে টানানো হলো শামিয়ানা। পাঁচটি বুথ ভবনে, তিনটি শামিয়ানার নিচে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার কুট্টাপাড়া পশ্চিম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সামিয়ানা টানিয়ে নেওয়া ভোটে ভোটারদেরকে কাঁদাও মাড়াতে হয়।</p> <p>ওই কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার মো. মওদুদ আহমেদের দেওয়া তথ্যমতে, অন্য কেন্দ্রগুলোর এ চেয়ে এখানে মোটামুটি ভোটার ছিলো। সকাল নয়টার মধ্যে ২০০ এর মতো ভোটার ভোট প্রদান করেন। তবে বেলার বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভোটার বাড়তে থাকে। </p> <p>ধান কাটার প্রভাব</p> <p>কথা হয় নাসিরনগর উপজেলা সদরের প্রদীপ দাসের সঙ্গে। সাংবাদিকদেরকে তিনি বলেন, ‘মূলত ধান কাটার মৌসুমের কারণে ভোটার উপস্থিতি কম হয়েছে। আমাদের এলাকার মানুষ এখন ধান কাটায় ব্যস্ত। পরিবারের সবাই কমবেশি এর সঙ্গে জড়িত থাকে।’</p> <p>উপজেলা সদরের লংঘন নদীর পাড়ে কথা হয় মো. আলম মিয়া নামে এক কৃষকের সঙ্গে। এ প্রতিবেদককে তিনি বলেন, ‘আবহাওয়া কখন খারাপ হয়ে যায় ঠিক নেই। যে কারণে ধান কাটা ও ঘরে তোলায় তারা ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন।’ সময় পেলে ভোট দিবেন বলে তিনি বেলা ১২টার দিকে জানান।</p>