<p>নতুন অর্থবছরে শিশুদের জন্য অত্যাবশ্যকীয় পণ্য গুঁড়া দুধের দাম কমিয়ে আনতে আমদানি শুল্ক কমিয়েছে সরকার। এর প্রভাবে বিদেশি ব্র্যান্ডের গুঁড়া দুধের দাম দেশের বাজারে কিছুটা কমলেও দেশীয় ব্র্যান্ডের গুঁড়া দুধের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। আগের বাড়তি দামেই দেশীয় ব্র্যান্ডগুলো গুঁড়া দুধ বিক্রি করছে। তবে দেশীয় দু-একটি প্রতিষ্ঠান নতুন করে কেজিতে ২০ টাকা পর্যন্ত বাড়িয়ে বাজারে পণ্য ছেড়েছে।</p> <p>গত মঙ্গলবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার, দেশি-বিদেশি ব্র্যান্ডের দুধ বিক্রির পাইকারি-খুচরা দোকান ও সুপারশপ ঘুরে দেখা গেছে, গত দেড়-দুই মাসের ব্যবধানে বিদেশি প্রায় সব ব্র্যান্ডের গুঁড়া দুধের দাম কমেছে। বিদেশি ব্র্যান্ড ল্যাকটোজেন (১ ও ২) ১৮০০ গ্রাম ওজনের গুঁড়া দুধ বিক্রি করা হচ্ছে তিন হাজার ২০০ থেকে তিন হাজার ২৫০ টাকায়, যা গত দেড়-দুই মাস আগেও তিন হাজার ৮০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে। বিদেশি আপটামিল ব্র্যান্ডের ৮০০ গ্রাম ওজনের গুঁড়া দুধ দুই হাজার ৯৫০ থেকে তিন হাজার টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে, যা আগে বিক্রি হয়েছে তিন হাজার ৪০০ টাকায়। বিদেশি নিডো প্লাস ব্র্যান্ডের এক হাজার ৮০০ গ্রামের গুঁড়া দুধ বিক্রি করা হচ্ছে চার হাজার ৫০০ টাকায়, যা আগে বিক্রি করা হয়েছিল চার হাজার ৮০০ টাকায়।</p> <p>বাজার ঘুরে আরো দেখা গেছে, বিদেশি আলমরাই ব্র্যান্ডের দুই হাজার ২৫০ গ্রাম ওজনের গুঁড়া দুধ দুই হাজার ৯৫০ থেকে তিন হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা আগে বিক্রি হয়েছে তিন হাজার ২০০ টাকায়। বিদেশি নান ব্র্যান্ডের ৮০০ গ্রাম ওজনের গুঁড়া দুধ এখন বিক্রি হচ্ছে দুই হাজার ৬৫০ থেকে দুই হাজার ৭০০ টাকায়, যদিও এক-দেড় মাস আগে বিক্রি হয়েছে তিন হাজার টাকায়। বিদেশি সিমিল্যাক ব্র্যান্ডের ৮০০ গ্রামের গুঁড়া দুধ বিক্রি হচ্ছে তিন হাজার ৫০ থেকে তিন হাজার ১০০ টাকায়। আগে বিক্রি হয়েছিল তিন হাজার ২০০ টাকায়।</p> <p>সেরিল্যাক ব্র্যান্ডের এক কেজি ওজনের গুঁড়া দুধ বিক্রি হচ্ছে একা হাজার ৬৫০ টাকায়, যা আগে বিক্রি হয়েছে এক হাজার ৮৫০ থেকে দুই হাজার টাকা পর্যন্ত। রাজধানীর যমুনা ফিউচার পার্কে বিদেশি ব্র্যান্ডের গুঁড়া দুধের পাইকারি ও খুচরা দোকান আম্মার প্লাজার বিক্রয়কর্মী জাহিদুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বিশ্ববাজারে এখন গুঁড়া দুধের দাম কিছুটা কম থাকায় এবং আমদানিতে কিছুটা শুল্ক সুবিধা দেওয়ার কারণে দেশের বাজারে দাম কমেছে। দেড়-দুই মাসের ব্যবধানে বিদেশি ব্র্যান্ডের গুঁড়া দুধের দাম কেজিতে ১০০ থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্ত কমে বিক্রি হচ্ছে। বাজারে এখন গুঁড়া দুধের সরবরাহও পর্যাপ্ত রয়েছে।’</p> <p>এদিকে দেশীয় ব্র্যান্ডের সরবরাহ করা গুঁড়া দুধের দর-দাম বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ফার্ম ফ্রেশ, প্রাণ মিল্ক, ফ্রেশ ও ডানো এই চারটি ব্র্যান্ডের এক কেজি ওজনের ফুল ক্রিম মিল্ক পাউডার ৮৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।</p> <p>তবে ডিপ্লোমা ব্র্যান্ডের এক কেজি ওজনের ফুল ক্রিম মিল্ক পাউডার ৮৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। নিডো ফরট্রিগ্রো এক কেজি ওজনের টিনের কৌটার দাম এক হাজার ৪০০ টাকা। আবার নিডো ৫০০ গ্রাম ওজনের ফুল ক্রিম মিল্ক পাউডারের দাম ৪৭৫ টাকা। ডানো ডেইলি পুষ্টি এক কেজি ওজনের গুঁড়া দুধের দাম ৭৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। </p> <p>জানতে চাইলে রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক গেটে জিনিয়াস সুপারশপের ম্যানেজার মো. ইয়াছিন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘গত দুই-তিন মাস ধরে একই দামে দেশীয় ব্র্যান্ডের গুঁড়া দুধ বিক্রি হচ্ছে। তবে ডিপ্লোমা ব্র্যান্ড তাদের গুঁড়া দুধের দাম নতুন করে প্রতি কেজিতে ২০ টাকা বাড়িয়েছে। এ ছাড়া নতুন করে কোনো ব্র্যান্ড তাদের গুঁড়া দুধের দামে পরিবর্তন আনেনি।’</p> <p>২০২৪-২৫ অর্থবছর থেকে আড়াই কেজি পর্যন্ত গুঁড়া দুধের ওপর ২০ শতাংশ আমদানি শুল্ক প্রত্যাহারের প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। জাতীয় সংসদে নতুন অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাবনায় তিনি এ ঘোষণা দেন।</p> <p>অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘গুঁড়া দুধ আমদানির ক্ষেত্রে আড়াই কেজি পর্যন্ত প্যাকে এবং বাল্ক আকারে আমদানির ক্ষেত্রে মোট করভারের পার্থক্য অনেক বেশি থাকায় স্থানীয়ভাবে প্যাকেটকারী প্রতিষ্ঠানসমূহ অযৌক্তিক পরিমাণ প্রতিরক্ষণ ভোগ করছে। ওই প্রতিরক্ষণ যৌক্তিকীকরণের অংশ হিসেবে আড়াই কেজি পর্যন্ত প্যাকেটজাত গুড়া দুধের ওপর বিদ্যমান ২০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক প্রত্যাহার করার প্রস্তাব করছি। আমদানির সঙ্গে দেশীয় প্রতিষ্ঠানের মোট করভারের পার্থক্য বা প্রতিরক্ষণ থাকবে ২১ শতাংশ, যা দেশীয় শিল্পের প্রতিরক্ষণে কোনো অন্তরায় ঘটাবে না।’</p> <p>দেশীয় ব্র্যান্ডের গুঁড়া দুধ সরবরাহকারী এক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন, প্রক্রিয়াকরণ খরচ বৃদ্ধি, প্যাকেজিং ম্যাটেরিয়ালের সংকট, পণ্য বিক্রি কমে যাওয়া, পরিবহন খরচ বৃদ্ধিসহ অন্যান্য খরচ বাড়ার কারণে দেশের বাজারে গুঁড়া দুধের দাম কমানো যাচ্ছে না।’</p> <p>বাজার সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বিশ্ববাজারে মূল্যবৃদ্ধি এবং ডলারের মূল্যবৃদ্ধির কারণে ২০২১ সাল থেকে দেশের বাজারে গুঁড়া দুধের দাম বাড়ছে। ২০২১ সালের আগে দেশীয় ব্র্যান্ডের এক কেজি গুঁড়া দুধের দাম ৬০০ টাকার নিচে ছিল, সেই গুঁড়া দুধের দাম বেড়ে এখন ৮৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। শিশু ও প্রাপ্তবয়স্কদের প্রাণিজ আমিষের অন্যতম উৎস এই দুধের দাম বেড়ে যাওয়ায় অনেক পরিবার এখন তা কিনতে পারছে না।</p>